অধ্যায়-২০

31 8 0
                                    

"আমরাও স্কুল লাইফে কত ম্যাডামের উপর যে ক্রাশ খেয়েছি তা বলে শেষ করতে পারব না। কোনো ম্যাডাম নতুন শাড়ি পড়ে আসলে পড়াশোনা বাদ দিয়ে সেদিকে তাকিয়ে থেকেছি। ভাব জমানোর চেষ্টা করেছি। মাঝেমধ্যে কথাগুলো ভাবলেই হাসি পায়। এসব কাহিনী তো আদিকাল থেকেই চলে আসছে।"
"কিন্তু আদিকালে তো স্কুল-কলেজ ছিল না।"
"স্কুল-কলেজ না থাকলে কি আর প্রেম করা যায় না।"
এই বলে‚ সিনথিয়া যেন আবার লজ্জা পেয়ে বসল। পাকা চুলের লোকটা এসে আমাদের খাবারগুলো দিয়ে গেল।
"সকাল সকাল এমন গরম গরম স্যান্ডউইচ খাওয়ার মজাই আলাদা। দিনের শুরুটা ভালো খাবার দিয়ে হলে দিনটাও বেশ ভাল কাটে‚" আমি বললাম।
"আমিও তাই বিশ্বাস করি।"
"আমাদের ফ্ল্যাটে যদিও খাওয়া-দাওয়া নিয়ে তেমন একটা সমস্যা হয় না‚ প্রায় প্রতিদিনই গরম গরম নাস্তা করি।"
"কে রান্না করে‚ আপনি?"
"না‚ আমি তেমন কোনো ভালো রান্না করতে পারি না। সব রান্নাই আমার ফ্ল্যাটমেট মন্টু করে থাকে। আর বাজার-ঘাট করে নাজমুল। আমি শুধু বসে বসে খাই। যা-ই হোক‚ আজকে বই পড়ার কোনো প্ল্যান আছে নাকি?"
"না‚ যেহেতু আজ প্রথমবার এসেছি তাই আজ পড়তে ইচ্ছা করছে না। তার চেয়ে বরং খাবারটাকে উপভোগ করি। খাওয়ার পর আমি ব্ল্যাক কফি নিতে চাচ্ছি। আপনি নেবেন?"
"আমারও তাই মনে হচ্ছিলো। শরীরটার একটু রিফ্রেশমেন্টের দরকার আছে।"
কফি খাওয়ার পর মনটা যেন একরকম পরিপূর্ণতা পেল। যতই তিক্ত স্বাদ হোক না কেন প্রতিটা চুমুকেই লুকিয়ে রয়েছে স্থৈতিকশক্তি।
"স্যার‚ আজকে কিন্তু আমাদের বিলটা ভাগাভাগি করে দেব।"
"সে আবার হয় নাকি! তোমরা হলে আমার মেয়ের মতো। আমি কী তোমাদের কাছ থেকে টাকা নিতে পারি? তবে কলেজের বিষয়টা ভিন্ন‚ সেখানে কর্তৃপক্ষ ছাত্র-ছাত্রীদের বেতন নেয়। আর দায়-দায়িত্বটুকু দেয় আমাদের উপর।"
"ওকে‚ স্যার আপনার সাথে কথা বলে বেশ ভাল লাগলো। আবার দেখা হবে।"
"আচ্ছা ভালো থেকো।"
কফি শপটায় বিল পে করে ফের বাসায় উদ্দ্যেশ্যে হাঁটতে শুরু করলাম। পকেট থেকে মোবাইলটা বের করে দেখলাম ঘড়িতে প্রায় আটটা বেজে গিয়েছে। তার নিচে লেখা থ্রি মিসড কল। সেখানে ক্লিক করতেই দেখি নীলা ফোন করেছিল। আমি সাথে সাথে কলব্যাক করলাম।
"নীলা‚ মাই সুইটহার্ট‚ কি করছো এখন?"
"তোমায় এতবার ফোন করলাম ধরলে না কেন?"
"ওহ্ সরি‚ আমি খেঁয়াল করি নি।"
নীলা একটু রাগান্বিত স্বরে বলল‚
"খেঁয়াল কোথায় থাকে তোমার? আর এতক্ষণ কোথায় ছিলে?"
"আমি... আমি তো ওই কফি শপটায় ছিলাম।"
"কফি শপে! এত সকাল সকাল কফি শপে! কার সাথে গিয়েছিলে? সত্যি করে বলো।"
"আজ্ঞে‚ সিনথিয়ার সাথে।"
"ও আচ্ছা‚ ওই শয়তানটার সাথে আড্ডা মারতে গিয়েছিলে। কেন‚ আমি কি ফেলনা হয়ে গিয়েছি?"
"হিংসে হচ্ছে বুঝি? সেরকম কিছু না‚ হাঁটতে হাঁটতে মেয়েটার সাথে দেখা হয়ে গেল‚ তাই ভাবলাম..."
"ভাবলে যে একটুখানি টাইমপাস করে আসি‚ আর অমনি শয়তানটার সাথে মিষ্টি মিষ্টি কথোপকথন শুরু করে দিলে।"
"এভাবে বলবে না। ও বেশ নম্র আর ভদ্র একটা মেয়ে। আমার সাথে বেশ গুছিয়ে কথা বলে। ভাল গল্পও জমাতে পারে। তাই বলে তুমি ঈর্ষান্বিত হবে সেটা কিন্তু ঠিক না।"
"কে বলেছে আমি হিংসুটে। আমি মোটেও হিংসা করি না।"
"বাই দ্য ওয়ে‚ কলেজে কখন যাবে?"
"আজ কলেজে যাব না।"
"কেন? শরীর খারাপ নাকি।"
"সকাল থেকে প্রচন্ড মাথাব্যথা ধরেছে। কমার নামই নিচ্ছে না।"
"প্যারাসিটামল খাও। আচ্ছা আমি ফার্মেসি থেকে এনে দিচ্ছি।"
"বাচ্চাদের মতো আচরণ করবে না। এসব ছোটখাটো ওষুধ সবসময়ই আমার কাছে থাকে।"
"আজ বিকেলে আমাদের ফ্ল্যাটটাতে এসো। মন্টু ওর গ্রামের বাড়িতে গিয়েছে। নাজমুলও নেই। ভোর সকালেই রওয়ানা দিয়েছে ব্যাটারা। শুধু আমরাই থাকবো। দুজন দুজনের মনের মতো করে একান্তে সময় কাটাব।"
"একান্তে মানে?" নীলা কিছুটা ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে বসলো।
"ও কিছু না। তুমি জাস্ট হোস্টেলের গেইটে এসে আমায় ফোন করবে আর আমি তোমাকে ড্রপ করে নিয়ে আসব‚" বলে ফোনটা কেটে দিলাম।
আমি ঘরে ফিরে হালকা নাস্তা-পানি করে কলেজের দিকে এগোতে থাকলাম। নীলা আজ সেখানে আসবে না। বসবে না সেই প্রথম বেঞ্চটায়। ধুর! ও না থাকায় ক্লাস করানোর তেমন একটা ইচ্ছে নেই। কিন্তু কি আর করার‚ দায়িত্ব আর কর্তব্য বলেও তো একটা ব্যাপার আছে। কলেজ থেকে কিছুটা আগেই বেরিয়ে পড়লাম এক ভিন্ন ওযুহাতে।

রাস্তার ওপারে থাকা কনফেশনারি শপ থেকে বড়সড় দুই বক্স আইস্ক্রিম নিলাম। একটা ম্যাংগো আরেকটা ভ্যানিলা ফ্লেভারের। নীলার পছন্দ ম্যাংগো ফ্লেভার। আর হতভাগা আমি ভ্যানিলা পছন্দ করি। শুধু আইস্ক্রিমেই তো আর পার্টি জমবে না। সেই সাথে সামান্য পেস্ট্রি কেক আর কোক নিয়ে মোটসাইকেলের এক্সেলেটরে চাপ দিলাম এবং সোজা ছুটে গেলাম নীলার কাছে। দেখি নীলা ওর হোস্টেলের সামনের মোড়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে। ওর পরনে ছিল বয়ফ্রেন্ড জিন্স আর ব্ল্যাক কালারের নরমাল একটা টপস। বেশ সাদামাটা পোশাক। তবে ওকে এমন সিম্পল ড্রেসেই বেশি সুন্দর লাগে। আর যে বয়ফ্রেন্ড জিন্সটা পড়েছে সেটা আমিই ওকে গিফট করেছিলাম। বয়ফ্রেন্ড জিন্সগুলো সাধারণত টাখনুর কিছুটা উপরে গিয়ে শেষ হয়। তাই ওকে বেশ মানিয়েছে। দূর থেকে আমায় দেখে না চিনতে পারলেও কাছে যাওয়ার পর রীতিমতো চমকে উঠেছে মেয়েটা।
"ওহ্ মাই গড! তুমি বাইক কিনেছো? তাও আবার যেমন তেমন বাইক নয়‚ একেবারে 'হোন্ডা রেপসল'।"
"হুম।"
"আমায় আগে বলো নি কেন।"
"সারপ্রাইজ দিতে চেয়েছিলাম তাই।"
"আরে রাখো তোমার সারপ্রাইজ। চলো আমরা ঘুরতে যাই। আমায় ঘুরতে নিয়ে যাবা না?"
"আমার কলিজার টুকরা‚ আমার সোনাপাখি। অবশ্যই নিয়ে যাব। তবে আজ না।" বাইকে বসে থেকেই দুহাত দিয়ে নীলার মিষ্টি গালদুটো টেনে দিলাম। নীলা ভ্রু কুচকে ঠোঁটজোড়া খানিকটা বাকিয়ে ফেলল। অতঃপর আমার কাঁধে হালকা থাবড় বসিয়ে জিজ্ঞেস করল‚
"কেন নিয়ে যাবে না?"
আমি হাতে থাকা প্যাকেটগুলো দেখিয়ে বললাম‚
"আজকে বরং ঘোরাঘুরি না করি। চলো বাসায় গিয়ে আরাম আয়েশ করে শুরু করে দিই। নয়তো আইসক্রিম সব গলে যাবে।"
"ওহ্‚ ট্রিটটা তাহলে তোমার বাসাতেই পাচ্ছি।"
"সে আর বলতে! জলদি বাইকে উঠে পড়ো।"
নীলা আমার পিছনে বসতেই এক অন্যরকম অনুভূতির সৃষ্টি হলো যা এর আগে কখনোই হয় নি। আমার কাঁধের উপর দিয়ে ওর হাতটা একেবারে আমার বুক বরাবর এসে পৌঁছেছে। মুহূর্তের মধ্যে যেন আমার উত্তেজনা বেড়ে গেল। চোখের সামনে রাস্তার বদলে সর্ষেফুল দেখতে শুরু করলাম। বাম পাশের লুকিং গ্লাসটার নীলার মায়াবী মুখটা আংশিক দেখা যাচ্ছে। পুরোপুরি দেখলে কি হতো তা বলতে পারব না। বারবার যেন ওর দিকেই তাকাতে ইচ্ছে করছিল। নিজেকে খুব কষ্টে কন্ট্রোলে রেখে বাইকটা স্টার্ট দিলাম। কাজল কোমল অক্ষির ভাঁজে লুকিয়ে থাকা সৌন্দর্য দিয়ে সহজেই যে ছেলেদের পটিয়ে ফেলা যায় সেটা আজ বেশ ভালোভাবেই টের পেয়েছি। সৃষ্টিকর্তা এই এক অসীম ক্ষমতা নারীদের দিয়েছেন। তবে তাদের মন বোঝা যে সত্যিই কঠিন সেটা আমার জানা ছিল না।

নিস্তব্ধতাWhere stories live. Discover now