সূচনা পর্ব

88 1 1
                                    


শরৎ এর আকাশে দল বেঁধে ছুটোছুটি করছে মেঘদল। ছোঁয়াছুয়ি খেলায় মেতেছে তারা। প্রকৃতি নিশ্চয়ই আজ কোনো উৎসবে মেতেছে। বাতাসেরা ছন্দ মিলিয়ে নাচছে। সুর তুলেছে নাম না জানা একঝাঁক পাখি। ঝাঁকে ঝাঁকে অবলিলায় উড়ছে মুক্ত আকাশে। নদীর চরের বালির বুকে কাশফুল বাতাসের প্রবল বেগের সাথে লড়াইয়ে হেরে গিয়ে লুটিয়ে পরছে ভূমিতে। মনে হচ্ছে কেউ কাশগুলো নিজ হাতে যত্ন করে সাজিয়ে সারি সারি করে রোপণ করেছে। নির্দিষ্ট স্থান পর পর কাশ, আর তাতে ফুটে আছে টুকরো টুকরো সাদা মেঘ। এ যেনো কাশফুল নয়, বরং মাটিতে একটুকরো মেঘের লুটোপুটি।  আকাশ-ভূমি উভয়ে সেজেছে শরতের শুভ্রতায়।

নদীর পানিও বিস্ময়কর ছন্দ তুলে নাচছে। স্রোতের টানে নদীর পানি উঠে এসে চরের বালিতে ধাক্কা খাচ্ছে। শোনা যাচ্ছে ছলছল মৃদু শব্দ।

পদ্মা নদীর ছোট্ট শাখা মনতরী, মনতরীর বুকে জেগেছে চর। চরের বালুতে পা ফেলতেই বালি কণা চারদিকে সড়ে গিয়ে বালির ভিতরে তলিয়ে যাচ্ছে পা। শরীরের সমস্ত শক্তি প্রয়োগ করে পা ঠেলে বালির ভেতর থেকে বের করে আবারও সামনে পা ফেলে কাশবনের মাঝে হেঁটে বেড়াচ্ছে আদ্রিকা। নীল আকাশের মেঘ, আকাশের বুকে ডানা মেলে উড়ে চলা পাখি, মাটিতে বাতাসের তালে কোমড় দুলিয়ে নেচে ওঠা কাশফুল কিংবা নদীর বুকে বয়ে চলা জলের ঢেউ - আজ সবকিছুই শৃঙ্খলা মেনেছে। সবই মনোমুগ্ধকর এক ছন্দ মেনে চলছে।

ছন্দ নেই শুধু আদ্রিকার চলার গতিতে, সে ডানে- বায়ে, সামনে-পিছনে দিশেহারার মতো ছুটোছুটি করছে। ঠোঁটের কোণে সর্বজয়ের হাসি, চোখে-মুখে বিস্ময়।
শরতের শুভ্রমেঘ শুধু আকাশেই নয়, বিস্ময়ের চোখের সামনে মনতরীর চরের বালিতেও নেমে এসেছে। এ‌ যেনো এক টুকরো শুভ্র মেঘ।
আধাঘন্টা যাবৎ অনবরত ছুটোছুটি করে একটুও ক্লান্ত হয়নি আদ্রিকা। ফিরেও তাকায়নি পাশে দাঁড়িয়ে থাকা বিস্ময়ের দিকে। বিস্ময়ের উপস্থিতি সে বেমালুম ভুলে গেছে। ধীরপায়ে সামনে এগিয়ে এলো বিস্ময়। আদ্রিকার খুব কাছাকাছি দাঁড়িয়ে ফিসফিসিয়ে বললো,

- আমার আকাশের একটুকরো নিজস্ব মেঘ।

হঠাৎ কানের কাছে কারো আওয়াজে চমকে পিছনে তাকাতে গিয়েও থেমে গেলো আদ্রিকা। বিস্ময় তার খুব কাছাকাছি দাঁড়িয়ে আছে। এতোক্ষণের হারিয়ে যাওয়া ভয়টা আরো জেঁকে বসলো। শুকিয়ে যাওয়া গলা থেকে ফ্যাসফ্যাস আওয়াজ বের করে মৃদুস্বরে ডাকলো,

নোলককন্যাWhere stories live. Discover now