দ্বাদশ পর্ব

11 0 0
                                    

রোজকার মতো ভূবনভোলা শিক্ষার্থী, শিক্ষক, কর্মচারীদের পদচারণায় পরিপূর্ণ। প্রত্যেকে নিজেদের মতো ব্যস্ত। ক্যান্টিনে চায়ের কাপে ধোঁয়া উঠছে, চলছে বন্ধুদের আড্ডা। মুক্তমঞ্চে গিটারিস্টের আঙ্গুলের ছোয়ায় সুর উঠছে, গলা ছেড়ে গাইছে বন্ধুর দল। অফিসরুমে শিক্ষকদের মধ্যে চঞ্চলতা, ক্লাস শুরু হলো বলে। বিস্ময় দাঁড়িয়ে আছে মাঠের এককোণে। তার বাইকে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে বাদামের খোসা ছাড়িয়ে যাচ্ছে। মাঝেমধ্যে চতুর্দিকের বাহারী মানুষগুলোকে দেখছে। আজকাল আদ্রিকার সাথে তার সামনাসামনি কথা হয় না।  মেয়েটা ক্লাস শুরু হওয়ার আগমুহুর্তে ক্যাম্পাসে আসে। দৌড়ে ক্লাস রুমে চলে যায়। বিস্ময় শুধু দূর হতে এক পলক দেখে। চোখে চোখ মিলে, ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে। এতোটুকুতে অদ্ভুত প্রশান্তি। আদ্রিকার চোখে মুখে ফুটে উঠা হাসিটুকু দেখেই বিস্ময়ের মন ভালো হয়ে যায়। রাতে একটা নির্দিষ্ট সময় ফোনকলে কথা হয় দুজনার। সপ্তাহখানেক ধরে এই রুটিনই চলছে। কিছুক্ষণের মধ্যে মূল ফটক দিয়ে প্রবেশ করলো আদ্রিকা, আদ্রতা। আদ্রিকা মাথা তুলে ঠিক সেই মাঠের কোণে তাকালো। কাঙ্ক্ষিত মানুষটির চোখজোড়া তারই দিকে তাকিয়ে আছে। লজ্জায় নুইয়ে পরলো আদ্রিকার চোখজোড়া। বিস্ময়ের চোখের মাদকতায় সে প্রতিবার হারিয়ে যায়। পাশে আদ্রতা কিছু একটা বলছিলো, আদ্রিকা সেসব শুনতে পেলো না। যে পথে কলেজ-ভার্সিটি সেকশন আলাদা হয়ে যায়, সেখানে এসে আদ্রতা আদ্রিকার কাঁধে হাত রেখে তার একদম সামনে দাঁড়িয়ে বললো,
- মনোযোগ দিয়ে ক্লাস করবি। ক্লাস শেষ হলে সোজা এখানে চলে আসবি। একসাথে বাড়ি যাবো।

উত্তরে আদ্রিকা শুধু মাথা দুলিয়ে সায় জানালো। আদ্রতা তার ব্যাগ থেকে বিশ টাকার একটা নোট বের করে আদ্রিকার হাতে দিয়ে বললো,
-টিফিন টাইমে ক্যান্টিনে গিয়ে নাস্তা করে নিস।

এবার সে আর আদ্রিকার উত্তরের অপেক্ষা না করে তার মাথায় হাত বুলিয়ে ভার্সিটি বিল্ডিংয়ের দিকে পা বাড়ালো। আদ্রতা চলে যেতেই আদ্রিকার পাশ কাটিয়ে চলে গেলো বিস্ময়ের বাইক। বসন্ত বাতাসের মতো মনে দোলা দিলো কিছু ভালোলাগা। তার রাঙ্গা মুখের পাণে তাকিয়ে কিছু দূর এগিয়ে গেলো বিস্ময়ের বাইক। আদ্রিকা এবার নিজ গন্তব্যের দিকে পা বাড়ালো। হাতে সময় বেশি নাই। আজকাল বাড়ির পরিবেশ থমথমে। তাই অতি সতর্ক হয়ে চলাফেরা করতে হয়।

নোলককন্যাWhere stories live. Discover now