একাদশ পর্ব

8 0 0
                                    

সাপ্তাহিক ছুটির দিনে সকল অলসতা ঝেঁকে বসে। যদিও নিয়ম মেনে খুব সকালে ঘুম ভেঙে যায় কিন্তু নির্দিষ্ট নিয়ম অনুসারে নিত্যকর্মের কাজে ভাটা পরায় বিছানা ছেড়ে উঠা হয় না। চোখ বন্ধ করে বিছানায় গড়াগড়ি দিয়ে মন ভরে গেলে নয়টার দিকে হেলেদুলে নাস্তার টেবিলে বসে আদ্রতা এবং আদ্রিকা। রান্না ঘরে কড়াইয়ে খুন্তি চালাতে ব্যস্ত নীহার। সাপ্তাহিক ছুটির সবার জন্য বহাল থাকলেও বাড়ির গৃহিণীর জন্য এমন কোনো ছুটি নেই। তাদের রোজকার জীবন একই নিয়মের মাঝে বন্দী৷ নেই কোনো গ্রীষ্ম-বর্ষা, ঈদ-পার্বণ,  ফ্লাইডে-হলিডে।  তাদের জন্য প্রতিটি দিন ওয়ার্কিং ডে৷ তাই প্রতিদিনের মতো আজও নীহারকে ভোরবেলা বিছানা ছাড়তে হয়েছে৷ অন্যদিনের তুলনায় বরং আজ কাজ বেশি। সকালের নাস্তা খেয়ে মোকাররম বেড়িয়ে গেছে গ্রামের দিকে কিছু চারা আনতে হবে।  নার্সারির যাবতীয় পণ্য পরিবহনের কাজের দায়িত্ব  রওশন আলীর ছোট লরি ট্রাকের। কিছুদিন আগে একবার গিয়ে সুপারির চারা দেখে এসেছিলো রওশন আলী। মোকাররম নিজে থেকে আর পর্যবেক্ষণ করার ঝামেলা করতে চায়নি। আজ একেবারে রওশন আলীকে সাথে নিয়ে লরিতে চেপে গেছে চারাগুলো নিয়ে আসতে৷ নীহার তাকে নাস্তা করিয়ে মেয়েদের জন্য রুটি তৈরি করে হটপটে রেখে দিয়েছিলো। এখন দ্রুত হাতে সবজি গরম করে নিচ্ছে। ঠান্ডা তরকারি দু বোনেই খেতে চায় না।

নাস্তা শেষে ঘর পরিষ্কারের টুকটাক কাজে লেগে গেলো দু বোন। শুক্রবার মানেই কাপড় ধোঁয়া, ফার্নিচার পরিষ্কার করা, ফ্লোর মুছা এসব কাজের দিন। কাজ শেষে দুপুরের খাবারের পর ভাত ঘুমের জন্য এক বিছানায় শুয়ে আছে নীহার এবং তার দুই মেয়ে।  আদ্রিকার চোখে ঘুম নেই তবুও সে চোখজোড়া বন্ধ করে ঘুমের ভান ধরে এককোণে শুয়ে আছে। আজ সারাদিন একবারও মোবাইল হাতে নেওয়ার সুযোগ পায়নি। বিস্ময় নিশ্চয়ই খোঁজ করেছিলো। শুরুতে মোবাইলে কথা বলায় অস্বস্তি হলেও এখন আদ্রিকা চাতক পাখির ন্যায় অপেক্ষার প্রহর গুনে। যদিও জড়তা এখনো কাটেনি৷ কল রিসিভড করে সে চুপ করে থাকে। কথা যা বলার বিস্ময় নিজেই বলে। টুকটাক প্রশ্নের হ্যাঁ বা না এমন উত্তর দেয় মাঝেমধ্যে। বিস্ময়ের কখনো শেষ না হওয়া গল্পগুলো শুনতেই আদ্রিকার ভালো লাগে। স্কুল, কলেজ, ভার্সিটি, বন্ধুমহল এসব নিয়ে তার অনেক গল্প আছে। প্রতিদিন মজার মজার অভিজ্ঞতার ঝুলি নিয়ে বসে আর আদ্রিকার অধির আগ্রহে শোনে। আজ শুক্রবার, আদ্রতা সারাক্ষণ আশেপাশেই ঘুরছে। বোনের সান্নিধ্যে থাকা মেয়েটির এখন একলা কিছু সময় খুঁজে৷ একটা নিজের ঘর হলে বেশ হতো। ফিসফিসিয়ে বিস্ময়ের সাথে কথা বলতে হতো না। সতর্ক নজর দরজার দিকে রাখতে গিয়ে বিস্ময়ের কন্ঠের মাদকতায় ডুবে যাওয়া হয় না।

নোলককন্যাWhere stories live. Discover now