চতুর্থ পর্ব

9 0 0
                                    

পরপর তিনটে ক্লাসের পর টিফিন পিরিয়ডে স্টুডেন্টরা যেনো হাঁফ ছেড়ে বাঁচে। নিজেদের মতো হৈ-হুল্লোড়ে মেতে উঠে। কিন্তু আজ টিফিন পিরিয়ডে ফাস্ট ইয়ারের এ-সেকশন একটু বেশি উৎতপ্ত। হাতেগোণা কয়েকজন ক্যান্টিনে খেতে গিয়েছে, বাকিরা সবাই শেষ বেঞ্চে বসে থাকা একজন মেয়েকে ঘিরে দাঁড়িয়ে আছে।

আদ্রিকা সহজে কারো সাথে মিশতে পারে না, তার উপর কলেজ শুরু হয়েছে সবে সপ্তাহখানিক। তাই কারো সাথে সখ্যতা গড়ে ওঠেনি। প্রতিদিন ক্লাসের সর্বশেষ বেঞ্চে একাই বসে ক্লাস করে, একাই ক্যান্টিনে গিয়ে হালকা কিছু নাস্তা খেয়ে আসে, ছুটির ঘন্টা পরা মাত্রই দ্রুততার সাথে ক্লাস ছেড়ে বেরিয়ে যায়। এই ছিলো আদ্রিকার রুটিন। এতোদিন কেউ তাকে বিরক্ত না করলেও আজ কীভাবে যেনো সবার নজরে পরে গিয়েছে।

ক্লাসে শুরু থেকেই কয়েকজন মেয়ে তার দিকে বারবার ফিরে তাকাচ্ছিলো, নিজেদের মধ্যে হাসাহাসি করছিলো। তাদের কথোপকথন শোনা না গেলেও তারা যে আদ্রিকার বিষয়ে কথা বলছে এবং তাকে নিয়েই হাসাহাসি করছে - তা তাদের আচরণে স্পষ্ট। পুরোটা সময় আদ্রিকা দেখেও না দেখার ভাণ করে গেছে। টিফিন পিরিয়ডে ক্যান্টিনে যাওয়ার উদ্দেশ্য বের হতেই যাচ্ছিলো মেয়েগুলো তার পথ আটকায়। তার বেঞ্চের ওপরপাশের সীটবেঞ্চে তারদিকে মুখ করে বসে। আদ্রিকার পরিচয়, স্কুলের নাম, বাড়ির ঠিকানা ইত্যাদি বিষয়ে প্রশ্ন করার মাধ্যমে স্বাভাবিকভাবেই আলোচনা শুরু করলেও পরবর্তীতে তা সীমা ছাড়িয়ে তুচ্ছতাচ্ছিল্যের দিকে চলে যায়। মেয়েগুলোর উগ্রতা এবং অসুস্থ মানসিকতার বহিঃপ্রকাশ আদ্রিকাকে স্তম্ভিত করে দিয়েছে। সে কোনোদিকে না তাকিয়ে মাথা নিঁচু করে বসে আছে। মনোযোগ অন্যদিকে করার চেষ্টা করছে, যাতে সামনে দাঁড়িয়ে থাকা উৎসুক জনতার কোনো কথাই তার কর্ণগোচর না হয়৷ কিন্তু তার নিস্তব্ধতা সবাইকে আরও উৎসাহী করে তুলেছে। ক্লাসে সবচেয়ে সুন্দর মেয়েটি রিপা। সে আদ্রিকার নত মুখটা এক হাতে উঁচু করে ধরে বললো,
- এটা কী নতুন ফ্যাশন? কি রে তোরা কেউ ট্রাই করবি নাকি?

পেছন থেকে ছেলে মেয়ের উচ্চস্বরে হাসি ভেসে এলো। কেউ একজন বললো-
- নতুন ফ্যাশন হতে যাবে কেনো রে! এটা তো সেই আদিকালের মানুষজন পড়তো। এই মেয়ে দেখি এখনো সেই মানধাতা আমলেই পরে আছে।

নোলককন্যাWhere stories live. Discover now