বিয়ের কনে বাড়িতে নেই খবরটি প্রচার হতে বেশি সময় লাগেনি৷ গোসল সেরে আদ্রতার খোঁজে এসেছিলো মাহিনের ভাবি। ওকে না পেয়ে আদ্রিকার কাছে জানতে চাওয়া হলো। সেও কিছু জানে না। ঘন্টা খানেকের মধ্যে বিয়ের অতিথি থেকে শুরু করে আশেপাশের প্রতিবেশীর মাঝে খবর ছড়িয়ে পরছে।
বিয়ের কনে পালিয়েছে খবরটা যখন মোকাররমের কাছে পৌঁছালো সে উদ্ভ্রান্তের মতো আশেপাশের মানুষের দিকে তাকালো। নীহারের কিছুতেই বিশ্বাস হচ্ছে না৷ নিজের মেয়েকে সে ভালোভাবে চিনে৷ কখনো কারো সাথে কথা বলতে দেখেনি, সেরকম কোনো সন্দেহজনক আচরণ লক্ষ্য করেনি৷ তাহলে লোকে কেনো বলছে নীহারের আদ্রতা অন্য ছেলের সাথে পালিয়েছে?ষাঁড়ের মতো তেড়ে এলো মাহিন। আদ্রিকাকে পাকড়াও করে বারবার জানতে চাইছে ছেলেটা কে? কার সাথে, কখন পালিয়েছে? সবার আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু আদ্রিকা মাঝ সমাবেশে দাঁড়িয়ে থরথর করে কাঁপতে লাগলো। নিজের কান্নাকাটি ছেড়ে নীহার এগিয়ে এসে মেয়েকে আগলে দাঁড়িয়েছে। মাহিনের বিশাল গোষ্ঠীর সামনে মোকাররম, নীহার সামান্য একটি বিন্দুর মতো অসহায় বসে রইলো ভূমির উপর।
রাত নামতে শুরু করেছে। উৎসুক জনতা ভীড় কমিয়ে নিজের ঘরে ফিরে যেতে লাগলো। মাহিনের আত্মীয় স্বজনদের ফিরিয়ে নিতে এসেছে মোজাম্মেল। মাহিনকে অনেক কষ্টে টেনেটুনে ঘরে ফেরানো হলো। মোজাম্মেল ফিরে যাওয়ার আগে মোকাররমের পাশে বসে বললো,
- বেশি লেখাপড়া করাইলে মেয়ে মানুষের এম্নেই পাখনা গজায়৷ কার সাথে ভাব আছে সেটা আগেই বলে দিলে আমাদের এমন ঝামেলায় পরতে হতো না। তোমার মানসম্মান ধূলোয় মিশিয়ে দিছে, সাথে আমাদেরও। শুধু শুধু কষ্ট করে ঘরে কালসাপ পুষছো। যতো যাই করো মেয়ে মানুষ কখনো বিশ্বাসের মান রাখে না। তোমার ঘরের তিনটা মেয়ে লোক সারাক্ষণ একসাথে বসে গুজগুজ করে। একজন ভাগছে কিন্তু বাকি দুজন তো আছে। কে কি করে, না করে সব খবর এরা জানে। ওদের জিগাও। সোজাভাবে কইতে না চাইলে কঠোর হও। আদরে দিয়া মাথায় তুলছিলা। এইজন্য তোমার মাথায় ঘোল ঢালছে৷ আমি কিছু কইলে তো গায়ে মাখবা না৷ তবুও কই, যে গেছে তারে তো আর ফিইরা আনতে পারবা না। কিন্তু ঘরে যেইটা আছে, সেইটার দিকে নজর দেও। সময় থাকতে এটারে মানে মানে বিদায় করো। কি হবে এতো লেখাপড়া করায়? দেখলা তো লেখাপড়া শেখানোর নমুনা। বাবা-মায়ের মুখে চুনকালি দিয়া অন্য ছেলের হাত ধরে ভাগছে৷ একলা করছে এই কাজ? জীবনেও না। তোমার ঘরের মানুষের হাত না থাকলে এতো লোকজনের চোখ ফাঁকি দিয়া কেমনে ভাগলো?
YOU ARE READING
নোলককন্যা
Romanceধীরপায়ে সামনে এগিয়ে এলো বিস্ময়। আদ্রিকার খুব কাছাকাছি দাঁড়িয়ে ফিসফিসিয়ে বললো, - 'আমার আকাশের একটুকরো নিজস্ব মেঘ।' হঠাৎ কানের কাছে কারো আওয়াজে চমকে পিছনে তাকাতে গিয়েও থেমে গেলো আদ্রিকা। বিস্ময় তার খুব কাছাকাছি দাঁড়িয়ে আছে। এতোক্ষণের হারিয়ে যাওয়া ভয়ট...