নবম পর্ব

7 0 0
                                    

ভূবনভোলা একাডেমিকের ভেতরে প্রবেশ করলে সামনেই একটা বিশাল কৃষ্ণচূড়া গাছের দেখা মিলে। বৃহদাকার এই গাছটির বয়স অর্ধশতক পেরিয়েছে৷ এই তো কিছুদিন আগেই ঝলসে দেওয়া রোদকে উপেক্ষা করে সূর্যের থেকেও বেশি তেজ নিয়ে ফুটে থাকতো টকটকে  কৃষ্ণচূড়া ফুল৷ গাছের দিকে তাকালে মনে হতো রক্তে ছেয়ে গেছে আকাশের একটি অংশ৷ ভূবনভোলা একাডেমিকের কলেজ এবং ভার্সিটি দুটো প্রতিষ্ঠানের প্রতিটি কোণায় ঘাসের দেখা মিলে। এখানে ঘাসের চাষ হয়৷ ঘাস পরিচর্যার জন্য বেতনভুক্ত কর্মচারী রয়েছে। গ্রীষ্মের তীব্র দাবদাহে যখন চারদিকের গাছপালা পর্যন্ত পুড়ে যাচ্ছিলো তখনও ভূবনভোলার ভূমিতে লিকলিকিয়ে বেড়ে চলেছে সবুজ ঘাস। কলেজ সেকশনের অধ্যক্ষ মহাদয় নিজে দাঁড়িয়ে থেকে প্রতিদিন সকাল বিকাল ঘাসে পানি দেওয়ার কাজটি পর্যবেক্ষণ করেন৷ রোজ দুবেলা পানির সংস্পর্শে এসে ঘাসগুলো কোন লজ্জায় নেতিয়ে পরবে? তারা সূর্যের তাপের সাথে লড়াই করে প্রতিবার জিতে যায়। সবুজ সতেজ ঘাসের উপর যখন রক্ত রাঙানো কৃষ্ণচূড়া ঝরে পরে, সে এক দেখার মতো দৃশ্য বটে৷ শত শত কৃষ্ণচূড়া ঝরে পরে তৈরি হয় সবুজের উপর লাল ফুলের বিছানা। গ্রীষ্ম বিদায় নিয়েছে, বর্ষা এসেছে। ফুলে ভরা সেই যৌবন পেরিয়ে গেলেও গাছটির রুপে খুব একটা ভাটা পরেনি৷ সবুজ পাতায় ভরা গাছটি ধরনীর বুকে বিশাল ছায়া ফেলেছে। তারই নিচে অস্থির হয়ে দাঁড়িয়ে আছে বিস্ময়। চঞ্চল চোখজোড়া কখনো হাত ঘড়ির দিকে, আবার কখনো প্রবেশ পথে।
অবশেষে যুগ যুগান্তর পেরিয়ে প্রকৃতিতে শীতল বাতাস বইতে শুরু করলো। আকাশ কালো মেঘে ছেয়ে থাকলেও বিস্ময়ের বুক এতোক্ষণ গ্রীষ্মের চনচনে রোদে খাঁ খাঁ করছিলো। আদ্রিকার দেখা মিলতেই সেই বুকে শীতল বাতাসের ঝাপটা এসে লাগলো। এক ছুটে গিয়ে বুকের মাঝে জড়িয়ে ধরতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু আদ্রিকার পাশে আদ্রতাকে দেখে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করলো। আদ্রতা বলেই সে নিজের মনের লাগাম টেনে ধরেছে। অন্য কেউ হলে বিস্ময় আজ কাউকে পরোয়া করতো না৷ কতোদিন হয়ে গেলো আদ্রিকার সাথে ঠিকঠাক কথা হয় না৷ মেয়েটা কেমন যেনো! সেই যে হ্যাঁ বলে গেলো তারপর থেকে বিস্ময় আদ্রিকার সান্নিধ্য পেতে মরিয়া হয়ে আছে। অথচ আদ্রিকা আগের মতোই শান্ত, স্থির। কাছে আসার অস্থিরতা নেই, দুচোখ ভরে দেখার তৃষ্ণা নেই৷ পথ চলতে ফিরতে সামনাসামনি হয়ে গেলে শুধু মুখটা উজ্জ্বল হয়ে উঠে৷ এতোটুকুতে বিস্ময় সন্তুষ্ট নয়। এভাবে এমন করে প্রেম হয় নাকি!
আজও বিস্ময়কে দেখে লাজুক হেসে আদ্রিকা ক্লাসের দিকে চলে গেলো। আদ্রতা নিজের ডিপার্টমেন্টের দিকে যাওয়ার পথে সিনিয়রকে দেখে নিয়মমাফিক সালাম দিলো। বিস্ময় সালামের উত্তর দিয়ে পড়াশোনার হালচাল জিজ্ঞাসা করে বিদায় নিলো। দ্রুত পায়ে ডিপার্টমেন্টের দিকে গেলেও আদ্রতার মনের ভেতর কেমন খুঁত খুঁত করছে। কথা বলার সময় বিস্ময়কে দেখে মনে হলো তার ভীষণ তাড়া। অথচ কিছুক্ষণ আগেও তাকে কৃষ্ণচূড়া গাছের নিচে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেছিলো। হঠাৎ কার জন্য এতো মরিয়া হয়ে উঠলো? গেটে প্রবেশের সময় আশেপাশে কেউ ছিলো না। শুধুমাত্র তারা দু'বোনই ভেতরে আসলো। বাড়ি থেকে বের হতে আজ দেরী হয়ে গিয়েছিলো। তাই সবার শেষে তারা এসে পৌঁছেছে। তাহলে কি আমাদের জন্য দাঁড়িয়ে ছিলো? নিজের ভাবনার বাহার দেখে নিজেই নিজেকে ধমকে উঠলো। কী সব অদ্ভুত চিন্তা! বিস্ময় আকাশের চাঁদের মতো মূল্যবান। চাঁদের গায়ে কলঙ্কের দাগ যতো বেশি হয়, তার প্রতি আকর্ষণ ততোই বাড়তে থাকে। সদা সতর্ক থাকতে গিয়ে আজকাল সবাইকে সন্দেহ হয়৷ নিজেকে অসুস্থ কোনো মানুষ মনে হয় আদ্রতার। ভালো থাকাতেই তার ভয়।

নোলককন্যাWhere stories live. Discover now