অষ্টম পর্ব

8 0 0
                                    

ড্রয়িংরুমের সোফা টেবিলের উপর কর্কশ শব্দে বেজে চলেছে একটি ফোন। এই এন্ড্রয়েড এর যুগে পুরনো আমলের একটি বাটনফোন অবহেলায় পরে থাকবে এটাই তো স্বাভাবিক। ফোনটি এতোক্ষণ ধরে মনোযোগ আকর্ষনের চেষ্টা করার পরেও কেউ তার দিকে ফিরে তাকাচ্ছে না। এ কেমন আচরণ! নীহার রান্নাঘর হতে খুন্তি হাতে বেরিয়ে এলো। সন্ধ্যা পেরিয়ে সবেমাত্র রাত নেমেছে। রান্নার এখনো ঢের বাকি। কিছুদিন হলো আদ্রতার জ্বর সেরেছে। শারীরিক দুর্বলতার কারনে অনেকটা নেতিয়ে পরায় বেশিরভাগ সময় ঘুমিয়ে কেটে যায়। পড়াশোনা করে কিছুক্ষণ আগেই সে নিজের রুমে ঘুমিয়ে পরেছে। আদ্রিকার পড়ার চাপ তুলনামূলক বেশি। সবে কলেজে ক্লাস শুরু হয়েছে৷ নতুন বই তাই আগ্রহটাও বেশি। ইদানীং তাকে পড়ার টেবিলে বেশি দেখা যায়। রুমের দরজা খোলা থাকায় নীহার রান্নাঘরের দরজা হতেই আদ্রিকাকে দেখতে পেলো। দরজার দিকে পিঠ করে চেয়ারে বসে পড়ছে৷ রাতে ঘুমানোর সময় বাদে মেয়েরা ঘরের দরজা খোলাই রাখে৷ বাড়িতে মাত্র চারজন সদস্য। এরমধ্যে মোকাররম বেশির ভাগ সময় বাইরে অবস্থান করে৷ বাকি রইলো তিনজন, যারা প্রত্যেকেই নারী। মা-মেয়ের মাঝে আলাদা করে প্রাইভেসির প্রয়োজন কখনো দেখা দেয়নি। তাই খোলা দরজায় অবাধ আসা যাওয়া সবসময় চলে৷ নীহার মনে মনে ক্ষুব্ধ হলেও মেজাজ নিয়ন্ত্রণে আনলো। তার ছোট মেয়েটা রাজ্যের বোকা, সেটি সে মেনেই নিয়েছে৷ তবুও সময় ও পরিস্থিতিভেদে আপনা থেকেই রাগ চলে আসে৷ তবে এই মুহূর্তে ছোট মেয়েকে বকা দিলে বড় মেয়ের ঘুমে সমস্যা হবে। আদ্রতা হয়তো ছোটবোনকে আগলে রাখার অঘোষিত এক প্রতিজ্ঞা করেছে। সবসময় আদ্রিকার সামনে ঢাল হয়ে দাঁড়ায়। প্রতিপক্ষ মা-বাবা হোক কিংবা অন্যকেউ। আদ্রিকাকে বকা দেওয়া হচ্ছে শোনা মাত্রই ঘুম, ক্লান্তি সব ছেড়ে চলে আসবে। তাই নীহার কন্ঠ যথেষ্ট স্বাভাবিক রেখে বললো,

- কখন থেকে ফোনটা বেজে যাচ্ছে। আদ্রিকা, কলটা ধর।

ওপাশ থেকে আদ্রিকা বললো,

- পড়তেছি আমি। তুমি ধরো না।

- রান্নাঘরে এতোসব রান্না একা হাতে সামলাচ্ছি। তুই সামান্য একটা কল ধরে কথা বলতে পারবি না? রান্না বন্ধ করে আমাকে যেতে হবে?

নোলককন্যাWhere stories live. Discover now