ষষ্ঠ পর্ব

10 0 0
                                    

সকাল থেকে ঝিরিঝিরি বৃষ্টি হচ্ছে। এমন বৃষ্টিতে এক জায়গায় অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকলে গাঁ ভিজে যায় কিন্তু অনবরত হাঁটাচলা করলে আবার গায়ে বৃষ্টির পানি তেমন একটা পরে না। ঝড় বৃষ্টি যাই আসুক, ঘরে বসে থাকার ছেলে বিস্ময় নয়। সে তার ইয়ামাহা আর ফিফটিন বাইকে চেপে বৃষ্টির সাথে পাল্লা দিয়ে ফাঁকা রাস্তায় ছুটে বেড়িয়েছে। ঘর ছেড়ে বের হওয়ার সময় পরখ অবশ্য হাতে একটা ছাতা ধরিয়ে দিয়েছে। পরখের মধ্যে একজন মমতাময়ী মা লুকিয়ে আছে। যা দূর থেকে কেউ বুঝতে পারে না। খুব কাছে গিয়ে অনুভব করতে হয়। তিন বছর ধরে একসাথে থাকতে থাকতে এই ছেলেটাকে বিস্ময় পুরোটা চিনে ফেলেছে। এমনিতেও মানুষ চেনায় বিস্ময় বরাবর ফাস্টক্লাস। পরখের কেয়ারিং স্বভাবটা মাঝেমধ্যে বিরক্তও লাগে। কিন্তু মুখে তো আর কিছু বলা যায় না। সে সময় বিস্ময়ও পরখের মতো মনের কথা মনেই দাফন করে ফেলে।

বিস্ময় বসে আছে ভার্সিটির ক্রিকেট মাঠের শেষপ্রান্তে থাকা বিশাল কদম গাছটার নিচে৷ গাছটার লম্বা, চওড়া কদম পাতায় ছেয়ে থাকায় গাছের তলায় বৃষ্টি পরছে না। বর্ষা-বাদলের দিনে এমন গাছগুলোই হচ্ছে প্রকৃতি প্রদত্ত ছাতা। সেই ছাতার নিচে আশ্রয় নিয়ে বিস্ময় অপেক্ষা করছে আদ্রিকার। এখান থেকে কলেজ গেটের চিত্র একদম পরিষ্কার দেখা যায়৷ আদ্রিকা গেটে পা রাখা মাত্রই বিস্ময় তাকে দেখতে পাবে। বোকা, ভীতু চেহারার মেয়েটার মধ্যে কিছু একটা আছে৷ বিস্ময়ের কেমন নেশা লাগে।
কলেজে নতুন সেশনের ভর্তি চলছিলো, তখন প্রথমবার দেখা। আজকাল মেয়েরা হয়েছে উড়নচন্ডি, উগ্র। কোমলতা, ধীর-স্থিরতা বলে কিছুই তাদের মধ্যে অবশিষ্ট নেই। এই সময়ে দাঁড়িয়ে আদ্রিকার মতো মেয়ে যে কারো নজরে পরে যাবে। বোনের পেছনে দাঁড়িয়ে অবাক চোখে চারদিক ঘুরে দেখছিলো। ভর্তির নিয়মকানুন যা সম্পন্ন করার বড় বোন করছে আর সে শিশুর মতো বোনের পেছন পেছন ঘুরছে। বিস্ময় তখনই ঠিক করে ফেলেছিলো, এই মেয়েটিকে তার চাই।
নিজের সোর্স কাজে লাগিয়ে একদিনের মাঝে যাবতীয় খোঁজ খবর সংগ্রহ করে ফেলেছে৷ আদ্রিকার বড়বোন আদ্রতা, এ বছর মার্কেটিং ডিপার্টমেন্টে ভর্তি হয়েছে। ছোটবোন আদ্রিকা কলেজের মানবিক বিভাগের 'এ' সেকশনে ভর্তি হলো। আদ্রিকার কাছাকাছি যাওয়ার একমাত্র সহজ পথ হচ্ছে আদ্রতা- এই সহজ ব্যাপারটি বুঝতে বিস্ময়ের বেশিক্ষণ লাগেনি। একনজরেই সে মানুষের স্বভাব, চিন্তাভাবনাসহ খুঁটিনাটি কিছু বিষয় আন্দাজ করে ফেলতে পারে৷ ছোটবেলা থেকে অনেক ধরনের মানুষের সাথে পরিচিত হতে হতেই এমন আন্দাজ করার ক্ষমতা তৈরি হয়েছে। এজন্য বিস্ময় তার বাবাকে ধন্যবাদ জানায়৷ অবশ্যই মনে মনে৷ সামনাসামনি দাঁড়িয়ে কিছু বলার সাহস আদোও তৈরি হয়নি৷ দেশের টপ টুয়েন্টি বিজনেসম্যানদের মধ্যে একজন বিস্ময়ের বাবা। আজ বিজনেস পার্টি, কাল এটা ওটা সেলিব্রেশন, বিজনেসফিল্ডে নানান পার্টনারের বাড়িতে অনুষ্ঠান - সকল ইনভাইটেশনে তিনি সপরিবারে উপস্থিত হন৷ বিজনেসওয়াল্ডে ফ্যামিলিপারসন হিসেবে উনার বেশ খ্যাতি আছে। কিন্তু পরিবারের সদস্যরাই জানে আসল সত্য। পরিবারকে সময় দেওয়ার মতো অযথা সময় বিস্ময়ের বাবার নেই৷ ছেলের সাথে কখনো হাসিমুখে বসে দুমিনিট কথা বলেছে কিনা তা বিস্ময়ের মনে পরে না। একমাত্র সন্তান তবুও বাবার সাথে নেই সখ্যতা। শুধু সন্তান কেনো, নিজের স্ত্রীর সাথেও মনে কথা বলার সময় তিনি বের করতে পারেন না। বিস্ময়ের মায়ের সময় কাটে বিভিন্ন লেডিস ক্লাব, পার্টি, স্পা, শপিংমল এসব নিয়েই। বিস্ময় অবশ্য মাকে দোষ দেয় না। সময় কাটানোর জন্য তো কিছু একটা করা উচিত৷ এভাবে যদি ভালো থাকা যায়, মনে শান্তি আসে তাহলে ক্ষতি কি? দিনশেষে ভালো থাকাটাই ফ্যাক্ট৷

নোলককন্যাWhere stories live. Discover now