ত্রয়োদশ পর্ব

10 0 0
                                    


পর্তুলিকাকে রান্নাঘরে খুব একটা দেখা যায় না। কালেভদ্রে সে কখনো এসে রান্না ঘরে উঁকি দিয়ে যায়। তাঁর বাড়িতে রান্নার কাজ করার জন্য শহরের নামকরা শেফ সদা উপস্থিত রয়েছে। সেখানে তিনি কেনো কষ্ট রান্না করতে যাবেন! কষ্ট করবেনই বা কার জন্য? এ বাড়িতে বিশাল একটি ডাইনিং টেবিল সবসময় অবহেলায় পরে রয়। পর্তুলিকা আজকাল নিজের খাবারটুকু ঘরে বসে খেয়ে নেন। কখনো আবার ছাদের দোলনায় বসে মিঠা রোদ উপভোগ করতে করতে দুপুরের খাবার খান। রান্নাবান্না পছন্দ নয়, এমন কিন্তু নয়। বাগান পরিচর্যার পর কোনো কাজে যদি তাঁর আগ্রহ থাকে, সেটি হচ্ছে রান্না। অথচ সেই রান্না বাদ দিয়েছেন আজ বেশ কয়েক বছর হলো। মেয়েরা রান্না করতে যতোটা না ভালোবাসে , তার থেকে বেশি ভালোবাসে কাউকে রেঁধে খাওয়াতে। পর্তুলিকাও একসময় রেধেবেড়ে স্বামী সন্তানকে খাওয়াতেন। দিনের অর্ধেকটা সময় কেটে যেতো রান্না ঘরে। অথচ এখন ! স্বামী কখন ঘরে ফেরে ,কখন বেড়িয়ে যায় তা পর্তুলিকা জানেনই না। পুরো বাড়ি জুড়ে অদ্ভুড়ে নিশ্চুপতা পর্তুলিকার একমাত্র সঙ্গী। সেই নিশ্চুপতা ভেঙ্গে অনেকদিন পর হলরুম থেকে ডাক ভেসে এলো, “পিউ, পিউ।"

পর্তুলিকা সে ডাক শুনলেন, কিন্তু উত্তর দিলেন না। ইবনূল ইবতেহাজ দ্রুত পায়ে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠতেই যাচ্ছিলেন। হঠাৎ রান্নাঘরের দিকে চোখ পরতেই তিনি থমকে দাঁড়ালেন। অবাক চোখে গুটি গুটি পায়ে নিচে নেমে রান্নাঘরের দিকে গেলেন। কন্ঠের উৎসাহ লুকানোর প্রয়োজন মনে করলেন না। বললেন,
“তুমি রান্না করছো!”

পর্তুলিকা উত্তর দিলেন না। শুধু ফিরে তাকালেন। তবে তাঁর নীরব চাহনি অনেক কিছু বুঝিয়ে দিলো। ইবনূল ইবতেহাজ হালকা হেসে রান্নাঘরের দরজায় হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে রইলেন। কতোদিন পরে নিজের স্ত্রীকে পরিপূর্ণ গৃহিনী রুপে দেখছেন, সে হিসাব কষতে গিয়েও ফিরে এলেন। কী দরকার পুরনো ক্ষত জাগানোর। সামনে দাঁড়ানো সেই রমণী, সময়ের দৌড়ে শুধু শরীর ভারী হয়েছে। বাকিসব ঠিক আগের মতোই। পরণে শাড়ি, আঁচলখানা কোমড়ে গুজে রাখার কারনে ফর্সা পেট উন্মুক্ত। ইবনূল ইবতেহাজ আজও নিজেকে আটকাতে রাখতে পারলেন না। পা দুটো নিজে থেকে সামনে এগিয়ে গেলো। পেছনে দাঁড়িয়ে তিনি যখন তাঁর উন্মুক্ত পেটে হাত রেখে জড়িয়ে ধরলেন, পর্তুলিকা কিছুটা কেঁপে উঠলেন। কড়াইয়ে চামচ নাড়াতে থাকা হাতটি থমকে গেলেও তিনি দ্রুত নিজেকে সামলে নিলেন। পর্তুলিকার আলগা খোপা হতে কয়েক গাছি চুল ছুটে গেছে। কিছুক্ষণ ধরে ভীষণ বিরক্ত করলেও দু হাতে কাজ সামলাতে গিয়ে সেগুলো আর সামলানো হয়নি। ইবনূল ইবতেহাজ খুব যত্ন করে সেই চুল করে পর্তুলিকার কানের পেছনে গুজে দিলেন। অনেকক্ষণ চুলোর কাছাকাছি থাকায় পর্তুলিকা খানিকটা ঘেমে গিয়েছেন। কপালে ও নাকের ডগায় বিন্দু বিন্দু ঘাম মুক্তোর মতোন ঝিকমিক করছে। ইবনূল ইবতেহাজ স্ত্রীর নিরবতার সুযোগ নিয়ে কিছুটা সাহসী হলেন। পেছন থেকে আরেকটু ঘনিষ্ট হয়ে দাঁড়িয়ে পর্তুলিকার ঘাড়ে মুখ গুজে রইলেন। অনেকদিন পর স্বামীর সান্নিধ্য এবং পুরনো দুষ্টুমি উপভোগ করলেও ব্যস্ততার সময় কাজে ব্যঘাত ঘটায় খানিক বিরক্ত হলেন পর্তুলিকা। তবুও নিজের মতো করে কাজ করার চেষ্টা করলেন। কিছুতেই নিজের প্রতিজ্ঞা ভাঙ্গবে না, কথা বলবে না এই নিষ্ঠুর মানুষটির সঙ্গে। কিছুক্ষণ পর হলরুম হতে পায়ের শব্দ আসতেই পর্তুলিকা স্বামীর হাতের বাঁধন থেকে দ্রুত নিজেকে ছাড়িয়ে নিলেন। ড্রাইভারকে খামারে পাঠিয়েছিলেন গরুর খাঁটি দুধ আনতে। সে নিশ্চয়ই এসে পরেছে। দ্রুত পায়েস রেঁধে ফেলতে হবে। বাকি খাবার তৈরি হয়ে গেছে। তিনি আরেকবার ঘড়ির দিকে নজর বুলিয়ে নিলেন। হাতে এখনো যথেষ্ট সময় আছে। ইবনূল ইবতেহাজ স্ত্রীর তোড়জোড় দেখে মুখ ভার করে বললেন,
“ছেলেকে পেয়ে আমাকে একদম পাত্তা দিচ্ছো না, এটা কি ঠিক হচ্ছে? তোমার জন্য ছেলেকে মানিয়ে এলাম। কোথায় আমাকে ধন্যবাদ দিবে, একটু আদর করে দিবে। তা না করে এখনো রাগ পুষে রেখেছো।”

নোলককন্যাWhere stories live. Discover now