পঞ্চদশ পর্ব

6 0 0
                                    

‘চুপকথা’য় আজকে আলোচনা সভা বসেছে। খুব বেশি লোকজন নেই সেই সভায়। মোকাররমের বড় ভাই মোজাম্মেল এসেছে ভাইয়ের সাথে কথা বলতে। সাথে ডেকে নিয়েছেন নীহারকে। দ্রুত হাতে নাস্তা গুছিয়ে ট্রে হাতে তুলে নিলো নীহার। পাশে দাঁড়িয়ে থাকা আদ্রতার দিকে তাকিয়ে বললো,
- কিছুক্ষণ পর চায়ের কাপগুলো ট্রেতে সাজিয়ে নিয়ে আসিস। ওড়না দিয়ে ভালোভাবে মাথা ঢেকে নিবি।

আদ্রতা মাথা নাড়িয়ে নীরব সম্মতি জানালো। মেয়ে মুখে কিছু না বললেও নীহার জানে, ওর মেয়েটা ভেতরে ভেতরে ভেঙ্গে চূড়মার হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু নীহারের কি বা করার আছে। ওর হাত পা বাঁধা। পাশের ঘর থেকে আদ্রতা দু বেণী দুলিয়ে নাচতে নাচতে রান্না ঘরে আসলো। নীহারের হাতের ট্রে থেকে এক পিচ বিস্কুট তুলে তাতে কামড় বসিয়ে বললো,
- আপুর বিয়ে কথা চলতেছে? বড় চাচাকে দেখলাম বারান্দায়।

এই মেয়েকে নিয়ে নীহারের অশান্তির শেষ নাই। পরিস্থিতি বুঝবার ক্ষমতা কোনদিন হবে কে জানে! পিরিচে সাজানো বিস্কুট টান দিয়ে তুলে নিলো। বোনের বিয়ে নিয়ে উৎসাহের শেষ নেই। অথচ এটা ভাবছে না, বিয়ে হয়ে গেলে এ বাড়িতে একা থাকবে কি করে? সারাক্ষণ বোনের ওড়না ধরে ঘুরে বেড়ানো বন্ধ হলে যদি একটু হুশ হয়। বিরক্ত ঝেড়ে নীহার বললো,
- সামনেই বিস্কুটের প্যাকেট পরে আছে। ওখান থেকে নিয়ে খা। বুদ্ধিসুদ্ধি কোনোদিন হবে তোর! ঠ্যাং ঠ্যাং করে নাচতে নাচতে বাইরে আসবি না। ঘরে চুপচাপ বসে থাক।

- আচ্ছা যাবো না। বিয়ের ডেট করতে আসছে? বলো না।

- আমি কি জানি। গিয়ে দেখি কি বলে।

- বিয়ে উপলক্ষে আমাকে কিন্তু নতুন ড্রেস কিনে দিবা।

- যা তো সামনে থেকে।

বাইরের বারান্দায় বসে কথা বলছিলো মোকাররম ও মোজাম্মেল। নীহারকে দেখে থেমে গেলো। নাস্তা এগিয়ে দিয়ে নীহার চুপচাপ মোকাররমের পাশে দাঁড়িয়ে রইলো। সে জানে এখানে তার মতামতের কোনো গুরুত্ব নেই। তবুও ওকে ডেকে এনে দাঁড় করিয়ে রাখা।

- পোলাপান মানুষের কথা সবসময় হেলাফেলা করা ঠিক না। কখন কোন কথাতে মন বিগড়ে যায় কে জানে! এমনিতেই বিয়ের আলোচনা নতুন করে করার তো কিছু নাই। মাহিনকে তোমরা চিনোই। চোখের সামনে বড় হইছে। আমার ছেলে মানে তোমাদের ছেলে। আমাদের বংশের দ্বিতীয় ছেলে। আমার যা কিছু আছে সব তো আমার দুই ছেলেই পাবে। মোকাররম তোমারও বয়স হইতেছে। আল্লাহ চায়নি, তাই তোমার ঘরে কোনো ছেলে সন্তান নাই। মনে দুঃখ নিয়ো না। এই নিয়ে আফসোস করা ঠিক হবে না। সব আল্লাহর ইচ্ছা। কিন্তু তোমাদের শেষ বয়সে দেখাশোনার জন্য কাউকে তো দরকার। মাহিনের সাথে আদ্রতার বিয়ে হইলে মেয়েটাও কাছাকাছি থাকলো আর জামাই একদিক থেকে নিজের বাড়ির লোক-ই। তোমার ব্যবসা সামলানোর কাজ তো আর মেয়েমানুষ করতে পারবে না। এগুলা ওই মাহিনকে সামলাইতে হবে।

নোলককন্যাWhere stories live. Discover now