সপ্তাহ পর্ব

14 0 0
                                    

চাকরি জীবনের শেষের দিকে এসে জনার্দান রায় প্রায় বছর খানিক সময় ভূবনভোলা থানার ওসির দায়িত্ব পালন করেছেন। দু'হাজার সালের দিকে তিনি খুব শখ করে খানিকটা জমি কিনে দুতলা একটি বাড়ি বানালেন। বাড়ির নিচতলায় পুরোটা গ্যারেজ। যেখানে দুটো জিপ অনায়াসে রাখা যায়। একদম বামদিকে সিমেন্টের ছোট একটি সিঁড়ি বানিয়েছেন। সেই সিঁড়ি দিয়ে জনার্দান রায়ের মতো স্থুল স্বাস্থ্যের অধিকারী একজন মানুষের হাঁটাচলা করা সম্ভব। দোতলায় 'এল' প্যাটার্নে ছোট তিনটি কামরা রয়েছে। মাঝখানে অল্পবিস্তর জায়গা করে নিয়েছে ড্রয়িংরুম। তিনটে কামরার জন্য একটি মাত্র বাথরুম। বাড়িতে তিনি একাই থাকতেন বলে হয়তো এই কমন বাথরুমের ব্যবস্থা। একদিন এই বাড়ি ভাড়া দিয়ে চলে যাবেন এটা জানলে হয়তো দোতলার বাকি অর্ধেকটা জুড়ে খোলা ছাদ বানাতেন না। এই খোলা ছাদে বসে জনার্দান রায়ের বেশিরভাগ সময় কাটতো। তাই হয়তো তিনি ছাদটাই একটু বেশি স্থান জুড়ে করেছেন৷ ভবনটির চারপাশ দেয়াল দিয়ে ঘেরা। বাড়ির বাইরে দূর দূর পর্যন্ত ফাঁকা মাঠ। ধু ধু বিস্তর মাঠের মাঝখানে তবুও গর্বের সহিদ দাঁড়িয়ে আছে দোতলা বাড়িটি। শহর ছেড়ে একটু দূরে অবস্থানের কারনে তার আভিজাত্যে একটুখানি ভাটাও পরেনি। বরং শহুরে বিশালবহুল বাড়িগুলোকে খুব সহজে টেক্কা দিতে পারে এই বাড়িটি।

একাকী মানুষ জনার্দান রায় কী মনে করে এমন নির্জন মাঠের মাঝে বাড়ি তৈরি করেছিলেন, তিনিই জানেন। দুহাজার দশ সালে তিনি রিটায়ার্ড করলেন, তারপর চলে গেলেন গ্রামের বাড়ি যশোর। তার শখের বাড়িটি পরে রইলো শূন্য। তবে তিনি চলে গেছেন বলেই তো আজ পরখ এই বাড়িটিতে আশ্রয় নিতে পেরেছে। এমনিতেই বাবা ইবনূল ইবতেহাজের সাথে পরখের ঝামেলার শেষ নেই। প্রতিনিয়ত তর্ক বিতর্ক চলতেই থাকে। সব কাজেই মতবিরোধ। তাই উচ্চ মাধ্যমিকের পরে পরখ আর নিজ পৈতৃক বাসস্থানে থাকতে চায়নি। ভূবনভোলা একাডেমিকে স্নাতক ডিগ্রি অর্জনের সুযোগ যখন পেয়ে গেলো, তখন একেবারে বাড়ির পাট চুকিয়েই বেরিয়ে এসেছে। কারনও দর্শাতে হয়েছে বটে৷ বাড়িতে ঠিকঠাক পড়াশোনা হচ্ছে না বলে এ যাত্রায় বেঁচে গেছে৷ তা না হলে বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ইবনূল ইবতেহাজ একমাত্র সন্তানকে কখনো চোখের আড়াল হতে দিতেন না। বর্তমানে পরখ যে খুব একটা বাবার চোখ ফাঁকি দিতে পারছে তা ভাবা একেবারেই বৃথা। একই বাড়িতে না থাকলেও ইবনূল ইবতেহাজের চোখ সর্বদা ছেলের আশেপাশেই থাকে। বাড়ি থেকে বেরিয়ে বাসযোগ্য স্থানের খোঁজ করতে গিয়ে জনার্দন রায়ের এই বাড়িটি পরখের নজরে আসে। শহুরে কোলাহল, যান্ত্রিক জীবন থেকে দূরে এমনই একটি পরিবেশ তার দরকার ছিলো। যেখানে নিজের মতো করে সময় কাটাতে পারবে, পড়াশোনা নিয়ে ব্যস্ত থাকতে পারবে। দুই বছর এই বিশাল বাড়িটিতে একাই ছিলো। তারপর ফ্লাটমেট হিসেবে যুক্ত হয়েছে তারই মতো নির্জনতার ভক্ত আরেকটি যুবক।

নোলককন্যাWhere stories live. Discover now