পঞ্চম পর্ব

8 0 0
                                    

কাঁচা কলা, কাঁচা পেঁপে,  টমেটো, শসা হামানদিস্তায় থেতলে  ধনিয়াপাতা, পুদিনাপাতার সাথে তেঁতুল দিয়ে মেখে তাতে সামান্য  মরিচ, লবণ, চিনি, সরিষার তেল দিয়ে মাখানো হচ্ছে। পড়ন্ত বিকেলে ছাদে বসে সেই মাখানো খাবে আদ্রিকা এবং আদ্রতা। জ্বরের কারনে আদ্রতার মুখের স্বাদ চলে গিয়েছে। যাই খাচ্ছে তাই তিতা লাগছে। মুখের স্বাদ ফিরিয়ে আনতে এই আয়োজন। সারাদিন ঘুরে ঘুরে সবকিছু যোগাড় করে আদ্রিকার ফেরার অপেক্ষা করছিলো আদ্রতা। বিকাল নামতেই দু'বোন ছাদে এসে গল্পের ডালা নিয়ে বসেছে। বোনের নির্দেশনা অনুযায়ী আদ্রিকা হামানদিস্তায় একেরপর এক উপকরণ দিয়ে যাচ্ছে সেইসাথে একা কলেজে যাওয়ার অভিজ্ঞতা বর্ণনা করছে৷

- কতোক্ষণ রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকার পরও একটা রিক্সা পাচ্ছিলাম না। পরে আব্বু একটা রিক্সায় তুলে দিলো। আমার যে কী ভালো লাগতেছিলো!

- একা তাহলে কলেজে যেতে পারলি! এখন থেকে রোজ একাই তো যাওয়া আসা করতে পারবি।

- অসম্ভব। একদিনেই আমার যে কতো খারাপ অবস্থা হয়েছে।

- অভ্যাস করতে হবে। আমি যখন থাকবো না তখন কি করবি?

- থাকবে না মানে? আমাকে রেখে কোথায় যাবে তুমি?

- বাহ রে! বিয়েশাদি করতে হবে তো। কোনদিন যেনো হুট করে বিয়ে দিয়ে বিদায় করে দেয়।

- মাহিন ভাইয়ার সাথে তোমার বিয়ে কথা চলছে। আমি লুকিয়ে শুনেছি। ভাইয়ার সাথে তোমার বিয়ে হলে দারুণ মজা হবে। বাড়ির পাশেই তোমার শ্বশুরবাড়ি হবে।

মাহিনের কথা উঠতেই আদ্রতা আতংকে নীল হতে হতেও নিজেকে সামলে নিলো। মাহিনকে বিয়ে করার থেকে জলন্ত আগুনে ঝাপিয়ে পরা বেশি ভালো। অত্যন্ত সাময়িকভাবে জ্বলেপুড়ে একসময় মৃত্যুর স্বস্তি পাওয়া যাবে। কিন্তু মাহিনকে বিয়ে করলে প্রতি মুহূর্তে আগুনে দগ্ধ হতে হবে। আদ্রতার সাথে চাচাতো ভাই মাহিনের বিয়ের অঘোষিত একটা আলাপ অনেকদিন ধরেই চলছে। নীহার এটা ওটা বলে এতোদিন বিয়ে ঠেকিয়ে রেখেছে। কিন্তু আদ্রতা কলেজ পেরিয়ে ভার্সিটিতে পা রাখতেই মাহিনের পক্ষ থেকে বিয়ের তোড়জোড় চলছে। ইদানীং মাহিন নিজেও আদ্রতার আশেপাশে ঘুরঘুর করে। ছোটবেলা থেকে এ বাড়িতে তার নির্বিঘ্নে যাতায়াত থাকলেও কিশোর বয়স থেকে আসা যাওয়া একপ্রকার বন্ধই ছিলো। কিন্তু ইদানীং সময় অসময়ে এ বাড়িতে এসে হাজির হয়। আদ্রতার দিকে তাকানোর ভঙ্গিমায় এসেছে পরিবর্তন। আদ্রতা প্রায়ই তাকে এড়িয়ে চলে। সে বাড়িতে এলে নীহার একটু বেশি সতর্ক থাকে। আদ্রতাকে একমুহূর্ত কাছ ছাড়া করে না। আদ্রতার দিকে তাকানো, কথা বলার চেষ্টা সবকিছুতেই কেমন একটা কামুকতা উপচে পরে। যা অনুভব করা যায় কিন্তু মুখ ফুটে অভিযোগ করার উপায় নেই। তাই সতর্ক থাকাই শ্রেয়। এমন ছেলের সাথে মেয়ের বিয়ের কথা ভাবতেই নীহারের অন্তর আত্মা কেঁপে উঠে। কিন্তু সিদ্ধান্ত স্বয়ং মোকাররম মজুমদার এবং তার ভাইদের। সেখানে নীহারের মতামতের বিন্দুমাত্র মূল্য নেই। স্ত্রী, সন্তান, পরিবারের প্রতি মোকাররম মজুমদারের উদাসিনতা থাকলেও নিজের ক্ষমতা জাহির করার সুযোগ সে কখনো হাতছাড়া করে না। সংসারের প্রতিটি কাজে তার মতামতই হবে সর্বশেষ কথা।

নোলককন্যাWhere stories live. Discover now