part - 11

277 12 4
                                    

11/"আমি মেশিনে জামাকাপড় দিতে যাচ্ছি , তোমার কিছু দেওয়ার আছে । "
মেঘলা একগাদা জামাকাপড় নিয়ে অভীকের সামনে এসে দাঁড়ায় । অভীক একটা letter type করছিল ল্যাপটপে । ও বলে "আমি স্নানে যাওয়ার আগে করে নেবো আমার গুলো । তুই নিজের গুলো করে নে । আমার কেবল একটা জিন্স ধুতে হবে । ধুয়ে নেবো আমি ।  "
মেঘলা ঠোঁট বেঁকিয়ে বলে "বেশি ঢং না করে কোথায় আছে বলো ? "
"সোফার ওপরে পরে আছে দেখ ।  "
মেঘলা সোফার ওপর থেকে জিন্সটা নিয়ে ওয়াশিং মেশিনের সামনে বসে সব জিনিসগুলো একটা একটা করে মেশিনে ঢোকাতে থাকে । অভীক এর জিন্সটা ঢোকানোর আগে পকেট চেক করে দেখে নেয় কিছু রয়ে গিয়েছে কিনা । পকেট থেকে একটা ছোট প্যাকেট পায় । প্যাকেটটা দেখে মেঘলার গালদুটো লজ্জায় লাল হয়ে যায় । ও গটগট করতে করতে অভীকের সামনে এসে জিনিসটা ওর সামনে ধরে বলে "এইটা কি ? "
অভীক ল্যাপটপ থেকে মুখ তুলে বলে "এটা তো ক...   এক মিনিট তুই জানিস না এটা কি ? "
মেঘলা নিজের লজ্জামিশ্রীত হাসি আড়াল করার চেষ্টা করে  তোতলাতে তোতলাতে বলে "হ্যাঁ জানি ... কিন্তু এই জিনিস তোমার পকেটে কেন?  "
অভীক বুঝতে পারে মেঘলা লজ্জা পাচ্ছে । ও বলে "এত লজ্জা পাওয়ার কিছু হয়নি । ওটা আমি এমনি এনে রেখেছি । In case যদি দরকার পরে যায় । আমি বলছিনা পড়বে বলে কিন্তু হতেই তো পারে সেই রাতের মত কখনো আমি আবার কন্ট্রোল হারিয়ে ফেললাম । সেদিন প্রথমবার বলে দরকার পড়েনি । কিন্তু এরপর থেকে এরকম কিছু হলে প্রটেকশন ছাড়া সমস্যা হয়ে যেতে পারে । তাই একটা রেখে দিয়েছি । For emergency ।  "।
মেঘলা মনে মনে বলে "এমন করে সেদিন রাত সেদিন রাত বলছে যেনো সেদিন রাতে কোনো খুন করেছিল । তাই দ্বিতীয়বার খুন করলে জেল হতে পারে । আমি এই ছেলেটাকে কি করে বোঝাই আমি ওকে খুব করে নিজের কাছে চাই । আমি নিশ্চিত ও আমার কষ্টের কথা ভেবেই এগোতে সাহস পায়না । নাহলে আমি যা চাই  অভী নিজেও সেটা  চায়  ।  "
হাতের প্যাকেটটা বিছানার ওপর রেখে মেঘলা চলে যায় ।
অভীক সামান্য হেসে  প্যাকেটটা বেডের পাশের ড্রয়ারে রেখে দেয় ।

মেঘলা সন্ধ্যেবেলা কলেজ থেকে ফিরে ফ্রেশ হয়ে একটা story book নিয়ে বসে । অভীক এর ফোনে মেসেজ এর আওয়াজ আসতেই ও অভীকের ফোনটা খুঁজতে থাকে । একটা সময় পেয়েও যায় । ফোনটা হাতে নিয়ে বলে "ও তো ফিল্ডে গিয়েছে ,  ফোন নিয়ে যায়নি কেনো ?  "
ফোনের লক খুলতেই দেখে IRCTC থেকে মেসেজ । মেঘলা মেসেজটা খুলে দেখে ticket confirm হয়ে গিয়েছে তারই মেসেজ ।
মেঘলা মনে মনে বলে "অভীক নেক্সট উইকে দিল্লি যাচ্ছে । টিকিটও কনফার্ম হয়ে গিয়েছে অথচ আমাকে একবার জানায়নি যে ও পরের সপ্তাহে এখানে থাকবে না । "
অভিমানে মেঘলার চোখে জল চলে আসে । ও ফোনটা বিছানায় রেখে দিয়ে নিজে ব্যালকনিতে চলে যায় । কিছুক্ষন বাদে অভীক ফিরে আসে । মেঘলাকে ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বলে "ফিল্ডে গিয়ে দেখলাম ভুট্টা পোড়া বিক্রি হচ্ছে তোর তো খুব পছন্দ তাই না । তুই খাবি কিনা জিজ্ঞেস করার জন্য ফোন করতে গিয়ে দেখি ফোনটা নিয়ে যেতে ভুলে গিয়েছি । তাই একটা নিয়েই চলে এসেছি । এতক্ষণে ঠান্ডাও হয়ে গিয়েছে হয়তো । এটাকে কি মাইক্রোওভেনে গরম করা যাবে ? "
মেঘলা না ঘুরেই উত্তর দেয় "আমি জানিনা । "
মেঘলার গলার স্বরে অভিমান রয়েছে বুঝতে পারে অভীক । ও বলে "আমি আবার কি করলাম ? "
মেঘলা উত্তর দেয় না । অভীক পেছন থেকে গিয়ে ওকে জড়িয়ে ধরে বলে "এই আমি কি করলাম বলনা ? কেনো রাগ করেছিস আমার ওপর । "
মেঘলা উত্তর না দিলে অভীক পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে ওর চুলগুলো সরিয়ে ওর গলায় কিস করতে গেলে মেঘলা ওকে সরিয়ে দেয় । অভীক অবাক হয়ে যায় । এই প্রথম ওর মেঘা ওর সাথে এরকম করছে ।
মেঘলা চলে যেতে গেলে অভীক ওর হাত ধরে ওকে কাছে টেনে নেয় । দুই হাতে ওকে আবদ্ধ করে বলে "এত রাগ তো কোনদিন করিসনি আমার ওপর । আজ কি এমন করেছি আমি শুনি । "
মেঘলা অন্য দিকে তাকিয়ে অভিমানের সুরে বলে "এক সপ্তাহ পরে কলকাতার বাইরে যাচ্ছ । শুধু কলকাতা নয় পশ্চিমবঙ্গের বাইরে যাচ্ছ আমাকে তো জানাওনি।  আমি তো বাড়ি গেলেও তোমাকে 10 দিন আগে থেকে জানিয়ে দি । তুমি কলকাতার বাইরে যাবে , আমাকে আগে থেকে জানিয়ে prepare হওয়ার সময়টুকু তো দেবে আমায় ? "
অভীক বুঝতে পারে মেঘলা ওর দিল্লি যাওয়ার কথা জেনে গিয়েছে।  ও মেঘলার কোমর জড়িয়ে বলে "আমি তো কেবল 15 দিনের জন্য যাচ্ছি সোনা । আবার ফিরে আসবো তো । "
মেঘলা অভীকের চোখের দিকে তাকিয়ে বলে "পনেরো দিন হোক বা এক বছর । টিকিট করে ফেলেছো অথচ আমায় জানাওনি । তুমি জানোনা এখন  তোমাকে একদিন ছেড়ে থাকতে আমার কষ্ট হয় । পনেরো দিনের জন্য যাচ্ছ যাও । আমাকে আগে থেকে জানাবেনা না তুমি ?  " মেঘলার কথা শুনে অভীকের খারাপ লাগে । "আমি তো জানাতাম তোকে । তোকে না জানিয়ে কি যেতাম ।  "
"কবে জানাতে যেদিন ট্রেন আছে সেদিন সকালে ? "
"দুদিন পরে তোর জন্মদিন মেঘা , তাই আমি এই খবরটা দিয়ে তোর মন খারাপ করাতে চাইনি  বিশ্বাস । সত্যি বলছি তোর জন্মদিনটা পেরিয়ে গেলেই বলে দিতাম । রাগ করিস না সোনা প্লিজ । "
"তুমি ছাড়ো  তোএখন আমায় আমার ভালো লাগছে না । "
এই বলে মেঘলা অভীকের থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে চলে যায় । অভীক বোকার মত  দাঁড়িয়ে থাকে । প্রেমিকার রাগ বোঝা বড্ড কষ্টদায়ক । আর না বুঝতে পারলে তার থেকেও বেশি কষ্ট থাকে কপালে  ।
খাওয়া দাওয়া শেষে অভীক বিছানায় অপেক্ষা করছে মেঘলার জন্য । অনেক দেরি হয়ে গেলেও মেঘলা আসছে না দেখে ও উঠে পাশের ঘরে গিয়ে দেখে মেঘলা কোলবালিশ জড়িয়ে ধরে শুয়ে পড়েছে ।
"এত রাগ হয়েছে যে আমার পাশে শোয়া যাবে না আজ । "
অভীক এর প্রশ্নে মেঘলা বলে " এত দিনে একটা বদ অভ্যাস হয়ে গিয়েছে । পনেরোদিন থাকবে না তাই এখন থেকেই প্র্যাক্টিস করছি । "
"অত প্রাকটিস করতে হবে না । ওই ঘরে চল বলছি । "
"আমি যাবো না । আমি আজ এখানেই ঘুমাবো । "
অভীক উপায় না পেয়ে , মেঘলাকে কোলে তুলে পাশে ঘরে নিয়ে যায় । মেঘলা চাদর জড়িয়ে পাশ ফিরে শুয়ে পড়ে । অভীক কি করবে বুঝতে পারেনা । ওকে হাত দিয়ে নিজের দিকে ঘুরিয়ে ওর পাশে শুয়ে ওর গায়ে পা তুলে দেয় ।
"সরি , ভুল হয়ে গিয়েছে আমার । এবারের মতো ক্ষমা করে দে প্লিজ । "
মেঘলা চুপ করে থাকে । ওর চোখে জল । অভীক পুরো ভরটা বিছানার ওপরে দিয়ে মেঘলার ওপরে আধশোয়া হয়ে শুয়ে মেঘলার চোখের দিকে তাকিয়ে বলে "তোর জন্মদিনটা খারাপ করবো না বলে কথাটা তোর থেকে লুকিয়ে ছিলাম আমি । এত রাগ করার কি আছে শুনি । "
অভীক মেঘলার ঠোঁটে আলতো করে চুমু দেয় । মুখে মৃদু হাসি নিয়ে বলে "আর রাগ করে থাকিস না প্লীজ । "
মেঘলা শান্ত গলায় বলে "অনেক রাত হয়ে গিয়েছে । ঘুমিয়ে যাও । "
অভীক বলে "তোকে বুকের মধ্যে জড়িয়ে না ধরলে ঘুম আসে না তো । "
এই বলে মেঘলার গলায় মুখ ডুবিয়ে দেয় । অভীক মেঘলার গলায় বেশ কয়েকটা চুমু দেওয়ার পরেও মেঘলা react করছে না দেখে  মেঘলার মুখের দিকে তাকায় । মেঘলা স্থির দৃষ্টিতে ওপরের দিকে তাকিয়ে  আছে । কোনো হেলদোল নেই । অভীক তৎক্ষণাৎ মেঘলার ওপর থেকে উঠে পাশে রাখা শার্টটা গায়ে গলিয়ে নিয়ে  বোতাম লাগাতে লাগাতে বলে "আজ নিজেকে খুব ছোট মনে হলো মেঘা । এক মুহূর্তের জন্য মনে হলো আমি তোকে জোর করছি । বিশ্বাস কর  তোর শরীরের জন্যই তোকে ভালোবেসেছি এমনটা নয় । তবে যতই হোক আমি ছেলে তো , ভালোবাসার মানুষ সামনে থাকলে নিজেকে আটকে রাখতে পারি না । মেয়েদের যতটা সহ্য ক্ষমতা থাকে ছেলেদের থাকে না । কিন্তু তবু চেষ্টা করি , রোজ করি যতটা সম্ভব তোর আর আমার মধ্যে লিমিট রাখার ।  হয়তো খানিক সফলও হয়েছি আমি । তাইতো বিগত সতেরোদিনে কেবল মাত্র একবারই আমরা.... । এই একবার টা যেনো সহজে দুইবারে পরিণত না হয় তার জন্য রোজ রাতে নিজের সাথে লড়াই করি আমি । ভেবেছিলাম তোকে একটু আদর করলে হয়তো তোর রাগ ভেঙে যাবে । কিন্তু আমার এই আদরটুকুকে তুই জবরদস্তিতে পরিণত করবি  আমি ভাবিনি । অনেক রাত হলো ঘুমিয়ে পড় ।  "
অভীক অপমানে অভিমানে পাশের ড্রয়ার থেকে সিগারেটের প্যাকেটটা  বের করে  বাইরে চলে যায় । আজ বহুদিন পর এক বুকের বামপাশটায় খুব ব্যাথা করছে । স্বভাবত অভীকের খুব একটা কষ্ট হয়না । যতদিন ছাত্র রাজনীতির সাথে জড়িয়েছে ততদিন অপমানবোধটাও কমেই গিয়েছে । কিন্তু ভালোবাসার মানুষের এমন আচরণে যেনো কষ্ট এবং অপমানবোধ বুকের মধ্যে একসাথে এসে জড়ো হয়েছে ।
ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে সিগারেট এর ধোঁয়া ওড়াচ্ছিলো  অভীক । আচমকা পেছন থেকে দুটো হাত ওকে জড়িয়ে ধরে । নিজের পিঠে মেঘলার বুকের নরম স্পর্শ টের পায় অভীক । প্রেমিকার স্পর্শ প্রেমিক কে মুহূর্তের মধ্যে দুর্বল করে দিতে পারে কিন্তু প্রেমিকার প্রত্যাখ্যান যে পরিমাণ কষ্ট প্রেমিককে দেয় তা কি মুছে দিতে পারে ?
জানতে হলে পরের পর্বের জন্য ওয়েট করতে হবে ।

প্রেমিকা Where stories live. Discover now