Part - 38

189 10 2
                                    

38/দুই তিনদিন কেটে গিয়েছে । আজ অভীকের অফিস নেই , আজ আবার মেঘলা তাড়াতাড়ি উঠে গিয়েছে অভীক এখনো ঘুমাচ্ছে । অঞ্জনা ঘরের মধ্যেই রয়েছে । মেঘলা,  অঞ্জনা যেই ঘরে থাকে সেই ঘরের দরজা নক করে ভেতরে আসে ।
"অভি এখন উঠবে না , আমি নিজের জন্য  চা বানাচ্ছি । তুই খাবি ? "
অঞ্জনা মৃদু হেসে বলে "ওকে... "
মেঘলা আড়চোখে অঞ্জনার ঠোঁট আর গলার দিকে তাকায় , ঠোঁটটা প্রায় ঠিক হয়ে  এসেছে,  গলার দাগগুলো ঠিক হতে  খানিক সময় নেবে ।  মনে মধ্যে কি সব হিসেব নিকেষ করে শান্ত ভাবে জিজ্ঞেস করে "এখন কেমন আছিস তুই ? শরীর ঠিক আছে এখন ? "
"হ্যাঁ আগের থেকে বেটার আছি । আর দুতিনদিন হলে গলার দাগ গুলোও আবছা হয়ে যাবে মনে হয় । থ্যাঙ্ক ইউ রে  তোরা না থাকলে কি যে  করতাম আমি । "
মেঘলা মৃদু হেসে বলে "আরে কোনো ব্যাপার না ।আমি তো ফ্রেন্ড আর অভিও তো তোকে বোনের মত ভালবাসে । তুই বস আমি তোর জন্য চা নিয়ে আসছি ।  "
মেঘলার সব কথা শুনে ভালো লাগলেও , শেষের কথাটা শুনেই যেনো অঞ্জনার মুখের রং উড়ে যায় ।
চা খাওয়া বলে মেঘলা স্নান করতে যায় । স্নান সেরে শরীরে একটা টাওয়েল জড়িয়ে  মাথার চুল মুছতে মুছতে বাইরে বেরিয়ে আসে । অঞ্জনা সোফাতেই বসেছিল , মেঘলাকে এমন ভাবে স্নান সেরে বেরিয়ে আসতে দেখে ও বিস্মিত চাহনিতে তাকায় । মেঘলা মাথা মুছতে মুছতে ঘরে ঢুকে দরজাটা ভেতর থেকে আটকে দেয় ।
অভীক তখন গভীর ঘুমে মগ্ন , সারা সপ্তাহের ক্লান্তি মেটানোর জন্য শনিবার আর রবিবারটাই তো পায়।  মেঘলা তোয়ালেটা চুলে জড়িয়ে অভীককে ডাকে "অভি , এই অভি ওঠো  দশটা বাজে... "
অভীক ঘুম জড়ানো কন্ঠে বলে "বাজুক... তুমিও ঘুমিয়ে পড়ো... "
মেঘলা ঠোঁট কামড় বলে "উঠবে না তো ? দাঁড়াও দেখাচ্ছি মজা ... "
এই বলে চুল থেকে তোয়ালেটা ছাড়াতেই  ভেজা চুলগুলো ঘুমন্ত অভীকের মুখের ওপরে বোলাতে থাকে । অভীক মুখে সুড়সুড়ি লাগল অভীক চোখ বন্ধ করেই হাত দিয়ে ওগুলো সরানোর চেষ্টা করে । মেঘলা খিলখিলিয়ে হেসে ওঠে । অভীক চোখ না খুললে  মেঘলার দুষ্টুমি আরো বাড়তে থাকে , ভেজা  চুলগুলো ওর  মুখের ওপরে আরো বেশি করে বোলাতে থাকে ।
অভীক হাত দিয়ে চুলগুলো সরিয়ে ধুর... বলে চোখে খুললে দেখে ভেজা  খোলা চুলে স্নানের পরের স্নিগ্ধ রূপে ওর প্রেয়সী ওর মুখের দিকে চেয়ে আছে , স্নান পরবর্তী তার মোহময়ী রূপ শরীরে কেবল একটি গোলাপী রঙের তোয়ালে জড়ানো , ওর দিকে সামান্য ঝুঁকে নিস্পলক চেয়ে আছে , ভেজা চুলের থেকে কয়েকফোঁটা জল  মুক্তর দানার মত অভীকের উম্মুক্ত বুকের ওপরে পড়ছে । মেঘলার বুকে জড়ানো তোয়ালের ওপর দিয়ে তার বেশ খানিকটা বিভাজিকা দৃশ্যমান । অভীক  কয়েকমিনিট ধরে প্রেয়সীর মুখের দিকে নিস্পলক চেয়ে থাকার পরে ঘুম জড়ানো নেশাতুর কণ্ঠে বলে "আয়ে হায় কেয়া নাজারা হে... "
মেঘলা ওর ইশারা বুঝতে পেরে  সোজা হওয়া দাঁড়িয়ে তোয়ালেটা  আরেকটু তুলে নিয়ে লাজুক সুরে বলে  "অনেক ঘুমিয়েছে ওঠো এবার ... ব্রেকফাস্ট কখন করবে শুনি... "
মেঘলা চলে যেতে গেলে অভীক উঠে বসে ওর হাতটা ধরে টান মারতেই মেঘলা অভীকের কোলের ওপরে এসে পরে । অভীক মেঘলাকে নিজের কোলের ওপরে বসিয়ে ওর পিঠটাকে নিজের বুকে ঠেকিয়ে ওকে পেছন থেকে শক্ত করে ধরে ওর কাঁধে চুম্বন করে বলে "গুড মর্নিং মাই লাভ..."
মেঘলার সারা শরীরে শিহরন খেলে যায় ।অভীক ওকে যতবার ছোঁয়, ততবারই অভীকের ছোঁয়া ওর নতুন লাগে । মেঘলা কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে বলে "অভি... দেরি হয়ে যাচ্ছে , অঞ্জনা বাইরে বসে আছে । কি ভাববে বলোতো ... "
অভীক মেঘলার পিঠের ওপর থেকে চুল গুলো সরিয়ে এক সাইড করে দিয়ে মেঘলার গলা আর ঘাড়ে মধ্যবর্তী স্থানে মুখ ডুবিয়ে দিয়ে বলে "ও কি ভাববে সেটা আমরা কেনো ভাববো? ভাববে আমরা রোমান্স করছি । ভাবুক গে .."
এই বলে মেঘলার গলায় অভীক নিজের ঠোঁট আর জিভ স্পর্শ দিতে থাকে। মেঘলা কেঁপে উঠলো অভীক ওকে আরো চেপে ধরে ।
অভীক এর হাত দুটো তোয়ালের ওপর দিয়েই মেঘলার বক্ষযুগলের ওপরে জায়গা করে নেয় । মেঘলা বলে "আমার স্নান হয়ে গিয়েছে অভি... "
অভীক মেঘলার কানের লতিতে আলতো করে কামড় দিয়ে ওর বক্ষযুগলের আরেকটু শক্ত করে চেপে ধরে হিসহিসে গলায় বলে "তুই আজ এত এক্সকিউজ দিচ্ছিস কেনো বলতো আমায় .... এতদিন আমার থেকে দূরে থাকতে কষ্ট হচ্ছে না তোর ? কতদিন হয়ে গেলো আমাকে একটু ভালোবাসিস নি ...  তোর শরীর খারাপ ছিল বলে আমি কিছু বলিনি । এখন তো কোনো বাধা নেই সোনা ... "
মেঘলার টাওয়েল এর কোনটা যেখানে গুঁজে রাখা ছিল  অভীক সেই জায়গায় হাত নিয়ে গেলে মেঘলা ওর হাতটা ধরে নিয়ে ওকে বাঁধা দেয় । পেছন ঘুরে অভীকের দুই হলে হাত রেখে ওর কপালে কপাল ঠেকিয়ে বলে "এখন নয় .... আরেকটু ধৈর্য ধরো প্লিজ... "অভীক ওর চোখের দিকে তাকিয়ে ওর নাকে নাক ঘষে বলে "বেশ ... ধরবো ধৈর্য... কিন্তু ধৈর্যের ফল মিষ্টি হবে তো ? "
মেঘলা চোখ টিপে বলে "এতদিন কেমন পেয়েছ ধৈর্যের ফল? "
অভীক দাঁত বের করে হেসে বলে "অনেক মিষ্টি.... চিনির থেকেও বেশি.. "
মেঘলা হেসে বলে "তাহলে এবারে তার থেকেও বেশি মিষ্টি হবে । "
অভীক ঠোঁট উল্টে বলে "আমরা যদি ওর সামনে দিয়েই রোমান্স করি তাহলে অঞ্জনা কি ভাববে ? "
মেঘলা এক চোখ মেরে বলে "অঞ্জনা কে ভাববে সেটাও যদি আমরা ভাবি তাহলে অঞ্জনা কি ভাববে ? "
অভীক মেঘলার কোমর জড়িয়ে ধরে হেসে  বলে " আমার ডায়ালগ আমাকেই ... যায় হোক বড়ো হয়ে গিয়েছিস তুই "
মেঘলা অভীকের কপালে টোকা মেরে বলে "এবার  চুপচাপ উঠে ফ্রেশ হতে না গেলে বকাও দেবো । "
অভীক হেসে বলে "যায় .... "
অভীক চলে যেতে গেলে মেঘলা পিছু ডাকে "শোনো... "
অভীক দরজা খুলতে গিয়েও পেছন ঘুরে বলে "জ্বি ম্যাডাম ... "
"দাঁড়ি গুলো একটু করে ট্রিম করে নিও ... খুব খোঁচা মারছে তো ... "
অভীক গালে হাত বুলিয়ে বলে "ক্লিন সেভ  করে নেবো... "
মেঘলা ঠোঁট উল্টে বলে "ক্লিন করলে খুব বাজে দেখাবে , এত্তুখানি করে কাটলেই হবে... "
অভীক চোখ ছোট ছোট করে বলে "এটটুখানি? "
মেঘলা দুই আঙ্গুল দিয়ে অল্প পরিমাণ দেখিয়ে হেসে   বলে  "হ্যাঁ এই এত্তুখানী.. "
অভীক হাসতে হাসতে বলে "পাগলী... "
অভীক দরজা খুলে অঞ্জনাকে  দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে চমকে যায় । হাসতে হাসতে থেমে গিয়ে বলে "তুই এখানে ? "
অঞ্জনা থতমত খেয়ে বলে "না মানে ... সোফায় বসেছিলাম , এক্ষুনি উঠে ঘরের দিকে যাচ্ছিলাম হঠাৎ তুমি বেরিয়ে এলে তাই চমকে গেছি । "
অভীক একটু খটকা লাগলেও অভীক স্বাভাবিক হয়ে বলে "আচ্ছা ... যা তাহলে তুই ঘরে । "
অভীক খালি গায়ে একটা বারমুডা পরে ছিল ।   অঞ্জনা ওর দিকে এখনও তাকিয়ে আছে দেখে অভীক বলে "কি হলো ? ঘরে যাচ্ছি বললি যে ? যা... "।
অঞ্জনা শুকনো ঢোক গিলে বলে  "অভীক দা , বলছি  আজকের ব্রেকফাস্টটা আমি বানায়.. "
অভীক বলে "তা কি করে হয় তুই তো আমার গেস্ট...  আমি স্নানে যাচ্ছি , মেঘা বানিয়ে নেবে । "
মেঘলা ভেতরে রেডী হচ্ছিল বাইরে থেকে ওদের গলার আওয়াজ পেয়ে হাঁক ছাড়ে "কি হলো অভি.... "
"কিছু না ... এমনি .."
অঞ্জনা কিছু না বলে চলে যায় । অভীক ভ্রু  কুঞ্চিত  করে ওর দিকে তাকায় আর মনে মনে বলে "অঞ্জনা এমন অদ্ভুত বিহেভ কেনো করছে ? "।

প্রেমিকা Where stories live. Discover now