Part - 28

192 7 2
                                    

28/নতুন সকাল , নতুন ভাবে সবকিছু শুরু করার দিন শুরু । মেঘলার যখন ঘুম ভাঙ্গলো তখন ভোর সাড়ে চারটে । মেঘলা চোখ খুলে ঘুমন্ত অভীকের মুখের দিকে তাকায় । চাদরের তলা থেকে হাতটা বের করে অভীকের গালে রাখে । মনে মনে বলে "এত রাগ , এত তেজ ... অথচ ঘুমিয়ে গেলে সব উধাও । মা বলে শিবের মাথায় জল ঢাললে নাকি শিবের মত বর পাওয়া যায় , কিন্তু কোনোদিন তো আমি  শিবরাত্রির উপোশ করিনি, তাহলে তোমায় পেলাম কি করে শিববাবু ।  আগের জন্মে নিশ্চিত কোনো ভালো কাজ করেছিলাম।  নাহলে তোমাকে পেলাম কি করে । অন্য কেউ হলে হয়তো হাল ছেড়ে দিত , আমার স্মৃতি ফিরবে না ভেবে হয়তো নতুন কাউকে খুঁজে নিত । হয়তো জোর করে আমাকে মনে করানোর চেষ্টা করতো । কিন্তু তুমি .... তুমি এমন কেনো অভী ... দিনের পর দিন নিজে কষ্ট পেয়েছ তবু আমার কষ্ট হবে ভেবে আমাকে মনে করানোর চেষ্টা করোনি  যে আমি তোমার... । শরীরের কষ্টের চেয়ে যে মানসিক কষ্ট বেশি যন্ত্রণা দেয় এটা কেনো বুঝলে না তুমি ? এরপরে তোমাকে ভুলে যাওয়ার চেয়ে যেনো আমি মরেই যাই । "
মনে মনে এই সব ভাবতে ভাবতে মেঘলা অভীকের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে । অভীক একটু নড়ে উঠলে মেঘলা ওর গাল থেকে হাতটা সরিয়ে নেয় । তার পরে অভীককে  জড়িয়ে ধরে অভীকের থুতনির তলায় মাথা ঢুকিয়ে  গলায় মুখ গুঁজে  আবার  ঘুমিয়ে পড়ে ।
সকাল আটটায় মেঘলার ঘুম ভাঙ্গলো । উঠেই সামনের দেওয়ালে দেখে একটা স্টিকি নোট লাগানো "একদম প্যানিক করবি না , আমি কোথাও যাইনি , ফ্রিজে বাজার নেই তাই বাজার করতে এসেছি । একটু পরেই ফিরে আসবো । আজ রবিবার , সকাল সকাল বাজার বসে । স্নান করে নিস । "
মেঘলা মৃদু হসে । মনে মনে বলে "কত ভাবে ছেলেটা আমাকে নিয়ে । "
তারপর বিছানা ছেড়ে বাথরুমে চলে যায় ।
বাথরুমে ঢুকে প্রথমেই লক্ষ্য করে অ্যাশ ট্রে টা  । পোড়া সিগারেট এর টুকরোয় ভর্তি । মেঘলার মনে কষ্ট হয় । ও জানে অভীক দিনে চারটের বেশি সিগারেট খাইনা  । কিন্তু যখন কোনো কিছু নিয়ে খুব চিন্তায় থাকে কত গুলো শেষ করে ফেলে হিসেব থাকেনা ।  চন্দন বাঁধা দেবে বলেই হয়তো বাথরুমে খেত । মেঘলার কষ্ট হয় খুব , এই কয় মাসে কত কষ্ট পেয়েছে ওর প্রিয় মানুষটা । আনমনে  ব্রাশ করে । শাওয়ার চালিয়ে বাথরুমের  বড়ো আয়নাটার সামনে দাঁড়ায় । নিজে ভেজা শরীরটা দেখে আর ভাবে "স্মৃতি কেনো হারায় ? স্মৃতি হারিয়ে গেলেও প্রিয় মানুষের ছোঁয়া গুলো মনে থাকেনা কেনো ? তাহলে তো আমি আমার অভিকে ভুলে যেতে পারতাম না ।  "
মেঘলা অনেকক্ষণ ধরে স্নান করে একটা নী লেন্থ স্লিভলেস one piece পরে বেরিয়ে এসে দেখে অভীক রান্নাঘরে  কি সব কাটাকুটি করছে । মেঘলা গিয়ে ওকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে ওর পিঠে মাথা রাখে । অভীক বলে "কাল থেকে তো আবার আমার অফিস... আজ বাড়িতে থাকবি না  কোথাও বেরোবি ? "
মেঘলা অভীকের পিঠে অনেকগুলো চুম্বন করে বলে "আজ কোথাও যাবো না । বাড়িতেই  থাকবো , তুমি কোনো কাজ রেখো না যেনো আজ । "
অভীক গাজর কাটতে কাটতে বলে "হাতে সেরকম কোনো কাজ নেই । কিন্তু সদ্য সদ্য ক্যাম্পাস ইলেকশনটা হলো , বাচ্চাগুলো ডাকলে একবার যেতে হতে পারে । "
"তুমি তো এখন ওখানকার স্টুডেন্ট নও , তুমি যাবে কেনো ক্যাম্পাসের কাজে । "
অভীক মৃদু হেসে বলে "চাইলেই কি দায়িত্ব থেকে ছাড়া পাওয়া যায় বাবু ... ছেলেগুলো নতুন দায়িত্ব পেয়েছে। হাতে ধরে শিখিয়ে দিতে হবে না ? এত বড় দায়িত্ব পেয়েছে , কাজ করতে হবে তো ওদের । যারা ওদের জিতিয়েছে তাদের প্রতি একটা দায়িত্ব আছে তো । "
মেঘলা বলে "বেশ তাহলে , ডাকলে যেও..  না ডাকলে যাবে না কিন্তু । "
অভীক হেসে বলে "বেশ। "
খাওয়ার শেষে মেঘলাকে টেবিল মুছতে দেখে অভীক তাড়াহুড়ো করে আসে, হাতের কাপড়টা কেড়ে নিয়ে বলে  "কি করছিস তুই ? "
"কেনো টেবিল মুছছি..."
"আগে সুস্থ হয়ে উঠবে তারপর কোনো কাজ করার কথা ভাববি ... যা গিয়ে সোফায় পা তুলে বস । "
"সব কাজ তুমি একাই করবে নাকি । আমি কি করবো তবে।  "
"যতদিন না পুরোপুরি সুস্থ হচ্ছিস তোর কাজ কেবল আমাকে ভালোবাসা ।আর কিছু নয় । মেঘলা মুখ ফুলিয়ে বসে থাকে । "
অভীক টেবিল মুছে কাপড়টা ধুয়ে , নিজে মুখ ধুয়ে বারান্দায় আসলে মেঘলা একটা  তোয়ালে দিয়ে পরমযত্নে  অভীকের মুখটা মুছিয়ে দেয় । অভীক ভালোবাসা ভরা চাহনিতে  মেঘলার দিকে তাকায় ।

প্রেমিকা Where stories live. Discover now