Part - 37

158 7 1
                                    

37/অচেনা জায়গা তাই একটু তারাতারি  ঘুম  ভেঙে গিয়েছে অঞ্জনার । বিছানা ছেড়ে দরজা দিয়ে বেরিয়ে দেখে ব্যালকনির ফাঁকা দিকটায় অভীক পাশ আপস করছে । কালো ভেস্ট আর নীল ট্রাকশুট পড়ে । হাতের পুরুষালি পেশী গুলো অভীক যখন  বুকটাকে মেঝের দিকে নামাচ্ছে তখন প্রসারিত এবং অভীক যখন ওপরে  ওঠাচ্ছে তখন সংকুচিত হচ্ছে । অভীকের কপালের দুপাশ দিয়ে ঘাম ঝরছে । পুশ আপ হয়ে গেলে অভীক উঠে দাঁড়িয়ে ব্যালকনির ওপরে একটা পা তুলে লেগ স্ট্রেচিং করে , একবার এই পা একবার ওই পা করতে থাকে । সেটাও হয়ে গেলে পাশেই রাখা বোতলটা থেকে পানীয়টা ঢকঢক করে খেয়ে নেয় , বোতলটাই জল ছিল নাকি অন্য কোনো হেল্থ ড্রিংক তা অঞ্জনার জানা নেই । অঞ্জনা লক্ষ্য করে জল খাওয়ার সময় অভীকের গলার অ্যাডামস অ্যাপেল যখন ওঠানামা করে ওকে বড্ড আকর্ষণীয় লাগে ।

অঞ্জনা অভীকের থেকে চোখ সরিয়ে এরপর পাশের ঘরটায় উঁকি দিয়ে দেখে মেঘলা হাত পা ছড়িয়ে  পুরো বিছানা জুড়ে ঘুমাচ্ছে ... । মেঘলাকে  দেখে অঞ্জনা মনে মনে বলে "তুই খুব লাকি মেঘা ... "।
ওদিক থেকে পায়ের আওয়াজ পেলে অঞ্জনা দরজার কাছ থেকে সরে যায় । অভীক তোয়ালে দিয়ে ঘাম মুছতে মুছতে এদিকে আসছিলো , অঞ্জনাকে দেখে বলে "তুই উঠে পড়েছিস ? "
"হ্যাঁ... ঘুমটা ভেঙে গেলো ..."
অভীক হেসে বলে "তুই একটু  বস, আমি মেঘাকে তুলে দিয়ে তোদের জন্য কফি বানিয়ে দিচ্ছি । "
অঞ্জনা একটু  অবাক হয়ে বলে "তুমি কফি বানাও ? "
অভীক হাত দিয়ে মাথার চুলগুলো ঠিক করতে করতে বলে "হ্যাঁ... ওর এত তারাতারি ঘুম ভাঙ্গে না । এখন উঠে আধা ঘন্টা সোফায় বসে বসে ঢুলবে , তবে ম্যাডামের যেদিন কাজের  নেশা  লেগে যায়  সেদিন আমাকে একটা কাজেও হাত দিতে দেয় না । আমার হাতের কফি খুব ভালোবাসে তো তাই কফিটা আমিই বানাই  l  তুই ঘরে বসে অপেক্ষা কর আমি ডেকে নেবো.."
অঞ্জনা দুদিকে মাথা নেড়ে বলে "আচ্ছা ... "
অভীক নিজের ঘরে চলে যায় , অঞ্জনা দরজার আড়াল দিয়ে ওদের দেখে "এইযে ম্যাডাম উঠুন ... আজকে আমাকে একটু তাড়াতাড়ি ওদিকে যেতে হবে..  "
মেঘলা আরেকটু ঘুর শুয়ে বলে "উম্ম হুমম আমি এখন  উঠবো না । "
অভীক ওকে ঝাঁকিয়ে বলে "বেশ উঠিস না , আমি কফি বানিয়ে ফ্লাক্সে রেখে অফিস চলে যাচ্ছি তবে ... "
মেঘলা তিড়িং করে উঠে বসে , ঘুম ঘুম চোখে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বলে "এত তাড়াতাড়ি অফিস যাবে মানে? কটা বাজছে ? "
অভীক বিছানায় হাঁটু ভাঁজ করে বসে বলে "তোকে ওঠানোর জন্য বললাম "
মেঘলা উঠে অভীকের ঠোঁটে আলতো করে ঠোঁট ছুঁইয়ে ওর গলা জড়িয়ে ধরে স্বপ্ন  দেখতে শুরু করে । অভীক ওর পিঠে হাত রেখে বলে "এই দেখো , ঘোড়া তো এমনই এমনি বদনাম , ঘোড়ার থেকেও তুই একধাপ এগিয়ে , জড়িয়ে ধরেও ঘুমায় মানুষ? "
মেঘলা অভীককে আরেকটু ভালো করে জড়িয়ে চোখ বন্ধ করে বলে "চুপ করো একটু , আমি আরেকটু ঘুমিয়ে নিই।"
এই সবটাই  অঞ্জনা দরজা থেকে দেখছিল । অভীক মেঘলাকে কোলে তুলে বাইরেই আসছে দেখে দরজার কাছ থেকে সরে যায় । অভীক ঘুমে ঢুলে পড়া মেঘলাকে সোফার ওপরে বসিয়ে বলে "আমি কফি বানাতে যাচ্ছি , কফি বানানোর আগে তুই যদি ব্রাশ করতে না যাস তাহলে ঠান্ডা কফি খাবি ... অঞ্জনা কখন উঠে পরেছে আর তুই ... "
মেঘলার ঘুম যেনো উধাও হয়ে যায় , অবাক হয়ে বলে "অঞ্জনা উঠে পরেছে ? "
"হুমম তুইও উঠে পড় , আমি কফি বানিয়ে স্নানে যাবো ... আজ একটু তারাতারি অফিস যেতে হবে সোনা ... আজ আমার এক সিনিয়র ক্লাইন্ট আসবে বাড়িতে বাড়িটা একটু গুছিয়ে রাখিস কেমন । "
মেঘলা দুদিকে মাথা নেড়ে বলে "আচ্ছা , তোমার তো তাড়া আছে ... তাহলে কফি খেয়ে ব্রেকফাস্ট টা আমি বানিয়ে দি আজ ....  "
অভীক মৃদু হেসে বলে "okk... "
অভীক কিচেনে চলে যায় । মেঘলা সোফা থেকে নেমে গুটি গুটি পায়ে বাথরুমে আসে । ব্রাশ করতে করতে আয়নার দিকে তাকিয়ে ভাবে আজ সারাদিনে কি করে বাড়িটাকে সুন্দর রাখবে । এইসব ভাবতে ভাবতেই মেঘলা মনে মনে ভাবে "অঞ্জনা তো আমারই বন্ধু, তবু ও এখানে থাকছে সেটা আমি মেনে নিতে পারছিনা কেনো ? ওর ওপর আমার এত রাগ কেনো হচ্ছে ?  "
মেঘলা বাথরুম থেকে বেরিয়ে কিচেনে যায় । অভীককে পেছন  থেকে জড়িয়ে ওর পিঠে মাথা রাখে । অভীক ওর হাতের ওপর হাত রেখে বলে "কফি রেডী ম্যাডাম ..."।
তিনজনে কফি খায় ,  অভীক সময়মতো  অফিস বেরিয়ে যায় , অঞ্জনা আর মেঘলা আজ কেউই ক্লাসে যায়না । বিকেল হতেই মেঘলা আর অঞ্জনা  একটু বাইরে যায় ফুল কিনতে । বাড়ির ফ্লাওয়ার ভাস গুলোতে ফুলগুলো দু-তিন দিনের পুরনো হয়ে গিয়েছে ।

ঠিক সন্ধেবেলা  অভীক তার এক কলিগকে নিয়ে বাড়িতে আসে । মেঘলা আর অঞ্জনা ঘরের মধ্যে  বসেছিল অভীক আর সেই কলিগকে নিয়ে বারান্দায় বসেই কাজ সেরে নেয় ।মাঝে মেঘলা এসে একবার কফি আর স্ন্যাকস দিয়ে যায়  , অভীক এর কলিগ হা করে মেঘলাকে দেখে । অভীক তা লক্ষ্য করে চোখের ইশারায় মেঘলাকে ঘরে যেতে বলে।মেঘলা এক মুহূর্তও না দাঁড়িয়ে ভেতরে চলে যায় ।ছেলেটা অর্থাৎ অজিত  presention টা দেখতে দেখতে বলে "ভাই ওটা তোর গার্লফ্রেন্ড না বউ ?"
অভীক ল্যাপটপের দিকে তাকিয়েই বলে "দুটোই...তার চেয়েও বেশি কিছু .. "
অজিত অবাক হয়ে বলে "মানে ? বুঝলামg না ... "
অভীক বলে "আপাতত তুমি প্রেজেন্টেশনটা ভালোভাবে বুঝলেই চলবে ... কাল বস ফাইনাল দেখবেন বলেছেন । "
অজিত মুচকি হেসে বলে " গার্লফ্রেন্ডই হবে , দেখে বউ মনে হচ্ছে না , উম্ম মারাত্বক দেখতে কিন্তু ... যা ফিগ.. ”
অভীক চোয়াল শক্ত করে বলে "অজিতদা, মুখ সামলে একটু। আর ওকে নিয়ে কোনো কথা নয় প্লিজ.... "
অজিত ঠোঁট উল্টে বলে "বাব্বা এতো পজেজিভনেস, তেতে যাচ্ছিস তো... লিভ ইন এই তো থাকিস ...আমি তো খারাপ কিছু বলিনি ... ফিগার ভালো তাই বললাম ..."
অভীক হাতের মুঠো বন্ধ করে দাঁতে দাঁত চেপে সহ্য করছিল এবার আর পারেনা । ধপ করে ল্যাপটপটা বন্ধ করতেই অজিত চমকে ওঠে  "আস্তে ভাই ,ল্যাপটপ ওটা ... ভেঙে যাবে তো ... Presentation তো বাকি ,বন্ধ করলি কেন ? "
অভীক ফাইলগুলো ব্যাগে ঢোকাতে ঢোকাতে বলে "অজিতদা তুমি আজ এসো বুঝলে , তোমাকে সম্মান করি বলে এখান অবধি এনেছিলাম, কিন্তু এই মুহূর্তে আমি আর জাস্ট নিতে পারছি না ,  "
অজিত ভ্রু কুঞ্চিত করে বলে "তুই কি এনি হাউ আমাকে তাড়িয়ে দিচ্ছিস? "
অভীক চোয়াল শক্ত করে ফাইলগুলো অজিতের হাতে দিয়ে বলে "হ্যাঁ দিচ্ছি, বয়সে সিনিয়ার বলে  এখনও গায়ে হাত দিইনি । ভালই ভালই বলছি এখন এসো ... প্রেজেন্টেশন আমি দেখে নেবো । "
অভীক চোখ দেখে অজিত শুকনো ঢোক গিলে বলে "তুই কিন্তু বাড়িতে ডেকে আমায় অপমান করলি ভাই..."
অভী দাঁতে দাঁত চেপে বলে "তুমি যাবে ? নাকি...."
অজিত ভয়ে ভয়ে পালায় , কিন্তু দরজা থেকে বেরিয়ে যাওয়ার আগে পেছন ঘুরে একবার অদ্ভুত দৃষ্টিতে অভীকের দিকে তাকায় । অভীক ডান হাতের  বুড়ো আঙুল আর তর্জনী দিয়ে নিজের  দুই চোখের মাঝখানে নাকের  যেই অংশটা সেটা চেপে  ধরে চোখ বন্ধ করে সোফায় গা এলিয়ে দেয় ।বাইরে এতক্ষন কি ঘটে গেলো সেট ঘরে বসে মেঘলা বা অঞ্জনা কিছুই টের পেলো না ।

প্রেমিকা Where stories live. Discover now