Part - 31

190 8 1
                                    

31,/"অভী আমাকে যা বলতে বলেছিলো আমি তোকে বললাম অঞ্জু । তোর ভালো তোর হাতে । এবার তুই যেটা ভালো বুঝবি । "
অঞ্জনা আমরা আমতা করে বলে "আমি বুঝছি তোর কথাটা কিন্তু , সুজয় বলছে আমি এতদূর থেকে তোমার সাথে দেখা করতে যাচ্ছি । তুমি যদি আমার কাছে না থাকো আমার যাওয়ার মানে কি ? এবার আমি ওকে কি বলবো বলতো । ওকে কি করে বলবো তুমি যেখানে খুশি থাকো আমি তোমার সাথে থাকবো না রাতে । "
"যেখানে খুশি কেনো থাকবে । অভী তো বলেছে সুজয়দা  এক রাত আমাদের ফ্ল্যাটে থাকতে পারে । অভী শুধু চাই তুই এখনি ছেলেটাকে সবটা উজাড় করে দিস না । "
"অভীকদা যেমন তোকে ভালোবাসে বলে তুই ওর সাথে থাকিস , তেমনি আমিও সুজয়কে ভালোবাসি মেঘা ।  তুই যদি অভীকদাকে বিশ্বাস করতে পারিস তবে আমি সুজয়কে কেনো পারবো না । তোদের রিলেশন এক বছরও  হয়নি তাও তুই অভীক দার সাথে থাকছিস । আমি সুজয়ের সাথে তিন বছর সম্পর্কে আছি আর আমি থাকতে পারবো না এটা কেমন হিসেব মেঘা ? "
মেঘলার এবার রাগ হতে থাকে অঞ্জনার ওপর । ও একটা ভালো সাজেশন দিচ্ছিল অভীক সেটাও শুনলো না । মেঘলা রেগে মেগে বলে
"তোর যা খুশি তুই কর । অভী আমাকে ওর সন্দেহের কথা জানিয়েছিল আমি তোকে জানালাম । এবার তোর ইচ্ছা , তবে হ্যাঁ অঞ্জু নেক্সট টাইম আমার এর অভির সম্পর্কের ওপর আঙ্গুল তলার আগে এই কথাটা জেনে রাখ অভি আমাকে বিয়ে করেছে । আমাদের সম্পর্ক এক বছরের হোক আর না হোক আমাদের ভালোবাসায় কোনো ফাঁক নেই । সুজয়দার সাথে অভির compare তুই করলি তো আজ । আমি আজ তোকে জানিয়ে দিলাম অভি আর আমার বিয়ের কথা , এবার সুজয়দা  তোকে কবে বিয়ে করছে এই খবরটা আমি শোনার অপেক্ষায় থাকলাম । আমি ভগবানের কাছে প্রার্থনা করবো আমার অভির সন্দেহ যেনো মিথ্যা হয় । তুই যেনো ভালো থাকিস । চললাম আমি । "
মেঘলা রেগেমেগে চলে যায় । প্রশ্নটা যখন ওর অভীকের ওপরে উঠেছে তখন মেঘলা ছেড়ে কথা বলবে না ।

অভীক meeting রুম থেকে বেরিয়ে সবে ডেস্ক এ এসে বসেছে । নিতিন এসে বলে "অভীক , এই ডিজাইন এর ফিনিশিংটা একটু করে দিবি ভাই । পার্কিং টা কেমন করলে ভালো হয় বুঝতেই পারছি না । "
অভীক নিতিনকে ডিজাইন করতে help করছিলো, হঠাৎ ওর ফোন বেজে ওঠে । হ্যাঁ বলা হয়নি , অভীক এর ফোন থেকে বাচ্চাবউ বলে মেঘলার আগের নাম্বারটা সেভ , ছিল এবার অভি মেঘলার নম্বর সেভ করে রেখেছে শুধু দুটো লাভ চিহ্ন দিয়ে ।
মেঘলা ফোন করেছে , অভীকের ফোনের স্ক্রিনে দুটো লাভ চিহ্ন আর স্ক্রিন জুড়ে  মেঘলার ফটো ভেসে ওঠে । অভীক ফোনটা ডেস্ক এ রাখা ছিল । রিংটোন শুনে নিতিনও ফোনের দিকে তাকায় ।
"কে ভাই এটা ? গার্লফ্রেন্ড? "
অভীক মৃদু হেসে বলে "হুমম..  "
"ভারী মিষ্টি দেখতে । তুই কথা বলে নে , আমি পরে আসছি । ফোন সময়মতো না ধরলে গার্লফ্রেন্ড ক্ষেপে যায় আমি জানি ভাই । "
অভীক হেসে ফেলে । নিতিন ওর পিঠ চাপড়ে  চলে  যায় ।
অভীক ফোন ধরে বলে "বল বাবু..."
ওপর থেকে মেঘলা অভিমানের সুরে বলে "তুমি আমাকে একটুও ভালোবাসো না তাই না ? "
অভীক চিন্তিত হয়ে বলে "কেনো বাবা ? কি হলো তোর ... "
মেঘলা নাক টেনে বলে "ফ্রিজে চকলেট নেই , বাড়িতে চিপস নেই , কোল্ডড্রিংকস নেই কিচ্ছু নেই ... " তারপরে কান্নার সুরে বলে  " কিছু নেই ... আমার কান্না পাচ্ছে তো ... "
এই বলে মেঘলা ভ্যা ভ্যাঁ করে কাঁদতে শুরু করে । অন্যদিন চকলেট থাকলেও খাইনা , আজ চকলেট নেই শুনে কন্যা করছে দেখে অভীক পাশের ডেস্ক এর মেয়েটাকে জিজ্ঞেস করে "এই তিয়াস আজকের ডেট কত রে ..."
"চোদ্দো.... "
অভীক কপালে চাপর মেরে বলে "অভী... তুই কি করে ভুলে গেলি । মহারানীর এমনিতেই এত্ত এত্ত mood swing হবে তার ওপরে কিছু কিনো দিয়ে আসিস নি ওকে । এবার যদি ক্রেভিংস এর চক্করে পরে ও নিজে বেরিয়ে যায় খবর কিনতে তখন তুই কি করবি । "
অভীক ফোন নিয়ে বাইরে দৌড়ায় "সরি সরি সরি জান , আমি একদম ভুলে গিয়েছিলাম । শোন না তুই একদম বাইরে যাবি না ঠিক আছে । আমি দেখছি  কি করা যায় । তুই খাটের ওপর বস পড়াশোনা কর, পড়াশোনা করতে ইচ্ছে না হলে বাড়িতে বসেই যা ইচ্ছে তাই কর । সরি বাবু , আমি ভুলেই গিয়েছি তোর এখন যখন তখন খিদে পাবে । কান্না করিস না প্লিজ সোনা । আর একটু পরেই অফিস ছুটি হয়ে যাবে আমি ছুটে চলে আসবো তোর কাছে ।  "
মেঘলা এতক্ষন ভ্যাঁ ভ্যাঁ করে কাঁদছিল । এবার কান্না থামিয়ে বলে "আমার না খুব রাগ উঠছে । "।
অভীক জানে এটা mood swing এরই একটা অংশ । তাই শান্তভাবে জিজ্ঞেস করে "কার ওপর ? "
মেঘলা বলে "জানিনা কার ওপর , কিন্তু মনে হচ্ছে করো মুখে ঘুষি মেরে তার মুখটা ফাটিয়ে দি । "
অভীক নিজের কপালে নিজে চাপর মেরে বলে "হায় কপাল। "
তারপরে বলে "বাবু শোন না , আমি ফোনটা এখন রাখি । একটু পরেই তোকে ফোন করছি আবার । "
মেঘলা সুর করে বলে "আচ্ছা ...  "।
অভীক ফোন কেটে চন্দনকে ফোন করে ।এদিকে মেঘলা টিভিতে কুছ কুছ হোতা হ্যায় মুভিতে রানি মুখার্জির মৃত্যুর সিন দেখে নাকের জল চোখের জল এক করে ফেলেছে । হঠাৎ দরজায় বেল বাজে , বাইরে থেকে চন্দন চিৎকার করছে "বৌদি দরজা খোলো । "
মেঘলা দরজা খুলে দেখে চন্দন এক গাদা চিপস, চকলেট আর কোল্ডড্রিংকস নিয়ে দাঁত বের করে দাড়িয়ে আছে । মেঘলা অবাক হয়ে বলে "তুমি ! এগুলো কি চন্দন দা ... "
"গুরু দিয়ে যেতে বললো তোমাকে । গুরুর তো অফিস এখন তাই আমাকে বললো। "
মেঘলা মনে মনে বলে "ছেলেটা  নিজে পাগল... বাকিদেরও শান্তি দেবে না "
আর চন্দনকে বলে "ভেতরে এসো না চন্দন দা ...."
"না বৌদি ক্যাম্পাস যেতে হবে । তুমি এগুলো নাও আমি যায় । "
মেঘলা জিনিস গুলো নিয়ে ভেতরে আসে । খুশি মনে অভীককে ফোন করে । অভীক ফোন ধরেই বলে "এবার খুশি তো... "
মেঘলা লাজুক হেসে বলে "আমি ফোন করলাম বলে এতগুলো জিনিস পাঠিয়ে দিতে হবে ? "
"তুই এত কষ্ট পাচ্ছিস তোর এই ছোটখাটো আবদারগুলো না রাখতে পারলে জীবনে আর কি পারলাম । "
মেঘলার ইমোশনাল মুড অন ... দুঃখী দুঃখী স্বরে বলে "জলদি এসো... মিস করছি তো । "
অভীক হেসে বলে "হায়রে পাগলী। আর এক ঘণ্টার মধ্যেই আমার অফিস ছুটি আসছি আমি । "
মেঘলা ফোন রেখে একটা চিপস এর প্যাকেট কেটে আবার টিভি দেখতে বসে ।

অভীক বাড়ি ফিরে দেখে মেঘলা টিভি চালিয়ে  চিপস এর প্যাকেট খুলে সোফার ওপরেই অদ্ভুত পোজে ঘুমিয়ে পড়েছে । অভীক হেসে ফেলে ওকে দেখে । ওর মুখের ওপরের চুলগুলো সরিয়ে ওর কপালে চুম্বন করে ওকে কোলে তুলে নেয় । তার পরে পা দিয়ে ঘরের দরজাটা খুলে মেঘলাকে ঘরে নিয়ে গিয়ে বিছানায় শুইয়ে দেয় । মেঘলা ঘুমের ঘোরেই অভীকের গলা জড়িয়ে ধরে । অভীক এক্ষুনি বাইরে থেকে এলো তাই মেঘলার হাতটা নিজের গলা থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে ওর মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বলে "যতক্ষণ ঘুমিয়ে আছে ততক্ষন শান্ত , ঘুম থেকে উঠে কি তাণ্ডব শুরু করবে কে জানে । করলে করবে , মাসে  পাঁচটা দিনই  তো ওকে সামলাতে হয় , বাকি পঁচিশটা দিন তো ওই আমাকে সামলে রাখে ।..."
তারপরে মেঘলার পেটের ওপরে হাত রেখে বলে "পেটে ব্যথাটা যদি একটু কমাতে পারতাম তাহলে আমিও  একটু শান্তি পেতাম ।  এত ওষুধ খাওয়াও তো ভালো নয়  । "

প্রেমিকা Where stories live. Discover now