Part - 24

172 7 2
                                    

24/"Attention class, HOD স্যার জানিয়েছেন তোরা কেউ মেঘলাকে জোর করে ওর আগের কোনো কথা মনে করানোর চেষ্টা করবি না । তোদের কাছে কোনো ফটো দেখতে চাইলে দেখবি অবশ্যই ,  কিন্তু ওর মনে পড়ছে না জেনেও জোর করে মনে করেন চেষ্টা যেনো না করা হয় । আর ওর সাথে স্বাভাবিক হওয়ার চেষ্টা করবি তাহলেই ও স্বাভাবিক হতে পারবে । ওকে সবকিছু মনে করতে জোর করলে ওর মাইন্ড সেটা নিতে পারবে না তাই একটু carefull থাকিস তোরা । আর হ্যাঁ তোদের কাছে আরেকটা রিকোয়েস্ট, অভীকদার ব্যাপারে তোরা সবাই জানিস , তোরা এটাও জানিস যে লাস্ট দু বছরের সব কথায় যখন ও ভুলে গিয়েছেন তখন তখন অভীক দার কথাও ওর মনে থাকার কথা নয় । তাই অভিকদার ব্যাপারেও যেনো ওর সামনে কথা না হয় । প্লিজ.... ওর ব্রেন এখনি এটা নিতে পারবে না ।    "
রিভা সবার সামনে হাতজোড় করে । অঞ্জনা বলে তুমি "চিন্তা কোরোনা  রিভা দি আমি সামলে নেবো" ।
সারা ক্লাসে গুনগুন শুরু হয়ে যায় । রিভা ক্লাস থেকে বেরিয়ে যেতেই SB ম্যাডামের সাথে ভেতরে আসে মেঘলা ।
"মেঘলা Are you comfortable dear..."
মেঘলা একদিকে মাথা হেলিয়ে বলে "ইয়েস ম্যাম ... "
"Good , এইতো খুব অল্প সময়ের মধ্যেই তুমি ক্লাসের সবাইকে  তুমি চিনে ফেলবে ওরা তো তোমার ওল্ড ফ্রেন্ড তাই না । "
মেঘলা মৃদু হেসে বলে "ইয়েস ম্যাম.. "
তারপরে মেঘলা গিয়ে অঞ্জনার পাশের সিটে বসে । সবাই ঘুরে ঘুরে মেঘলার দিকে তাকাতেই SB ম্যাম ডাস্টার দিয়ে টেবিল দুবার টোকা মেরে বলে "অ্যাটেনশন ক্লাস.... "।
সবাই আবার সামনে তাকায় ।

সন্ধ্যাবেলা অভীক নিজের ডিপার্টমেন্ট থেকে ওর এক বন্ধু আকাশের সাথে কথা বলতে বলতে বেরিয়ে আসছিলো ।
"আচ্ছা অভী .... কবে জয়েন করছিস তুই ? "
"পরের মাসের শেষের দিকে ... তুই ? "
"আমি তো শুরুতেই করবো ভাবছি । শোননা ভাই যেটা বলছিলাম , মেঘলার কি তোকেও মনে পড়ছে না ? এটাও কি সম্ভব । "
অভীক আহত চোখে আকাশের দিকে তাকায় , কিছু বলে না । আকাশ ওর কাঁধে হাত রেখে বলে "I am sorry ভাই.... আমি জানি আমি ভুল প্রশ্ন করে ফেলেছি , চাপ নেই ঠিক মনে পড়ে যাবে  ও তোকে বেশিদিন ভুলে থাকতে পারবে না । "
অভীক সামনে দিকে তাকিয়ে দেখে নিলয় দৌড়ে দৌড়ে আসছে । অভীক নিজের হাতের ফাইলটা আকাশকে দিয়ে দ্রুত পায়ে এগিয়ে আসে "কি হয়েছে ? "
নিলয় হাঁপাতে হাঁপাতে বলে "মেঘলা.... মেঘলা পার্কিংয়ের সামনে সেন্সলেস হয়ে গিয়েছে । "
অভীক আর এক সেকেন্ডও না দাঁড়িয়ে ছুটতে শুরু করে ।
ইউনিয়ন রুমের সামনে একটা জায়গায় সবাই ভির করে দাঁড়িয়ে আছে অভীক ওদের ঠেলে ঠেলে সরিয়ে দেখে রিভার কোলে মাথা দিয়ে মেঘলা শুয়ে আছে রিভা ওকে জাগানোর চেষ্টা করছে "মেঘা এই মেঘা চোখ খোল প্লিজ... "
অভীক ভয়ের সুরে বলে "কি হয়েছে ? "।
"দেখোনা অভীক দা চোখে মুখে জল দিলাম চোখ খুলছে না । "
অভীক নিজের গম্ভীর গলায় একবার হাঁকিয়ে বলে "এখানে এত ভিড়ের কি হয়েছে , ভিড় কম কর সব.. "
নিমেষের মধ্যেই ভিড় অর্ধেক হয়ে যায় । অভীক মাটিতে হাঁটু ভাঁজ করে বসে  মেঘলার মাথাটা রিভার কোলের ওপর থেকে নিজে কোলে নেয় ... কতদিন পরে ছুঁয়ে দেখছে নিজের প্রেয়সী কে , অভীকের বুকের ভেতর উথাল পাথাল করছে ।
মেঘলার সারা মুখে একবার হাত বুলিয়ে অভীক মৃদুস্বরে বলে "মেঘা .... এই বাবু .... চোখ খোল... টাকা একবার আমার দিকে ... তোকে চিনতে হবে না আমায় ...এই মেঘা... "
অভীক এর পাগল পাগল অবস্থা দেখে উপস্থিত সকলের চোখে জল চলে আসে । রিভা ফুঁপিয়ে কেঁদে ওঠে । কান্না মিশ্রিত কণ্ঠে বলে "অভীক দা , ডাক্তার বলেছিলো এরকম হলে ওর জ্ঞান আসতে একটু সময় লাগবে ... "
অভীক মেঘলার অচেতন শরীরটাকে নিজের বুকের সাথে জড়িয়ে নিয়ে নিজের শরীরে মেঘলার স্পর্শ অনুভব করে । মেঘলার আঙ্গুলের ফাঁকে আঙ্গুল ঢুকিয়ে হাতটাকে শক্ত করে ধরার চেষ্টা করে , কিন্তু অচেতন মেঘলার হাতের মুঠোয় বন্ধ হয়না । অভীক মেঘলাকে কোলে নিয়ে ইউনিয়ন রুমের ভেতরে আসে, দুটো বেঞ্চ এক জায়গায় করে মেঘলাকে তার ওপর শোয়ায় । চন্দনকে বলে দরজাটা ভেতর থেকে বন্ধ করে দিতে । চন্দন তাই করে ।
অজ্ঞান প্রেয়সীর হাতটা নিজের দুইহাতের মধ্যে ধরে তাতে অজস্র চুম্বন করে অভীক । মেঘলার কপালে চুম্বন করে  মাটিতে বসেই তার  পেটের কাছটায় জড়িয়ে ধরে কাঁদতে কাঁদতে বলে "আমি অফিস কলকাতায় করতে পেরেছি মেঘা । পরের মাসের শেষের দিকে জয়েন করছি । কথা ছিল কলকাতায় অফিস হলে তুই আমাকে এমন একটা সারপ্রাইজ দিবি যেটা আমি চিরদিন মনে রাখবো । এটা কোন সারপ্রাইজ দিল তুই আমায় । আমি আর পারছি না মেঘা বিশ্বাস কর ...  খুব কষ্ট হচ্ছে আমার । "
রিভা , অঞ্জনা , চন্দন , চয়ন , নিলয় , নিখিল চোখে জল নিয়ে  সবাই দাঁড়িয়ে আছে  । অভীক মেঘলার দুই গালে হাত রেখে ওর মাথাটা আলতো করে  ঝাঁকাতে ঝাঁকাতে বলে "সারাদিন আমার চোখের সামনে ঘুরে বেড়াবি, অথচ আমি তোকে একটিবার ছুতে পারবো না ? অভীক বলে ডাকবি না আমায় .. এগুলো কেমন করে সহ্য করবো আমি । ফেরা সময় আমার জন্য ব্ল্যাক ফরেস্ট এর পেস্ট্রি না আনলে কথা বলবো না এই সব আবদার আবার কবে করবি ? ওঠ না মেঘা ..  উঠে একবার বলনা অভীক আমার সব মনে পরে গিয়েছে , অভীক আমাকে তোমার সাথে আমাদের বাড়িতে নিয়ে চলো যেখানে আমাদের ছোট্ট সংসার , যেখানে আমাকে জড়িয়ে না ধরলে তোমার ঘুম আসে না । বলনা মেঘা ... বল না একবার ... "
অভীক সশব্দে  কেঁদে ওঠে । দীর্ঘক্ষণ প্রেয়সীর মুখের দিকে চেয়ে থাকার পড়ে ধীরে ধীরে নিজের ঠোঁট দুটো মেঘার ঠোঁটের কাছে নিয়ে গিয়ে তাতে আলতো করে চুম্বন করে । মেঘলার সারা মুখে অজস্র চুম্বন করে ওর ঠোঁটে আলতো করে আঙ্গুল বোলাতে বোলাতে বলে "আমি জানি তুই তারাতারি আমার কাছে ফিরবি ... আমি জানি তো । আমি চিনি তো তোকে ... "
মেঘলার হাতের আঙ্গুল নড়ে ওঠে ... অভীক মেঘলার কাছ থেকে সরে দাঁড়ায় । অভীক চলে যেতে গেলে রিভা বলে "কোথায় যাচ্ছ অভীক দা ... "
অভীক আহত স্বরে বলে "চোখ খুলে আমায় এখানে দেখলে জিজ্ঞেস করবে আমি কে ? তখন কি বলবি ? ওর জ্ঞান ফিরলে ওকে জিজ্ঞেস করিস এইভাবে হঠাৎ কেনো অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিল । তারপরে আমাকে জানাস .. "
রিভা মৃদুস্বরে বলে "আচ্ছা ..."।
অভীক ইউনিয়ন রুমের দরজা খুলে বেরিয়ে যায় । কিছুক্ষন পরেই মেঘলা চোখ খোলে । মাথায় হাত দিয়ে ধীরে ধীরে ওঠার চেষ্টা করলে রিভা ওকে উঠতে সাহায্য করে । মেঘলা উঠে বসে এদিক ওদিক তাকায় । পরক্ষনেই নিজের ঠোঁটে হাত দেয় ।
রিভা শুকনো ঢোক গিলে বলে "এখন ঠিক আছিস মেঘা ... কী হয়েছিল তোর ? "
মেঘলা শূন্য দৃষ্টিতে এদিক ওদিক তাকিয়ে বলে "আমি কোথায় ? একটু আগে আমার কাছে কে ছিল ? "
অঞ্জনা আমতা আমতা করতে করতে বলে "কেউ ছিল না তো , আমরায় তো  আছি? কে থাকবে আর ? "
মেঘলা বলে "না... কেউ একজন ছিল , আমি খুব পরিচিত একটা গন্ধ পাচ্ছি। আমি অনুভব করতে পারছি ... কে ছিল বলো না ? "
রিভা বলে "কেউ ছিল না বোন , তোর জ্ঞান ছিল না তো তাই হয়তো হ্যালুসিনেট করছিস ।এখন কোনো অসুবিধে হচ্ছে না তো ? "
মেঘলা নিজের সারা মুখে একবার হাত ছোঁয়ায় । নিজের হাত গুলো  উল্টে পাল্টে দেখে নিজর মনেই বলে "আমার কেনো মনে হলো একটু আগে আমার খুব কাছের কেউ  আমার পাশেই ছিল আমাকে আগলে ছিল ? "।
ইউনিয়ন রুমের জানালা দিয়ে প্রেমিকার দিকে এক পৃথিবী ভালোবাসায় ভরা দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে এক প্রেমিক । তার প্রেমিকা এখন তার কাছে থেকেও বহু দূরে । তাকে হাত বাড়িয়ে ছোঁয়ার সুযোগটুকু  প্রেমিকের নেয় । নিজেকে খুব অসহায় মনে হয় অভীকের ।

প্রেমিকা Where stories live. Discover now