Part - 29

195 7 1
                                    

29/সন্ধেবেলা অঞ্জনা মেঘলার কাছে পড়তে আসে । অভীক বাড়িতে নেই , মেঘলার জন্য দরকারি জিনিসপত্র কিনতে গিয়েছে । কিছুক্ষন পড়াশোনার পরে  অঞ্জনা বলে "এই মেঘলা আমি তোকে একটা কথা জিজ্ঞেস করবো । "
মেঘলা বলে "হ্যাঁ বলনা...  "
অঞ্জনা মুচকি হেসে বলে "অভীকদা  আর তুই একসাথেই থাকিস ... অভীকদা তোকে এত্ত ভালোবাসে , কিন্তু কখনো তোর গলায় আমি লাভ বাইট দেখতে পায় না কেনো বলতো ? "
মেঘলা লজ্জা পেয়ে যায় । ভ্রু কুঞ্চিত করে বলে "পড়তে এসেছিস নাকি আমার লাভ বাইট খুঁজতে এসেছিস তুই ? নেই আমার ওসব । এখন পড় । "
অঞ্জনার জানার ইচ্ছা আরো প্রবল হয় "এই বলনা ভাই বল না।  বন্ধুই তো হই আমি , আমার কাছে লজ্জা কিসের । আমায় বলবি না... অভীক দা তোর গলায় চুমু খায় না ? "
"ইশ অঞ্জু কিসব বলিস তুই ?  "
" আসলে পরের উইকে সুজয় কলকাতায় আসছে, আমাদের প্রথমবার সামনাসামনি দেখা হবে তাই তোর থেকে কিছু টিপস চাইছিলাম কি করে লাভ বাইট আড়াল করা যায় ।"
। মেঘলা খাতার পাতা ওল্টাতে ওল্টাতে বলে "আমাকে লাভ বাইট আড়াল করতে হয়না । অভী আমার প্রতি খুব যত্নশীল , ও সবসময় খুব কেয়ারফুল থাকে তাই আমার গায়ে  খুব একটা  চিহ্ন থাকে না, মাঝে মাঝে  অল্প একটু হয় দাগ যেটা দু একদিনের মধ্যেই ঠিক হয়ে যায় । এবার পেয়েছিস প্রশ্নের উত্তর ... "
অঞ্জনা বলে " অভীকদা কি ভালো । কত ভালবাসে তোকে । "
মেঘলা মৃদু হেসে বলে " তা বাসে । "
এইসব কথা চলতে চলতেই অভীক আসে । হাতে একটা ব্যাগ নিয়ে ফ্ল্যাটে ঢোকে অঞ্জনা একবার অভীকের দিকে তাকায় একবার মেঘলার দিকে ।
"হাই অঞ্জনা, পড়াশোনা ঠিকঠাক চলছে ?  "
"হ্যাঁ দাদা , খুব ভালো চলছে । "
মেঘলা দাঁত বের করে বলে "আমাকেও জিজ্ঞেস করো ঠিকঠাক চলছে কিনা ? "
অভীক মেঘলার দিকে তাকিয়ে বলে "তোকে জিজ্ঞেস কেনো করবো ? ঠিকঠাক পড়াশোনা না করলে মার হবে মার.. "
মেঘলা গাল ফোলায় । অভীক বলে "তারাতারি পড়া শেষ কর পিৎজা এনেছি একসাথে খাবো ।  "
দুজনেই আবার পড়াতে মন দেয় । অভীক ঘরে এসে ব্যাগ থেকে জিনিসগুলো  একে  একে বের করে জায়গামতো রেখে , জামাকাপড়  বদলে  মুখ হাত ধুয়ে রান্নাঘরে আসে । পিৎজার বক্সটা নিয়ে পড়ার ঘরে আসার সময় দেখে মেঘলা আর অঞ্জনা কিছু একটা নিয়ে কথা বলছিল ওকে দেখে দুজনেই চুপ করে যায়  । অঞ্জনাকে  চিন্তিত লাগছে । অভীক একটা ভ্রু তুলে জিজ্ঞেস করে "কি হয়েছে তোদের । "
মেঘলা বলে "কিছু না , রাতে বলবো তোমায় । "
"বেশ তবে এখন খেয়ে নে । বইপত্র রেখে খেয়ে নে অঞ্জনা । কোল্ডড্রিংকস, আছে গরম হয়ে যাবে । "
খাওয়া দাওয়া সেরে আরেকটু গল্পগুজব করে অঞ্জনা চলে যায় । অভীক ল্যাপটপ নিয়ে বসে। 
মেঘলা ওর পিঠ  ধরে ওর পিঠে দুলতে দুলতে বলে "অভী.... "
"হুমম... "
"তুমি কত্ত ...ভালো "
"অপোজিশন পার্টির লোকজন বলে আমি আস্ত হারামী, আমিও সেটাই মানি এই দুনিয়ায় ভালো মানুষদের জায়গা নেই । কিছু একটা অন্যায় আবদার আছে আমি বুঝতে পারছি । কি চায় বলে ফেলুন। "
মেঘলা মনে মনে বলে "কি করে বুঝে যায় কে জানে । "
তারপরে আবার দুলতে দুলতে বলে "পরের সপ্তাহে না অঞ্জনার বয়ফ্রেন্ড কলকাতায় আসছে বাঙ্গালোর থেকে । "
অভীক ল্যাপটপে মন দিয়েই বলে "অঞ্জনার বয়ফ্রেন্ড কবে হলো কোনোদিন দেখিনি তো ? "
"তিন বছরের বেশি সময় ধরে ওরা রিলেশনে আছে   ছেলেটা ব্যাঙ্গালোরে থাকে। ফেসবুক থেকে পরিচয় তারপরে প্রেম। পরের সপ্তাহে প্রথম ওদের সামনাসামনি দেখা হবে    "।
"ফেসবুকের প্রেম এত লং লাস্টিং ভেরি গুড, তিন বছর পরে সামনাসামনি দেখা করবে ওরা ? এতদিন   একে অপরকে না দেখে কি করে আছে ? "
"ওটা ব্যাপার না।  ব্যাপার হচ্ছে ছেলেটা এখানে এসে দুদিন থাকবে । অঞ্জনার সাথে কলকাতা ঘুরবে । "
"ভালো কথা । একদিন আমাদের ফ্ল্যাটে ডিনারে ইনভাইট করিস । "
"বলছি শোনো না । "
"শুনছি তো বল । "
" আমাদের একটা রুম তো ফাঁকায় পরে থাকে , এক রাতের জন্য ওকে  থাকতে দেওয়া যাবে । "
অভীক একটু ভেবে বলে "থাকার জায়গা না থাকলে থাকতে দেওয়াই যায় । কিন্তু যেদিন রাতে ছেলেটা এখানে থাকবে , সেদিন তোর এখানে থাকা যাবে না । তুই সেদিন রিভার সাথে পিজিতে যাবি । বল রাজি ? তুই রাজি হলে আমিও রাজি ।  "
মেঘলা  মুখ ফুলিয়ে মনে মনে বলে "পজেসিভ লোক কোথাকার । "
আর মুখে বলে "সুজয়দা , মানে অঞ্জনার বয়ফ্রেন্ড একা থাকবে না তো । "
অভীক অবাক হয়ে বলে "একা থাকবে না  মানে ? "
মেঘলা একটু আমতা আমতা করে বলে "অঞ্জনাও থাকবে , মানে ওরা একসাথে , মানে বুঝতে পারছো তো .. আমি কি বলছি ? "
অভীক মেঘলার সাথে ধরে ওকে নিজের সামনে বসায় । ল্যাপটপটা বন্ধ করে পাশে রেখে বলে "ভালো করেই বুঝতে পেরেছি । আর আমি এসব অ্যালাও করবো না । "
মেঘলা বলে "কেনো ? অঞ্জু কত আশা করে আমাকে বলেছিল । ও তো ভাববে আমরা একসাথে থাকছি অথচ ওকে আর ওর বয় ফ্রেন্ডকে  এক রাত্রি থাকতে দিচ্ছি না । এমনিতেও তো এত বড় শহরে ওরা কোথাও না কোথাও রুম ভাড়া করে থেকেই যাবে । ভাড়া রুমের থেকে আমাদের ফ্ল্যাটটা সেফ তাই বলছিলাম..  "। অভীক ধমকের সুরে বলে "তুই পাগল মেঘা ? তোর আর আমার ব্যাপার এর কোথাকার কোন ব্যাঙ্গালোর থেকে আসা ছেলের ব্যাপার সেম হলো ? ছেলেটা একা থাকলে আমি ওকে থাকতে দিতাম । কিন্তু তুই ভেবে দেখ অঞ্জনা প্রথমবার ছেলেটার সাথে সরাসরি দেখা করতে চলেছে , ভুলে যা ওদের তিন বছরে সম্পর্ক , ভুলে যা ওদের ভিডিও কল । সামনাসামনি তো এই প্রথম দেখা? প্রথম দেখাতে এরকম রুমডেট  করতে কোন মেয়ে রাজি হয় ? অঞ্জনা নিজের ভালো খারাপ বোঝে না ? Is she mad or what? "
মেঘলা অভীকের গলার স্বরে ভয় পেয়ে যায়। থতমত খেয়ে বলে "ওদের সম্পর্কের কথা ছেলেটার বাড়িতে জানে , অঞ্জনার বারিত একটু একটু জানে । ছেলেটা ওকে বলেছে তাই ও আমাকে বললো । আমি এত কিছু ভাবিনি । "
মেঘলার হাত ধরে অভীক বলে "বেবী তুই আমার কথাটা শোন ভালো করে । অঞ্জনা আমার বোনের মতো । আমি কখনো চাইবো না ওর খারাপ হোক । তুই একবার ভাব ছেলেটা পশ্চিমবঙ্গে থাকে না।  ওর রিয়েল নেচারের সাথে অঞ্জনা এখনও অবগত নয় । অঞ্জনারর সাথে রাত কাটানোর পরে ছেলেটা যদি আর কোনোদিন কলকাতায় না আসে তখন অঞ্জনা কি করবে ? কোথায় পাবে তাকে ? তিন বছরের সম্পর্ক হোক বা বাবা মা জেনে থাকুক এই সম্পর্কের ব্যাপারে .. একটা মানুষকে চেনার জন্য তার হাত ধরে কিছুটা পথ হাঁটতে হয় । তার চোখের দিকে তাকিয়ে তার চোখের ভাষা বুঝতে হয় । ফোনের ওপারের  মানুষটাকে এই পারে বসে পুরোপুরি চেনা সম্ভব না । ওকে বল , এবার ছেলেটার সাথে শুধু ঘুরে ওকে আগে চিনুক, হ্যাঁ আবেগের বসে একটু হাগ, বা কিস হতে পারে , কিন্তু রুমডেট এর মত বড়ো স্টেপ যেনো এখনি না নেয় । ওকে বোঝা , ছেলেটা অনেক দূরে থাকে , ও যদি এখনি ছেলেটার কাছে নিজেকে সঁপে দেয় সে আর ফিরে নাও আসতে পারে ওর কাছে । "
মেঘলা অবাক হয়ে অভীকের দিকে তাকিয়ে আছে । এত ভালো করে অভীক ওকে বোঝালো । অভীক ওর দুই গালে হাত রেখে বলে "তুই আমাদের কথাটা ধর , তুই আমাকে কতদিন হলো চিনিস ? দু বছরের বেশি সময় ধরে তাই তো? কিন্তু আমাদের সম্পর্কটা কতদিনের ? পাঁচ থেকে ছয় মাস। বেশি হলে সাত মাস...আমাদের সম্পর্কের ব্যাপারে কেবল আমার বাবা জানে , তোর বাড়ির কেও জানে না তাইতো । কিন্তু তবুও আমরা একসাথে আছি । কারণ আমরা একে অপরের পাশে থেকে একে অপরকে চিনেছি , হতে হাত রেখে দুজন দুজনকে সময় দিয়েছি বলেই আজ আমরা এক সাথে এক ছাদের নিচে আছি । আমি তোকে ছেড়ে থাকার কথা ভাবতে পারিনা আর তুমি আমাকে ছেড়ে থাকার কথা ভাবতে পারিস না । এই জায়গাটা আমরা নিজেরা তৈরি করেছি মেঘা একে অপরের পাশে থেকে  । এইভাবে ব্যাঙ্গালোর থেকে কলকাতায় শুধুমাত্র ফোনের মাধ্যমে মানুষ চেনা যায় না । লং distance relationship অনেক মানুষ করে । মানুষ হ্যাপি ও থাকে , পরবর্তীকালে বিয়ে করে সুখে সংসারও  করে তারা । কিন্তু যে ছেলে তিন বছরে  প্রথমবার গার্লফ্রেন্ড এর সাথে  দেখা করত এসে প্রথমবারেই  রুম ডেটের কথা বলতে পারে তার ভালোবাসা নিয়ে আমার সন্দেহ আছে । ।  "
মেঘলা অভিক কে জড়িয়ে ধরে বলে "তোমার সব কথা বুঝেছি আমি । আমি অঞ্জনাকেও বুঝিয়ে বলবো । ওকে মানাও করে দেবো । "
"আর ও না বুঝলে আমার  কাছে নিয়ে আসবি । "
"জি স্যার ।"
মেঘলার বলার ধরনে অভীক হেসে ফেলে ।

প্রেমিকা Where stories live. Discover now