Part - 25

188 7 2
                                    

25/ক্যাম্পাসে  সাজো সাজো  ইলেকশনের তোড়জোড় শুরু । সবাই এদিক থেকে ওদিক ছোটাছুটি করছে । একেকটা পার্টির  সদস্যরা ক্যাম্পেইন  করছে । অঞ্জনা আর মেঘলা ক্লাস থেকে বেরোয় । অঞ্জনা বলে "সেদিন তুই হঠাৎ করে ওরকম ভাবে অজ্ঞান কেনো হয়ে গিয়েছিলি বলতো ? "
মেঘলা একটু ভেবে বলে "আমি স্টাফ রুম থেকে লাস্ট year এর একটা ম্যাগাজিন পেয়েছিলাম । ওটা আমার অনেক গুলো ফটো ছিল । মে বি কোনো কম্পিটিশন এর বা প্রেজেন্টেশন এর হবে হয়তো । অ্যাকসিডেন্ট এর সময় আমার ফোনটাও তো হারিয়ে গিয়েছে তাই কলেজ লাইফের কোনো ছবি আমার কাছে নেই । ম্যাগাজিনটা দেখার পরে  আমি অনেক মনে করার চেষ্টা করলাম কিছুই মনে পড়লো না । আমি এটা নিয়েই ভাবছিলাম হঠাৎ পার্কিংয়ের কাছে এসে আমার খুব মাথা যন্ত্রণা শুরু হয় আর আমি কখন জ্ঞান হারায় আমি বুঝতেই পারিনি । "
অঞ্জনা বলে "কতবার বলেছি তোকে এইভাবে মাথায় চাপ দিস না । "
মেঘলা বলে "যদি আমি মনে করার চেষ্টায় না করি আমার মনে পড়বে কি করে ?  তুই জানিস আমার এখনও মনে হচ্ছে এই ক্যাম্পাসে আমার কিছু একটা রয়েছে যেটা আমি মনে করতে পারছি না । "
অঞ্জনা সিরিয়াস হয়ে যায় । চেয়েও কিছু বলতে পারে না । অভীক এর বারণ আছে মেঘলাকে কিছু মনে করানোর চেষ্টা করানো ।  ক্যান্টিনের সামনে এসে অঞ্জনা মেঘলাকে বলে "তুই এখানে দাড়া আমি দুটো স্যান্ডউইচ নিয়ে আসি । কোথাও যাবি না মেঘা । "
মেঘলা মাথা মেরে বলে আচ্ছা ।
হঠাৎ মেঘলার মনে হয় কেউ যেনো ওর দিকে তাকিয়ে আছে । ডানপাশে ঘুরে দেখে একটু দূরেই একটা ছেলে দাঁড়িয়ে আছে, সিগারেট খাচ্ছে  । ছেলেটাকে চেনে মেঘলা , আর্কিটেকচার ডিপার্টমেন্ট last year ।  নাম মনে হয় অভীক , । ওদের ডিপার্টমেন্টে এই ছেলেটাকে নিয়ে খুব চর্চা হয় । কিন্তু অদ্ভুত ব্যাপার হলো এই যে  মেঘলাকে দেখেই সবাই ছেলেটাকে নিয়ে  কথা বলা  বন্ধ করে দেয় । অঞ্জনাকে জিজ্ঞেস করতে অঞ্জনা বলেছে , এসে নাকি কলেজের ইঞ্জিনিয়ারিং ফ্যাকাল্টির   প্রেসিডেন্ট । সায়েন্স আর আর্টস ফ্যাকাল্টির স্টুডেন্টরাও খুব ভালোবাসে তাকে । রিভাদির রাখী দাদা । প্রতিবছর রাখি পড়ায় । কিন্তু যাকে সবাই  কলেজের মেয়েরা নাকি  অভীক নামে পাগল, কিন্তু এই অভীক কোনো এক মেয়েকে খুব  ভালোবাসে , কিন্তু মেয়েটা এখন তার কাছে থাকে না , সেই জন্যই দাদাটা সবসময়  কেমন একটা  মনমরা আর সিরিয়াস হয়ে থাকে  ।  এর চেয়ে বেশি কিছু বলেনি অঞ্জনা । মেঘলা মনে মনে বলে "যাকে সবাই চাই , সে কেবল একজনকেই চায় । মেয়েটা কত লাকি । যার জন্য একটা দাপুটে ছেলে এরকম মনমরা হয়ে গিয়েছে ।  "
মেঘলা এক দৃষ্টিতে অভীকের দিকে তাকিয়ে ছিল । অভীকও এতক্ষন ওর মেঘাকেই দেখছিল , কিন্তু মেঘলা ওর দিকে তাকাতেই অভীক চোখ সরিয়ে নেয় । অভীক আড়চোখে দেখতে যায় মেঘলা চোখ সরিয়েছে কি না । কিন্তু দেখতে গিয়েই মেঘার চোখে ওর চোখ পড়ে যায় । অভীক এর চোখে চোখ করতেই মেঘলার বুকের ভেতরটা কেমন করে ওঠে । মেঘলা মনে মনে বলে "দাদাটার চোখের দিকে তাকাতেই এরকম অদ্ভুত অনুভূতি হচ্ছে কেনো আমার ? "
হঠাৎ রিভাদের ক্লাসের একজন ছেলে মেঘলাকে দেখে ওর দিকে ছুট আসে "হে মেঘলা তুই এখানে  কি করছিস । "
মেঘলা মুখে জোর করে একটা হাসি নিয়ে বলে "অঞ্জনা ক্যান্টিনে গিয়েছে ওর জন্য ওয়েট করছি । "
ছেলেটা হঠাৎ মেঘলার হাত ধরে বলে "চল অঞ্জনা আসতে আসতে টেবিলে বসে একটু গল্প করি । "
ছেলেটা হাত ধরতেই মেঘলা অবাক হয়ে ওর দিকে তাকায় । একটু অস্বস্তির সাথেই বলে "না থাক আমি এখানেই ঠিক আছি । "
ছেলেটা আরো কিছু বলতে যাবে তখনই অভীক একটা নকল কাশি দেয় । ছেলেটা পাশে তাকিয়ে অভীককে  দেখেই ওর প্রাণ পাখি উড়ে পালানোর জোগাড় ।
"ও অভীক দা তুমি.... "
অভীক চোয়াল শক্ত করে ওর দিকে তাকিয়ে আছে । ছেলেটা তৎক্ষণাৎ মেঘলার হাত ছেড়ে দিয়ে বলে "সরি বোন আমার ভুল হয়ে গিয়েছে । I am sorry ... "
মেঘলা অবাক হবে না রাগ ঝারবে বুঝতে পারে না । দুটোর মাঝামাঝি একটা অবস্থা ওর । শেষমেষ কিছু বলতে না পারে কেবল বলে "অ্যা... "
ছেলেটা হাত জোড় করে বলে "আমি ভুল করে তোর হাত ধরে ফেলেছি । সরি... তারপরে ছেলেটা দৌড়ে পালিয়ে যায় যাওয়ার আগে অভীককে বলে, সরি দাদা আর এমন ভুল কখনো হবে না ।"
মেঘলা মনে মনে বলে "ব্যাপারটা কি হলো আমি বুঝতেই পারলাম না । "
মেঘলা অভীকের দিকে তাকাতেই অভীক মুখ ঘুরিয়ে নেয় । ততক্ষনে অঞ্জনা স্যান্ডউইচ হাতে বেরিয়ে আসে । অভীককে দেখে হাত নারে "হাই অভীক দা"
অভীক মৃদু হাসে । তারপরে গম্ভীর কণ্ঠে বলে "শুধু স্যান্ডউইচ? কোল্ডড্রিংকস লাগবে না ? "
মেঘলা ওদের দুজনের মাঝে নিরব দর্শকের মত দাঁড়িয়ে ছিল । অঞ্জনা বলে "না না দাদা ... ঠিক আছে । "
অভীক বলে "ওয়েট..... " তারপরে ছোটু বলে হাঁক দেয় । ক্যান্টিনের ছোট ছেলেটা দৌড়ে আসে "হ্যাঁ দাদা .... "
" দিদিদের দুটো স্প্রাইট দিয়ে যা , তারাতারি করবি ...  "
"এক্ষুনি আনছি দাদা ... "
মেঘলা অঞ্জনার দিকে তাকিয়ে বলে "এসবের কি দরকার অঞ্জনা । "
অঞ্জনা বলে "তুই চুপ কর , অভীকদা কে কেউ না বলে না ।  "
"তাই বলে আমরা ওনার টাকায় খাবো ? আমি তো চিনি না ওনাকে ।  "।
তখনই ছোটু এসে দুটো স্প্রাইট এর বোতল অভীকের হাতে দিয়ে যায় । অভীক একটা বোতল  অঞ্জনা কে আরেকটা মেঘলাকে দেয় । বোতল দেওয়ার সময় মেঘলার হাতটা অভীকের হাতে সামান্য টাচ হয় ।মেঘলা অদ্ভুত ভাবে অভীকের মুখের দিকে তাকায় মনে মনে বলে "আমি তো স্প্রাইট ছাড়া কিছু খাই না । উনি অন্য কিছু না বলে স্প্রাইটই কেনো বললেন ? আর ওনার টাচ ? এমন কেনো হচ্ছে আমার ? কেনো মনে হচ্ছে এই মানুষটাকে আমি চিনি ? "
অভীক মেঘলার সামনে আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারছিল না। তাই কোল্ড ড্রিংকস টা ওদের হতে দিয়েই চলে যায় ।

"মেঘলা..... ইউনিয়ন রুমের দরজার ডানদিকের কাপবোর্ডে আমার ব্যাগটা আছে একটু নিয়ে আসবি বোন। "
মেঘলা মাথা নেড়ে বলে "আচ্ছা .... "
মেঘলা ইউনিয়ন রুমে আসতেই কাপবোর্ড খুলে রিভার ব্যাগটা বের করে বেরিয়ে আসার সময় দেখে টেবিলের ওপরে একটা ফোন পরে আছে ।
"এটা কার ফোন? রিভাদির নয়তো ?  "
এই বলে মেঘলা ফোনটা হাতে নিয়ে সাইডের বাটনটা প্রেস করতেই ওর চোখের সামনে ফোনের স্ক্রিনে যেই ছবিটা ও দেখতে পায় সেটা ওর পায়ের তলার মাটি নড়িয়ে দেয় । মেঘলার হাত কাঁপতে থাকে । অস্ফুটে বলে ওঠে "এটা তো আমি .... আর এটা ... এটা তো সেই অভীকদা"
মেঘলা ধপ করে মাটিতে বসে পড়ে । আসলে ফোনটা অভীকের , অভীকের লক স্ক্রিনে  মেঘলার সাথে অভীকের একটা ছবি । যেটায় মেঘলা একটা নীল রঙের শাড়ি পড়ে মন খুলে হাসছে আর অভীক ওকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে ওর গালে কিস করছে । মেঘলা নিজের চুল নিজেই খামচে ধরে বলে "এটা কি করে সম্ভব ? আমি ওই দাদাটার সাথে এই ভাবে কেনো ? কিভাবে ? "।
হঠাৎ ইউনিয়ন রুমের বাইরে থেকে আজ আসে "এই রিভা আমার ফোনটা দেখেছিস ? "
রিভা বলে "ভেতরে টেবিলের ওপরে দেখেছিলাম । "
মেঘলা তা শুনতে পেয়ে তাড়াহুড়ো করে ফোনটা জায়গায় রেখে দিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়ায় । কিন্তু এইমাত্র ও যা দেখল সেটা ওর সামনে একটা বড়ো প্রশ্ন এনে দাঁড় করিয়েছে ।  পৃথিবীতে স্মৃতি হারানোর মত ভয়ানক জিনিস  হয়তো আর কিছু নেই ।

প্রেমিকা Where stories live. Discover now