১১. বিশ্বাস

245 57 48
                                    

সকাল দশটা বেজে গেছে। নীরা তার কলোনির গেটের সামনে দাঁড়িয়ে। নীলা এখনও আসেনি। একটু পরই দেখা গেল নীলা গম্ভীর মুখে আসছে।

নীরাকে দেখে ওর মুখে হাসি ফুটে উঠল। বলল,
-"তুমি এত তাড়াতাড়ি চলে এসেছে? আমি ভেবেছিলাম তুমি দেরিতে আসবে।

নীরা কিছু না বলে হাসল।

নীলা বললো,
-"চলো আমরা হাঁটতে হাঁটতে কথা বলি।"

তারপর তারা হাঁটতে লাগলো।

নীরা বলল,
-"আমার বন্ধুরা কি তোমাকে বলছে যে আমার সাথে ওদের ঝগড়া হয়েছে?"

নীলা বললো,
-"না তো!"
-"তাহলে তুমি কিভাবে জানলে? এছাড়া তুমি কি করে বুঝলে যে আমি স্কুলে যাইনি? তাছাড়াও আমি যে কৃষ্ণকুমারী নাটকটি পড়ছি সেটাও বা কিভাবে জানলে?"

নীলা হাসতে হাসতে বলল,
-"আমি তোমাকে আগেই বলেছি।"

নীরা ভ্রূকুঞ্চিত করে বলে,
-"তুমি আসলেই ভবিষ্যৎ দেখতে পাও?"

নীলা মাথা নাড়ায়। বলে,
-"আমি সবটা বলতেই তোমাকে ডেকেছি।"
-"তুমি আমাকে বলতে পারো। তবে শুরু থেকে বল।"
-"মানে?"
-"কবে থেকে তুমি এই ভবিষ্যৎ দেখা শুরু করেছ?"

তারপর একটু কেশে নীলা বলা শুরু করে।

-"আমার তখন ১১ বছর। এপ্রিল মাসের প্রচণ্ড গরম তখন। ভরদুপুরে মায়ের পাশে ঘুমাচ্ছিলাম। হঠাৎ আমি স্বপ্ন দেখি আমি আমার নানা বাড়ির পুকুরের পাড়ে বসে কাঁদছি। সেখানে একটা সুন্দর ফুল ফুটে আছে। আর দূর থেকে আরো কান্নার আওয়াজ ভেসে আসছে। এই স্বপ্ন দেখে আমি ঘুম থেকে জেগে উঠি। অন্যদিনের মতো আমি এটাকে কেউ নিছক স্বপ্ন ভেবে উড়িয়ে দিয়েছিলাম। কিন্তু এর পরদিনই হঠাৎ করে খবর আসে আমার নানা অসুস্থ। তারপর আমরা সবাই গ্রামে যাই। আর আমাদের যাওয়ার পথেই তার মৃত্যু সংবাদ আসে। আর ওখানে পৌঁছানোর পর আমার অজান্তেই আমি ওই পুকুরের পাশে বসে কাঁদতে থাকি। আর আম্মু ঘরে গিয়ে আমার খালামণিদের সাথে কাঁদতে থাকে। আর সেই কান্নার আওয়াজ আমার চারপাশের পরিবেশকে ভারাক্রান্ত করে তুলেছিল। তখন আমার হঠাৎ করে স্বপ্নের কথা মনে পড়ে এবং আমি লক্ষ্য করি স্বপ্নের মত আমার পাশে ফুটে আছে একটি সুন্দর ফুল। আর আমি খেয়াল করি, এটা ঠিক সে রকম পরিবেশ যা আমি স্বপ্নে দেখেছিলাম।"

এটুকু বলে নীলা থেমে যায়।

নীরা বলে,
-"তুমি যে এরকম দেখো তা কি তোমার আব্বু আম্মু জানে?"

নীলা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলে,
-"নাহ!"
-"কেন? তুমি তাদের বলোনি কেন?"
-"আমি বলতে চাই না। যদি তারা বিশ্বাস না করে, যদি ভাবে আমি পাগল হয়ে যাচ্ছি। আমি তাদের চিন্তায় ফেলতে চাইনা।"

নীরা মাথা নাড়ায়। বলে,
-"তুমি কি শুধু স্বপ্নেই দেখতে পাও?"
-"না, মাঝে মাঝে চোখ বন্ধ করেও দেখতে পাই। যখন দেখি তখন শরীর কাঁপতে থাকে। অনেকটা বিদ্যুৎস্পৃষ্ট মানুষের মত।"
-"ওঃ আচ্ছা।"
-"তুমি কি এখনও বিশ্বাস করতে পেরেছ?"
-"বিশ্বাস করতে কষ্ট হলেও এখন জানিনা কেন যেন আমার বিশ্বাস হচ্ছে।

নীলার মুখে হাসির ঝিলিক দেখা যায়।
-"কষ্ট লাগে এটা ভেবে যে, আমি আমার বেস্ট ফ্রেন্ডকেও বলেছিলাম। কিন্তু ও বিশ্বাস করেনি। আর তারপর থেকে ও আমার সাথে কথা বলাই বন্ধ করে দেয়। তুমি বিশ্বাস করেছ শুনে ভালো লাগছে।"

নীলার গলা কান্নায় ভেঙে যায়।
-"থ্যাঙ্ক ইউ, নীরা।"

নীরা সান্তনার ভঙ্গিতে বলে,
-"ইটস ওকে নীলা। আমি কেন বিশ্বাস করব না। তুমি কেন আমাকে আজগুবি গল্প শোনাবে, যদি তা সত্যি না হয়। আর অনেকের এমন ক্ষমতা থাকা স্বাভাবিক। পৃথিবীতে অনেক আজব ঘটনা ঘটে থাকে।"

চলবে...

দ্য এরা অফ্ লারা'স (𝐂𝐨𝐦𝐩𝐥𝐞𝐭𝐞𝐝 ✔︎)Donde viven las historias. Descúbrelo ahora