১৪. সত্যি!

233 50 18
                                    


দুইদিন পর ছিল শুক্রবার। সাপ্তাহিক ছুটির দিন। তাই অন্য সবার মতো নীরারও ইচ্ছে ছিল একটু বেশি সময় ঘুমানোর। কিন্তু তা হতে দিলো না ইরা। ভোর সাতটার সময় নীরার ফোন বেজে উঠল।ঘুম জড়িত কন্ঠে নীরা ফোন ধরল।

-"হ্যাঁ, ইরা এত সকালে ফোন করছিস কেন?"

অপরপ্রান্ত থেকে ইরার উত্তেজিত কণ্ঠস্বর শোনা গেল।

-"আরে আজকের খবরের কাগজ পড়ছিস?"

-"ধুর, এখনো ঘুম থেকেই উঠলাম না। আবার খবরের কাগজ।"

-"তাড়াতাড়ি পড়।"

-"পড়বো না। আমি এখন ঘুমাবো। কি হইছে মুখে বল।"

-"উফ্! বলতেছি... নীলার ভবিষ্যৎবাণী সত্যি হইছে... বুড়িগঙ্গা নদীতে একটা ছেলের বস্তাবন্দি লাশ পাওয়া গেছে।"

-"কী???"নীরা প্রায় চিৎকার করে উঠে।

-"হ্যাঁ... সেজন্যই বলতেছি পেপারটা পড়।"

-"আচ্ছা, ঠিক আছে।"

-"রাখি তাহলে।"

ফোন কেটে গেল। নীরার চোখে এখন আর ঘুম নেই। দ্রুত বিছানা থেকে উঠে গেটে ঝুলে থাকা পত্রিকা নিয়ে পড়তে বসলো।
পত্রিকার ফ্রন্ট পেইজেই ছাপা হয়েছে খবরটি।

_____________________________________

বুড়িগঙ্গা নদীতে বস্তাবন্দি
লাশ উদ্ধার


।     ঢাকার পার্শ্ববর্তী বুড়িগঙ্গা নদীতে গত
।     বৃহস্পতিবার রাতে পুলিশ তৎপরতার সাথে
।     অভিযান চালিয়ে একটি বস্তাবন্দি লাশ
।     উদ্ধার করেছে। নিহতের নাম শরিফ
।     মিয়া (০৮)। নিহতের লাশ উদ্ধারের পর
।     পুলিশ তার শরীরে অসংখ্য সেলাইয়ের চিহ্ন
।     খুঁজে পায়। এ বিষয়ে তার পরিবারের কাছে
।     জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে তার পিতা-মাতা
।     জানায়, তাদের ছেলের শরীরে কোনো
।     সেলাই করা হয়নি। এ মৃত্যু সম্পর্কে
।     পরিষ্কারভাবে জানতে পুলিশ লাশ
।     পোস্টমর্টেমের জন্য ঢাকা মেডিকেল
।     কলেজে (ঢামেক) স্থানান্তর করে। কিসের
।     জের ধরে এ মৃত্যু ঘটেছে তা এখনো জানা
।     যায়নি। নিহত শরীফ মিয়ার বাবা কাশেম
।     মিয়া পুরান ঢাকার একজন মুদি
।     দোকানদার। গত বুধবার বিকেলে
।     খেলাধুলার উদ্দেশ্যে শরিফ বাসা থেকে
।     বেরিয়ে আর ফিরে না আসলে তার বাবা
।     বৃহস্পতিবার বিকেলে থানায় নিখোঁজ
।     হিসেবে জিডি করেন।


______________________________________

পত্রিকা পড়া শেষে নীরা একটি দীর্ঘশ্বাস ফেলে। ভাবে গত বুধবার সকালেই নীলা তাকে বলেছিল এটা ঘটবে। যদি তারা কিছু করতে পারত, তাহলে এই বাচ্চা ছেলেটাকে প্রাণ দিতে হতো না।

দুপুরের দিকে নীরা, নীলাকে ফোন করে। নীলা ফোন রিসিভ করলে নীরা অপর প্রান্ত থেকে ভেসে আসা নীলার কান্নার শব্দ শুনতে পায়।

নীরা বলে,
-"নীলা কি হয়েছে? তুই কাঁদছিস কেন?"

অপরপ্রান্ত থেকে শুধু কান্নার আওয়াজই পাওয়া যায়।

-"আহা! বল না কি হয়েছে?"

-"দোস্ত আজকের পেপার পড়েছিস?"কান্না থামিয়ে নীলা জিজ্ঞেস করে।

-"হ্যাঁ পড়েছি। তোর ভবিষ্যৎ বাণী ঠিক ছিল।"

অপরপ্রান্ত থেকে আবার কান্নার ধ্বনি শুনতে পাওয়া যায়। নীলা কাঁদতে কাঁদতেই বলে,
-"আমার কারণেই ঐ বাচ্চা ছেলেটাকে মরতে হয়েছে।"

-"আজব! কি বলতেছিস এসব? তোর কারনে কেন ও মারা যাবে। তুই তো আর খুন করিস নাই। যে খুন করেছে তারই তো সব দোষ।"

-"কিন্তু আমি তো জানতাম। আমি যখন জানতাম তখনও বাচ্চাটা বেঁচে ছিল। আমি যদি কিছু করতে পারতাম! সবকিছুর জন্য আমিই দোষী।"

বলেই আবার নীলা কাঁদতে থাকে। নীরা ও-কে কিছু বলতে পারেনা। কেন যেন তারও সবকিছুর জন্য নিজেকে দায়ী মনে হতে থাকে।

চলবে...

দ্য এরা অফ্ লারা'স (𝐂𝐨𝐦𝐩𝐥𝐞𝐭𝐞𝐝 ✔︎)Où les histoires vivent. Découvrez maintenant