-আমি কিন্তু আপনার সিক্রেট জানি !!
নাদিবা এমন ভাবে আমার দিকে তাকিয়ে কথাটা বলল আমি খানিকটা ভয় পেয়ে গেলাম । ওর চোখ দেখেই মনে হল আসলেই ও এমন কিছু জানে যেটা ওর জানার কথা না । আমি তবুও নিজেকে খানিকটা শান্ত রেখে বললাম
-কি জানো তুমি ?
-আমি ভেবে দেখেন আমি কি জানতে পারি । আর যদি বিশ্বাস না করে তাহলে পরে টের পাবেন । লাইণটা বলে ও আবারও হাসলো । দুষ্টামী ভরা হাসি । আমি নিজের কাছেই খানিকটা অসহায় বোধ করলাম । মনে হল মেয়েটা আসলেই সত্যটা জেনে ফেলেছে ।
আমি হাল ছেড়ে দেওয়ার ভঙ্গী করে বললাম
-আচ্ছা ঠিক আছে । মানলাম যে তুমি জানো । এখন ?
-কি এখন ? এখন আব্বুকে বলে দিবো !
আমি বললাম
-নাহ ! তোমার আব্বুকে বলার কোন প্রকার ইচ্ছে তোমার নেই । কারন সেটা বলতে চাইলে তুমি এমনিতেই বলে দিতে । এখন বল কি চাও ?
নাদিবা আবারও সেই হাসি দিলো । তারপর বলল
-আপনি বুদ্ধিমান । কিছু তো একটা জিনিস চাই ই । তবে সেটার এখন বলবো না । আপাতত ৫০০ টাকা দিন ।
-মানে ?
-মানে একদম পরিস্কার । ৫০০ টাকা দিন ।
একবার মনে হল না করে দেই । আজকে দিলে পরে আবারও টাকা চাইবে । মিথ্যা যখন বলেছি তখন এর ফল তো ভোগ করতেই হবে। তারপর মনে হল থাক, দেখা যাক কতদিন এভাবে থাকা যায় । এই ঢাকা শহরে ব্যাচেলর বাসা ভাড়া পাওয়া কত যে কষ্টের একটা কাজ সেটা যে খুজেছে কেবল সেই জানে । সেই তুলনায় এই ৫০০ টাকা দিয়ে যদি আর কটা দিন থাকা যায় তাহলে সেটাই সই । আমি পকেট থেকে ৫০০ টাকা বের করে দিয়ে বললাম
-এটাই কিন্তু শেষ । আমি কিন্তু পরে টাকা দিতে পারবো না ।
নাদিবা টাকা নিতে নিতে বলল
-সেটা দেখা যাবে !
আর দাড়ালো না । দরজা দিয়ে বের হয়ে গেল । আমি ঠিক বুঝতে পারলাম না আমার এখন কি করা উচিৎ । শোভার সাথে একটু আলোচনা করে দেখবো ? নাহ, ওরই বা কি করার আছে !
নাদিবাদের বাসাতে আছি গত তিন মাস ধরে । বলতে গেলে ঢাকায় আসার পরে এতো সুখে আর কোথায় ছিলাম কি না আমার জানা নেই । অফিসের একদম কাছেই বাসা । হেটে গেলে মাত্র ৫ মিনিটেই অফিসে পৌছানো যায় । পানি গ্যাসের বিদ্যুতের কোন সমস্যা নেই । নাদিবার বাবা মানে বাড়িওয়ালা আঙ্কেলও খুবই ভাল । ভাড়াটিয়া দের সাথে তার সম্পর্ক খুব ভাল তিনি সবার সাথে খুব ভাল ব্যবহার করেন ।
সব কিছু ঠিক কেবল একটা সমস্যা । তিনি বাসায় ব্যাচেলর ভাড়া দেন না । তবুও আমি ভাসাটা ভাড়া নিয়েছি । সমস্যার কথা বললাম সেটা এখানেই । আমি একটু মিথ্যা করে কথা বলেই বাসাটা ভাড়া নিয়েছি । নাদিবার বাবাকে বলেছি যে আমি বিবাহিত । এবং বউ হিসাবে শোভাকে দেখিয়েছি ।
শোভা আমার ক্লাস মেইট এবং খুবই ভাল বন্ধু । একই সাথে পাশ করার পরে একই অফিসে কাজ করি আমরা । যখন আগের বাসাটাতে একটু ঝামেলা হচ্ছিলো থাকার জন্য তখনই এই বাসাটার খোজ পাই । সব কিছু ঠিক ছিল বাসা ভাড়া থেকে শুরু করে অন্য সব কিছু কেবল বিয়েটা নিয়ে ঝামেলায় বেঁধে গেল । বাড়িওয়ালা পরিস্কার জানিয়ে দিল যে অবিবাহিত কোন ছেলেকে তিনি বাসায় ভাড়া দিবেন না । তখনই মিথ্যা কথাটা বলে ফেললাম ।
বললাম যে বিয়ে হয়েছে কেবল উঠিয়ে নেওয়া বাকি । আকদ হয়ে আছে ।
আমার কথা শুনে একটু যেন মত বদলালো মনে হল কিন্তু পরে এই শর্ত দিল যে বউ নিয়ে আগে হাজির হতে হবে । নয়তো কাজ হবে না । একটু চিন্তায় ছিলাম যে বউ কোথায় পাই তখনই শোভা এগিয়ে এল সাহায্যের জন্য । ব্যস তখন থেকেই শোভা আমার বউ হিসাবে অভিনয় করে আসছে । অফিস টা যেহেতু কাছেই মাঝে মাঝে ও আমার বাসায় এসে হাজিরা দিয়ে যায় । বাড়িওয়ালা খুশি আমিও খুশি । তিনটা মাস খুব চমৎকার ভাবে কেটে গেল ।
আর আজকে এই নতুন ঝামেলা শুরু । অবশ্য সত্য একদিন না একদিন ঠিকই ঠিকই বের হয়ে যাবে এটা আমি জানতাম কিন্তু এতো জলদি হবে সেটা তো ভাবি নাই । তবুও মনে হল আপাতত মেয়েটা ওর বাবাকে কিছু বলবে না । বললে বলে ফেলতো এতোক্ষনে আর আমি মাল পত্র নিয়ে চলে যেতাম বাসার বাইরে । এখনও যখন বলে নি তবে দেখা যাক সামনে আরও কতদিন থাকা যায় ।
পর ঠিক রাত দশটার দিকে আবারো নাদিবা আমার ফ্ল্যাটের সামনে এসে হাজির । হাতে একটা কেক দেখে একটু অবাক লাগলো । আমি বললাম
-কি ব্যাপার ? কেক কিসের জন্য ?
-বারে টাকা দিলেন কেক খাবেন না ?
--টাকা আমি দেই নি তুমি নিয়েছো !
-ঐ একই কথা । যাই হোক আসুন কেক কাটি !
-কিসের জন্য ?
নাদিবা আমার দিকে তাকিয়ে বলল
-আজকে আমার জন্মদিন ছিল । কারো মনে নেই তাই ভাবলাম নিজের টা নিজেই সেলিব্রেট করি । পরে ভাবলাম নাহ আপনার সাথে কেক কাটা যাক !
এই বলে বসার ঘরের টি টেবিলের উপরে কেক টা রাখলো । আমার দিকে খুব স্বাভাবিক কন্ঠে বলল
-আপনার বাসায় মোমবাতি নেই ?
-আছে ।
-কোথায় ?
-রান্না ঘরে !
-আচ্ছা আমি নিয়ে আসছি ।
নাদিবা আবারও খুব স্বাভাবিক ভাবেই ঘরের ভেতরে চলাচল করতে লাগলো । যদিও আমি খানিকটা গুছিয়েই রাখি । আমার বাসা দেখলে ঠিক ব্যাচেলর বাসার মত মনে হয় না তার উপরে আমাকে মিথ্যাটা খানিকটা ঢাকতে হয় । ফ্যামিলি বাসার মতই আমার ফ্ল্যাট টা তবুও আমি তো জানি । এই বাসার ভেতরে একটা মেয়ে নিশ্চিন্তে ঘোরাফেরা করলে একটু তো অস্বস্থি তো লাগারই কথা । নাদিবা মোম আর ম্যাচ নিয়ে এসে আমার সামনে এসে বসলো । তখনই আমার মনে হল মেয়েটা মিথ্যা বলছে । আজকে মেয়েটার জন্মদিন নয় কোন ভাবেই । যতদুর জানি পরিবারের এক মাত্র মেয়ে ও । ওর জন্মদিনের কথা ওর বাবা মায়ের ভুলে যাওয়ার কথা নয় মোটেও ।
আমি বললাম
-আজকে তোমার জন্ম দিন নয় ।
-কে বলল আপনাকে ? শুনুন সবাই আপনার মত মিথ্যা বলে না ।
-আমি মিথ্যা বলি না ।
-তাহলে বাবাকে কেন মিথ্যা বলেছেন ?
-কেন বলেছি তুমি জানো খুব ভাল করেই ।
-তাহলে এখন আমি কেন মিথ্যা বলছি সেটাও আপনার জানা উচিৎ !
এই লাইনটা বলে নাদিবা বেশ কিছুটা সময় আমার চোখের দিকে তাকিয়ে রইলো এক ভাবে । আমি সেই চোখের দিকে বেশি সময় তাকিয়ে থাকতে পারলাম না । চোখ সরিয়ে নিয়ে বললাম
-এতো রাতে আমার ঘরে এসেছো তোমার বাবা মা জানলে সমস্যা হবে না ?
-উহু । আব্বুর মাথা ধরেছে । শুয়ে আছে । আর আম্মু নামাজে ! লম্বা সময় লাগবে ! আসুন তো, কেক কাটি । খুব কেক কাটতে ইচ্ছে করছে ।
এই বলে নাদিবা মোম বাতি জ্বালালো । তারপর উঠে গিয়ে লাইট অফ করে দিলো । ঘরের ভেতরে কেবল মোম বাতির আলো জ্বলে আছে । আমি টি টেবিলের একপাশে বসলাম নাদিবা বসলো অন্য পাশে । সত্যি বলতে কি অন্য রকম লাগলো । আমার দিকে তাকিয়েই নাদিবা কেক কাটলো তবে মোমবাতি নেভালো না । কেক কেটে একটা কেটের টুকড়ো আমার দিকে বাড়িয়ে দিল । আমি হাত দিয়ে নিতে চাইলে ও বলল
-উহু ! হাত দিয়ে নয় খাইয়ে দেই ।
-কেন ?
-কেন সমস্যা কি যদি আমি খাইয়ে দেই ?
-সমস্যা তো আছে । আসলে আমি তোমার আচরন টা ঠিক ধরতে পারছি না । তমি আমার কাছে কি চাচ্ছো ?
এই প্রশ্নের জবাব না দিয়ে নাদিবা কেবল হাসলো । কেকের টুকরো টা আমার দিকে আরেকটু বাড়িয়ে দিল । আমি এক কামড় দিলাম ।
নাদিবা বলল
-এই কেক টা কেন খাওয়ালাম জানেন ?
-না । কেন ?
-জানবেন !
এই বলে আবারও সেই রহস্যময় হাসি । আমি আসলেই মেয়েটার আচরনের মাথা মন্ডু কিছুই বুঝতে পারছিলাম না । তবে মেয়েটা কোন কারনে খুব বেশি খুশি হয়ে আছে । সেই কারন টা আমি ঠিক ধরতে পারছি না । কিংবা মেয়েটা নিজেও সেটা জানে না ।
নাদিবা বলল
-আপনার ঘরের এক্সট্রা চাবি আছে না ?
-কেন ? কি দরকার ?
-আহ ! আপনি খুব বেশি প্রশ্ন করেন । এতো প্রশ্ন করবেন না । বিশেষ করে আমার কাছে এতো প্রশ্ন করবেন না । ঐ ঘরের চাবিটা আমাকে দিবেন !
আমি কিছুই বুঝতে পারছি না আসলে নাদিবা কি করতে চাচ্ছে ! আমার সাথে এমন আচরনই বা কেন করছে ? এমন আচরন করাটা কোন ভাবেই আমারকাছে ভাল লাগছে না !তবে আমার কাছ থেকে ফ্ল্যাটের চাবি সে ঠিকই নিয়ে গেল ।
এরপর থেকে আমি যখনই বাসায় আসতাম ঠিকই বুঝতে পারতাম কেউ আমার বাসায় ঢুকেছিলো । কে ঢুকেছিলো সেটা বলার আর অপেক্ষা রাখে না । তবে আমি সেটা মেনে নিলাম । মেনে না নিয়ে অবশ্য কোন কিছু করারও ছিল না । নাদিবা আমার সিক্রেট টা জানতো । তবে মেনে নেওয়ার আরও একটা কারন ছিল যে মেয়েটা আমার বাসার চেহারা আস্তে আস্তে বদলে দিচ্ছিলো । বিশেষ করে মেয়েটা সব কিছু গুছিয়ে রাখতো । আর আমি প্রায়ই দিনেই বাসায় দেখতাম রান্না ঘরে নয়তো ফ্রিজে কিছু না কিছু রান্না করাই আছে । মানে ভারি কিছু না, হালকা নাস্তা কিংবা ডেজার্ট টাইপের কিছু ।
তবে সব চেয়ে মেজাজ গরম হত নাদিবা যখন আমার ফ্ল্যাটে ঢুকে পড়তো । কোন বারন শুনতো না । আরও মাস খানেক যাওয়ার পরে একদিন অফিস থেকে বাসায় ঢুকতে যাবো দেখি ভেতর থেকে দরজা আটকানো । বুঝতে পারলাম নাদিবা ভেতরে আছে । কয়েকবার কলিংবেল বাজানোর পরে ভেতর থেকে পায়ের আওয়াজ পাওয়া গেল । দরজা খুলল একটু পরেই । আমি নাদিবা কে দেখে একটু ধাক্কার মত খেলাম । মেয়েটা আজকে শাড়ি পরে আছে । তার উপর মাত্রই গোসল করেছে বুঝতে পারলাম । আমার দিকে তাকিয়ে খুব স্বাভাবিক ভাবে বলল
-গোসল করছিলাম । একটু সময় তো দিবেন নাকি ?
আমি সংকিত কন্ঠে বললাম
-এখানে কেন গোসল করছো ?
-আমাদের বাসায় মেহমান ভর্তি । বাধরুম খালি পাওয়া যাচ্ছে না ।
আমার নিজের ঘরই আমার কাছে কেমন যেন অরিচিত মনে হতে লাগলো । মেয়েটা পুরো ঘরের ভেতরে কেমন নিজের দখল কায়েক করে ফেলছে । তবে মাঝে মাঝেই ভয় পেতাম যে যদি ওর বাবা এসব জেনে ফেলে তাহলে কি হবে কে জানে !
মনের কথা মনেই রয়ে গেল । ঠিক তার পরের সপ্তাহে নাদিবার বাবা এসে আমাকে বাসা ছেড়ে দিতে বলল । আমি কারন জানতে চাইলেই তিনি চিৎকার করে উঠলেন । আমি কিভাবে তাকে বোকা বানিয়েছি সেটা বললেন । তারপর আমাকে এই মাসের ভেতর বাসা ছেড়ে দিতে বলল । আর বেশি কথা বললে কালকেই মাল পত্র নিয়ে আমাকে বাসা থেকে নামিয়ে দিবে এও বলল ।
আমার তো মাথায় হাত । জানতাম এমন একটা দিন সামনে আসবে । তবে এতো জলদি আসবে সেটা আমি বুঝতে পারি নি । সব কিছু যখন ভালই চলছিলো ।
রাতের বেলা নাদিবা মাথা নিচ করে আমার রুমে আসলো । ওর মন খারাপ দেখেই বুঝতে পারছি না । সত্যি বলতে কি আমার বাসা ছাড়তে হবে এটা ভেবে যতটা খারাপ লাগছে তার থেকেও খারাপ লাগছে নাদিবার কাছ থেকে চলে যেতে হবে এটা ভেবে । মেয়েটার ভেতরে অন্য রকম কিছু আছে । আমি চাইলেও সেটা থেকে দুরে থাকতে পারছি না কদিন থেকে । বিশেষ করে কেমন যেন আপন মনে হচ্ছে ওকে ।
ওকে আমার সামনে বসতে বসতে কাঁদতে শুরু করলো । আমি বলল
-আরে সমস্যা কিসের ? আমি তোমাদের বাসা ছেড়ে চলে যাবো, ঢাকা ছেড়ে তো আর যাচ্ছি না ।
-আমার জন্য আপনাকে চলে যেতে হচ্ছে । আমার জন্য !
-কেন ? তুমি আবার কি করলে ?
-আমি বাবাকে বলেছি যে আপনি বিবাহিত নন !
-সেকি কেন ?
-বাবা আমার বিয়ের জন্য ছেলে দেখছে । কোথাকার কোন আমেরিকা ফেরৎ ছেলে দেশে এসেছে বিয়ে করতে । আমাকে একখন তার গলায় ঝুলে পড়তে হবে ।
-তারপর ?
-আমি বললাম আমি ওকে কিছুতেই বিয়ে করবো না । আমি আপনাকে বিয়ে করবো ?
আমি নাদিবার কথা শুনে আকাশ থেকে পড়লাম ! বললাম
-তুমি এই কথা তোমার বাবাকে সরাসরি বলেছো ?
-আমি যেমন করে আমার দিকে তাকচ্ছেন বাবাও ঠিক একই ভাবে তাকিয়ে ছিল । বলল যে বিবাহিত মাননুষকে কেন বিয়ে করবি ?
-আর তখন তুমি বলে দিলে যে আমি বিবাহিত নই !
-সরি ! আমি আর কি বলতাম !
আমি আর কি বলব খুজে পেলাম না । একটু আগে মেয়েটাকে ছেড়ে চলে যাবো এই ভেবে খারাপ লাগছিলো এখন মেয়েটার উপর মেজাজ গরম হচ্ছে । মেয়েটার জন্য আমার এতো চমৎকার থাকার জায়গাটা ছেড়ে দিতে হবে ।
-সরি !
-সরি বললে সব সমাধান হয়ে যাবে ?
-না !
-তাহলে বলে কি লাভ ?
নাদিবা বাচ্চা মেয়ের মত মুখ আমার দিকে তাকিয়ে রইলো । আমি কি বলব খুজে পেলাম না ।চুপচাপ বসে রইলাম । কাল থেকে আবার বাসা খুজে বের করতে হবে !
মাসের শেষ দিনে নাদিবার বাবা এসে হাজির ! আমার ঘরে ঢুকে খুব অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো কিছুটা সময় । তারপর বলল
-কি ব্যাপার ? তুমি জিনিস পত্র গোসগাছ করছো না কেন ?
-কারন আমি যাচ্ছি না !
আমি ভেবেছিলাম নাদিবার বাবা আমার কথা শুনে রেগে যাবেন । তবে তিনি রেগে গেলেন না । আমার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে বললেন
-দেখি তুমি খুব ভাল ছেলে আমি জানি । তোমার সাথে আমি খারাপ ব্যব হার করতে চাই না । কালকের ভেতরে যদি বাসা না ছাড়ো তাহলে তোমাকে কিন্তু ....
তিনি আমাকে কি করবেন সেটা আর মুখ দিয়ে বললেন না । আমি বললাম
-আচ্ছা ভাড়াটিয়া হিসাবে আমি কেমন ছিলাম এই কয়মাসে একবার বলুন ? বাসা ছেড়ে দেওয়ার মত এমন একটা কাজও কি আমি করেছি ? বলুন করেছি ?
নাদিবার বাবা কিছু সময় আমার দিকে তাকিয়ে রইলো । ভাড়াটিয়া হিসাবে আমি আসলেই ভাল ছিলাম সেটা উনি কোন ভাবেই অস্বীকার করতে পারবেন না ।
নাদিবার বাবা বলল
-তুমি আমাকে মিথ্যা বলেছো ? আমার বাসায় কোন ব্যাচেলর থাকবে না !
-ব্যাচেলর না হলে সমস্যা নেই তো ?
-না ! নেই । কিন্তু তুমি ব্যাচেলর !
-কে বলেছে আপনাকে ?
-কে বলেছেন মানে ? নাদিবা বলেছে ! আমি খোজ নিয়েছি !
-তাই ? নাদিবা বলেছে ?
আমি জোরে নাদিবার নাম ধরে ডাকদিলাম । আমার ডাক শুনে নাদিবা আমার শোবার ঘর থেকে বের হয়ে এল । ওকে দেখে ওর বাবা আরও বেশি অবাক হয়ে গেল । উনি আসলে নাদিবাকে কোন ভাবেই এখানে আশা করে নি । আমি ওনাকে অবাক অবস্থায় থেকে আরও একটু অবাক করে দিতে নাদিবার দিকে তাকিয়ে বললাম
-তুমি নাকি বলেছো আমি অবিবাহিত ? তাই ?
নাদিবা একবার আমার দিকে তাকালো । তারপর ওর বাবার দিকে । তারপর ওর বাবার দিকে তাকিয়ে বলল
-না বাবা । ও অবিবাহিত না । বিবাহিত !
নাদিবার বাবার মাথায় কিছু ঢুকছে না । উনি আসলে ঠিক বুঝতে পারছে না কি হচ্ছে !
নাদিবা বলল
-আমরা গত সপ্তাহে বিয়ে করেছি বাবা !
আমি ভেবেছিলাম এই লাইণটা শোনার পর নাদিবার বাবা হুংকার দিয়ে উঠবে । কিন্তু তিনি কিছুই করলেন না । একবার আমার দিকে আরেকবার নাদিবার দিকে তাকাতে লাগলো । আমার তখনই মনে হল উনি এই ধাক্কাটা নিতে পারবেন না । সত্যি সত্যিই পারলেন না । ওনার পা দুটো একটু টলে উঠলো । আমি জলদি গিয়ে ওনাকে ধরে ফেললাম । নয়তো পড়ে যেতেন ।
আমার দিকে তাকিয়ে বললেন
-তোমরা এই কাজটা করতে পারলা ? আমি তোমাকে আমার ছেলের মত দেখতাম !
নাদিবে সামনেই দাড়িয়ে ছিল । ফট করে বলল
-বাবা আমরা সেই করেছি । তুমি ওকে ছেলের মত দেখতে আমি তোমার দেখাটা আরও একটু পাকা পোক্ট করে দিয়েছি । এখন কেবল জামাইয়ের মত দেখবা !
-এক থাপ্পড় দিয়ে দাঁত ফেলে দিবো । বেয়াদব । নিজের বিয়ের কথা বলতে লজ্জাও করছে না !
আমি আমার সদ্য হওয়ার শ্বশুর মশাইকে আমার সোফায় উপরে বসিয়ে দিলাম । শকটা আপাতত কাটিয়ে উঠেছে মনে হচ্ছে । তবে আমার মনে হয় না উনি আর বেশি চিৎকার চেঁচামিচি করবেন । কারন জামাই হিসাবে আমি মোটেই খারাপ নই । আমি নাদিবার বাবাকে বললাম
-আমি কি আমার বাবার নাম্বারটা আপনাকে দিবো ? বাবা আপনার সাথে গত সপ্তাহ থেকেই কথা বলতে চাইছেন । ওনাদের সামনেই আমি নাদিবাকে বিয়ে করেছি । আন্টিও ছিল !
নাদিবার বাবা আমার দিকে তাকিয়ে বলল
-আন্টি মানে ?
আমি কি জবাব দিব, তার আগেই নাদিবা বলল
-তোমার বউ বাবা !!
আমি নাদিবার দিকে তাকালাম । মেয়েটার ভেতর থেকে এখনও ছেলে মানুষী গেল না ।
নাদিবার বাবা বলল
-বাহ । সবাই দেখি জানে ! কেবল আমিই জানি না ! বাহ খুব ভাল ! তাহলে আমি একা আর কি করবো !
তারপর কিছু সময় চুপ থেকে বলল
-দাও নাম্বার দাও । কথা বলি !!
পরিশিষ্টঃ
আমাকে আর বাসা বদলাতে হয় নি । এর পর থেকে আমাকে আর বাসাও ভাড়া দিতে হয় নি অবশ্য । যদিও এখনও ওকে তুলে নেই নি । বলেছি আগে ওর পড়ালেখা শেষ হোক তারপর না হয় ধুমধাপ করে করে বিয়ে হবে । ততদিন পর্যন্ত আমি বিবাহিত ব্যাচেলর হয়েই থাকি !
YOU ARE READING
ভালবাসার অনু-গল্প সমগ্র
Romanceআমি সব সময় ভালবাসার গল্প লিখতেই পছন্দ করি । ছোট ছোট এক দুই দৃশ্যের গল্প গুলো পড়তে এবং লিখতে খুবই ভাল লাগে । এইখানে তেমন গল্প গুলোই পোস্ট হবে । প্রত্যেক পর্বে আসবে নতুন নতুন গল্প । ছোট ছোট ভালবাসার গল্প । যখনই লিখবো তখনই পোস্ট করা হবে ! ছোট ছোট গল্প...