মেঘলা চোখ খুলে প্রথমে বুঝতে পারলো না ও কোথায় আছে । মাত্র কয়েক সেকেন্ড লাগলো ওর সব কিছু মনে করতে । সাথে সাথেই মনে পড়ে গেল অজ্ঞান হওয়ার আগে কি ঘটেছিলো ।
ওদের অফিস বিল্ডিং এ আগুন লেগেছিলো । মেঘলাদের অফিসটা একটু বেশিই আইসোলেটেড ! জানলাতে ভারী পর্দা দেওয়া । বাইরে থেকে কোন আলো আসে না । জানলা গুলোতে আলাদা ভাবে সাউন্ডপ্রুফ গ্লাস লাগানো । বাইরে থেকে কোন আওয়াজও ভেতরে আসে না । বাইরে থেকে খুব একটা আওয়াজ আসে না ভেতরে । তাই নিচের ফ্লোরে আগুন লাগার বেশ কিছু সময় ওরা টেরই পায় নি যে আগুন লেগেছে । যখন ফায়ার এলার্ম বেজে উঠলো তখন ধোয়াতে ভরে গেছে পুরো বিল্ডিং । লিফট বন্ধ হয়ে গেছে ।
ওদের অফিসের যে যেমন করে পেয়েছে নিচে সিড়ি দিয়ে নেমে গেছে । নয়তো উপরে উঠে গেছে । মেঘলাও বের হতে গিয়েছিলো । কিন্তু পারে নি । ওর একটু শ্বাস কষ্ট আছে । ধোয়াতে একদম নিঃশ্বাস নিতে পারে না । সিড়ি অনেকটাই ধোয়াতে ভরে গিয়েছিলো । জীবনের মায়া সবারই আছে । দম বন্ধ করে করে মেঘলা একটু নামতেও গিয়েছিলো কিন্তু পারে নি । সিড়িতে অজ্ঞান হয়ে পরেছিলো । জ্ঞান হারানোর আগে ওর কেবল ওর মায়ের মুখটা দেখতে ইচ্ছে করছিলো ।
আর এখন জ্ঞান ফিরে এসে ও নিজেকে মেঝেতে আবিস্কার করলো । ওর মুখের সামনে একটা পরিচিত মুখ উদ্বিগ্ন ভাবে তাকিয়ে আছে । মেঘলা একটু অবাক না হয়ে পারলো না । ও কোন দিন রিয়াদকে এখানে আশা করে নি ।
মেঘলা খানিকটা উঠে বসতে বসতে বলল, আমরা কি মারা গেছি ?
রিয়াদ শব্দ করে হেসে উঠলো । তারপর বলল, না এখনও মরি নি । তবে বেশি দেরি নেই । আগুন উঠে আসছে দ্রুত !
মেঘলা ভীত চোখ তাকিয়ে রইলো রিয়াদের দিকে । তারপর চারিদিকে তাকিয়ে দেখলো । ওর ওয়াশ রুমে বসে আছে । রিয়াদ বলল, আপাতত এটাই সব থেকে নিরাপদ স্থান মনে হচ্ছে । ওয়াশরুমের উপরে স্টোর রুম থাকে । উপরে নিচ উভয়ই । সেই হিসাবে সব থেকে শক্ত কাঠামোর একটা । এখানে আগুন পৌছাতে একটু সময় লাগবে !
মেঘলা দেওয়ালে হেলাম দিয়ে বসলো । এখন খানিকটা সুস্থবোধ করছে । সেই সাথে একটু সাহসও লাগছে মনে । একটু আগে যখন আগুনের কথা শুনে সবাই পালিয়ে পাচ্ছিলো মেঘলার নিজেকে বড় অসহায় লাগছিলো । কেউ কারো দিকে তাকাচ্ছে না । সবাই কেবল নিজের জীবন বাঁচাতে ব্যস্ত । এমনটাই সম্ভবত হয় । নিজের জীবনটাই সব থেকে মূল্যবাস সব সময় । শাহেদের কথা মনে হতেই মেঘলার মন খানিকটা খারাপ হল । ও যখন অফিস থেকে বের হচ্ছিলো তখন কি মেঘলার কথা ভেবেছিলো ? মেঘলা আশা করেছিলো অন্তত সিড়ি দিয়ে নামার সময় শাহেদ ওর হাত ধরে থাকবে । হাত ধরে থাকলে মেঘলা হয়তো নিচে নামতে পারতো !
YOU ARE READING
ভালবাসার অনু-গল্প সমগ্র
Romanceআমি সব সময় ভালবাসার গল্প লিখতেই পছন্দ করি । ছোট ছোট এক দুই দৃশ্যের গল্প গুলো পড়তে এবং লিখতে খুবই ভাল লাগে । এইখানে তেমন গল্প গুলোই পোস্ট হবে । প্রত্যেক পর্বে আসবে নতুন নতুন গল্প । ছোট ছোট ভালবাসার গল্প । যখনই লিখবো তখনই পোস্ট করা হবে ! ছোট ছোট গল্প...