দ্বীপ ও তার আম্মুর গল্প

1.4K 37 0
                                    

বিছানাতে কয়েকবার গড়াগড়ি দিয়ে উঠে পড়লো মিতু। ঠিকই বুঝতে পেরেছে ওর ঘুম আসবে না। চোখের পাতা এক করলেই দ্বীপের নিষ্পাপ বড় বড় চোখ গুলো ওর সামনে চলে আসছে। পিচ্চি বাবুটা কি গভীর ভাবে ওর দিকে তাকিয়ে ছিল। মিতু কিছুতেই সেই দৃষ্টি ভুলতে পারছে না। আজ এতোদিন পরে আবার সেই হাহাকারটা জেগে উঠলো। ও যে কোন দিন মা হতে পারবে না, এই সত্যটা ও মেনে নিয়েছিল। কাজের মধ্যে ডুবে থেকে সেই সত্যকে ভুলে থাকতে চেয়েছিল কিন্তু একটা মেয়ের জন্য এর থেকে বড় না পাওয়া আর কিছু হতে পারে না। সেটাই মাঝে মাঝে ওর সামনে চলে আসে। আজ যেমন এল। দ্বীপ নামের ঐ বাচ্চা ছেলেটাকে যতবার দেখে ততবার এমনই মনে হয়। নিজেকে বড় অসহায় মনে হয়।

ও যে কোন দিন মা হতে পারবে না এটা মিতু অনেক আগে থেকেই জানতো। মেডিক্যালে ভর্তির অন্যতম কারনই ছিল এটা। শিশু বিশেষজ্ঞ হয়ে বাচ্চাদের আশে পাশে থেকে মাতৃত্বের স্বাদ ভুলে থাকার চেষ্টা করে যাচ্ছিলো। বিয়ে করেছিল তবে সেটা টেকে নি খুব বেশি দিন। এই দেশে একটা মেয়ে মা হতে পারবে না আর সুখে শান্তিতে সংসার করবে তা কি হতে পারে!

সব কিছু ছেড়ে দিয়ে কেবল নিজের কাজ নিয়েই ব্যস্ত থাকতো। হাসপাতালের কাছেই ছিল বাসা, ডিউটির পরে নিজেত চেম্বার, অন্যের বাচ্চাদের চিকিৎসা করতো, বাচ্চাদের আশে পাশে থাকতো, এইতো চলে যাচ্ছিলো।
কিন্তু ঝামেলা বেঁধে গেল ওর কয়েক তলা ওপরে থাকা একটা বাচ্চাকে নিয়ে। প্রথম যেদিন দ্বীপকে ওর চেম্বারে আনা হয় সেদিন বাচ্চাটা খুব কাঁদছিল। সাথে ওর দাদী ছিল। মা কোথায় জানতে চাইলেই জানা গেল, জন্মের সময়ই দ্বীপের মা মারা গেছে। দাদীই ওকে দেখা শুনা করে কিন্তু দাদীর কাছে থাকতে চায় না। ওর বাবা ছাড়া আর কারো কাছেই থাকতে চায় না। খুব কান্নাকাটি করে।
ঠান্ডা লেগেছিল দ্বীপের। খুব কাঁদছিল দেখে মিতু বাচ্চাটাকে কোলে নিল আর আশ্চর্যজনক ভাবে দ্বীপের কান্না থেমে গেল। বড় বড় চোখ নিয়ে তাকিয়ে দেখতে লাগলো মিতুর দিকে। মিতুও কিছু সময় অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো বাবুটার দিকে। দ্বীপের দাদীও অবাক হলেন। তিনি জানালেন যে এমনটা কখনই হয় নি।
তারপর আরও দুবার এসেছে দ্বীপ ওর চেম্বারে। আজকে দ্বীপের বাবা নিয়ে এসেছিল ওকে। দ্বীপের ঠান্ডার সমস্যাটা যাচ্ছে না কিছুতেই। আরও কিছু করতে হবে কি না সেটা জানতে। সারাটা সময় দ্বীপ মিতুর সাথে খেলা করছিল, ওর হাত কামড়ানোর চেষ্টা করছিল, ওকে ধরে নাচানাচি নড়াচড়া করেই যাচ্ছিলো। বাচ্চারা যেমনটা মায়ের সাথে করে ঠিক তেমন। মিতুর এতো ভাল লাগছিল যে বলে বোঝাতে পারবে না। ইচ্ছে করছিল আজকের সব কাজ ফেলে দিয়ে সারা দিন দ্বীপের সাথেই খেলা করে।

ভালবাসার অনু-গল্প সমগ্রWhere stories live. Discover now