প্রেমপত্র

1.1K 23 4
                                    

প্রিয় নিশি, তোমাকে যত.....

রফিক স্যার চিঠিটা আমার দিকে ধরে বলে উঠলো
-এই ডিজিটাল যুগে তুই চিঠি নিয়ে ঘুরিস কোন আক্কেলে? তুই দেখি ছাগলই রয়ে গেলি।

পুরো ক্লাস হিহি করে হেসে উঠলো। সব থেকে বেশি জোড়ে হেসে উঠলো আদিল। অথচ এই চিঠিটা ওর নিজের লেখা। বেটা কদিন থেকে নিশিকে দেওয়ার চেষ্টায় আছে কিন্তু সাহসে কুলাচ্ছে না বলে আমাকে দিয়ে পাঠিয়েছে। আর কপাল খারাপ হলে যা হয়, সেটা পড়েছে রফিক স্যারের হাতে।

কিন্তু চিঠিটা স্যারের হাতে কিভাবে পৌছালো আমি বুঝতে পারছি না। চিঠিটা আমার পকেটে ছিল। কয়েকবার আমি ক্লাশ ছেড়ে অবশ্য বাইরে বের হয়েছিলাম। তখন হয়তো কোন ভাবে পকেট থেকে পড়ে গিয়েছে। আর সেটা স্যার সেটা পেয়েছেন।
তবে সবাই হাসাহাসি করলেও নিশির দিকে তাকিয়ে দেখি মেয়ে কেমন ছলছল চোখে তাকিয়ে আছে। এখনও যেন বিশ্বাস করতে পারছে না যে আমি চিঠি লিখেছি ওকে।

পুরো ক্লাসের হাসি থামলে আমি কাছুমাছু করে বললাম
-স্যার এই চিঠি আমার না।
রফিক স্যার বলল
-একদম মিথ্যা বলবি না। আমি নিজে দেখেছি তোর পকেট থেকে এই কাগজ পড়েছে। ক্লাস সিক্সের ক্লাসের সামনে।

আমি কি বলবো খুজে পেলাম না। চিঠি যে আমার পকেট থেকে পড়েছে সেটা অস্বীকার করার উপায় নেই। আমি আবার বললাম
-স্যার এই চিঠি আমি লিখি নাই। বিশ্বাস করেন!
স্যার কি বলবে তার আগে পেছন থেকে একজন বলে উঠলো
-স্যার ধরা পড়ে এখন কত কথাই বলবে! বিশ্বাস করবেন না।

কথাটা আর কেউ না, বলল স্বয়ং বলল আদিল। আমি কিছুটা সময় অসহায় চোখে আদিলের দিকে তাকিয়ে রইলাম। এখন যদি আমি বলি চিঠিটা আসলে আদিলই লিখেছে তাহলে আমার কথা কেউ বিশ্বাস করবে না।
স্যার হাসি হাসি মুখ নিয়ে বল
-চিঠি যখন লিখেছিল তাহলে হাতে লিখিস নি কেন? কম্পোজ কেন করেছিস? তুই দেখি আসলেই ছাগল! প্রেম পত্র কেউ কম্পোজ করে!

পেছন থেকে আবারও আদিল বলে উঠলো
-স্যার ওর হাতের লেখা খারাপ। তাই কম্পোজ করেছে।

আবারও হাসির রোল উঠলো। আমি চোখ গরম করে আদিলের দিকে তাকালাম। আজকে আদিলের সাড়ে দশটার খবর আছে সেটা চোখের ইশারায় ওকে বুঝিয়ে দিলাম। স্যারের দিকে তাকিয়ে মনে হল সত্যি কথাটা বলে দেই কিন্তু সেটাতে খুব একটা লাভ হবে না। স্যার বিশ্বাস করবে না। আমি বললাম
-স্যার বিশ্বাস করেন চিঠিটা আমি লিখি নাই। আমাদের পাড়ার মোস্তফা ভাই লিখছে আমাদের বাড়িওয়ালার মেয়েকে। আমি নিতে চাই নি কিন্তু জোর করে দিয়েছে। আমি কি করবো বলেন!

রফিক স্যার তবুও বিশ্বাস করলেন না। বললেন যে আমার বাসায় বিচার দিবেন। আমি চুপচাপ বসে রইলাম। আর মনে মনে ঠিক করে নিলাম আদিলের আজকে খবর আছে। সত্যিই খবর আছে।

কিন্তু ছুটির পরে আদিল যে কোথায় গায়েব হয়ে গেল বুঝতেই পারলাম না। অনেকক্ষণ অপেক্ষা করার পরেও যখন আদিলের খোজ পেলাম না তখন বিরক্ত হয়ে বাড়ির পথ ধরলাম। যদিও খানিকটা ভয় লাগছিল। যদি রফিক স্যার বাড়িতে রিপোর্ট করে তাহলে সত্যিই আমার খবর আছে।

রাস্তা দিয়ে একা একা হাটতেছি ঠিক সেই সময়ই আমার পাশ ঘেসে একটা রিক্সা এসে থামলো। আরেকটু হলে আমার সাথে ধাক্কাই লেগে যেত। কিছু বলতে যাবো তার আগেই দেখি রিক্সার ভেতর থেকে আওয়াজ এল
-উঠে আসো!
আমি বড় রকমের ধাক্কা খেলাম। রিক্সার ভেতরে নিশি বসা। আমি রোবটের মত ওর পাশে গিয়ে বসলাম। রিক্সা আবার চলতে শুরু করলো।

কিছুটা সময় কেটে গেল চুপচাপ। তারপর নিশি আমাকে একটা কাগজ বের করে দিয়ে বলল
-তোমার মত গাধা আমি আসলেই দেখি নি। তুমি চাকরির দরখাস্ত লিখছ যে কম্পোজ করেছো?
আমি কি বলবো খুজে পেলাম না। নিশি আবার বলল
-রফিস স্যারের কাছে অনেক রিকোয়েস্ট করে এটা ফেরৎ নিয়ে এসেছি। আর যেন এমন বোকামি না হয়!

আমি এবারো চুপ। বাসার চিন্তা থেকে মুক্ত হয়ে ভাল লাগছে। এখন কেবল আদিলকে একটা প্যাঁদানি দিলেই সব ঠিক হয়ে যাবে। নিশি তারপর বলল
-আর তোমাদের বাড়িওয়ালার নাম তো সাদিয়া। নিশি হল কবে থেকে? এই চিঠি আমাকেই লেখা?

আমি কোন কথা না বলে কেবল মাথা দোলালাম। নিশি বলল
-এবার থেকে আর যেন কম্পোজ না করা হয়। হাতে লিখবা!
আমি ঘাড় কাত করে বললাম
-আচ্ছা!

তারপরই মনে হল, নিশি কি বলল! হাতে লিখতে বলল? চিঠি! আমি ওর দিকে তাকিয়ে দেখি নিশি অন্য দিকে তাকিয়ে আছে। আমার দিকে না তাকালেও ওর চোখের একটা পাশ আমি ঠিকই দেখতে পাচ্ছি। সেখানে বিন্দু পরিমান চিকচিক করার চোখের জলও আমার চোখ এড়ালো না।

আমি আর কোন কথাই বলতে পারলাম না। কেবল ওত নরম তুলতুলে হাতটা নিজের হাতের ভেতর নিলাম। সকাল বেলা কেন এই মিনিট কুড়ি আগেও আমি জানতাম না যে নিশির সাথে আমার এমন কিছু এমন ভাবে শুরু হয়ে যাবে। আদিলকে প্যাঁদানি দেওয়ার প্রতিজ্ঞা থেকে সরে এলাম। বেটাকে কাল আইসক্রিম খাওয়াতে হবে। ও না থাকলে তো এসব কিছু হতই না।

---------
রিক ভাইয়ের গল্প পড়ে এই গল্প লিখতে ইচ্ছে হল। থিম তার গল্প থেকে ধার করা।

www.facebook. com/ opu.tanvir.1/posts/2166089763612114

ভালবাসার অনু-গল্প সমগ্রWhere stories live. Discover now