সুমন অনেকটা সময় বসুন্ধরা সিটিতে বসে আছে । অন্য সময় হলে হয়তো সে বিরক্ত হয়ে যেত কিন্তু আজকে তার মোটেই বিরক্ত লাগছে না । বরং অপেক্ষা করতে ভাল লাগছে । জীবনে প্রথম কোন মেয়ের জন্য সে অপেক্ষা করছে এখানে। আইরিনের সাথে বিয়ে ঠিক হওয়ার পর এই প্রথম তারা এক সাথে কোথাও দেখা করতে যাচ্ছে । বাসার কেউ জানে না । অনেকটা লুকিয়ে প্রেম করে দেখা করার মত অনুভুতি হচ্ছে ।
বাসা থেকেই আইরিনকে পছন্দ করা হয়েছে । প্রথমে একটু ছবি দেখানো হয়েছে । তারপর যেদিন দেখতে যাবে সেদিনই ওদের একটু কথা হয় । তাও আবার সবার সামনে । সুমনের আইরিনকে দেখে বেশ ভালই লাগে । মেয়েটা দেখতে বেশ সুন্দর তবে সুমনের কেন জানি মনে হল কিছু একটা ঠিক নেই । কিছু একটা সমস্যা আছে ! তবে চারিদিকের পরিবেশ এমনই ছিল যে সব কিছু ভুলে গেল মুহুর্তেই । সুমনের ইচ্ছে ছিল আইরিনের সাথে আরও কিছু সময় কথা বলে কিন্তু সে সুযোগ তাকে আর দেওয়া হল না । তাই আজকে অফিস থেকে বের হয়ে আইরিনের নাম্বারে ফোন দিল ও । বলল যে দেখা করতে চায় । তবে বাসায় কাউকে যেন এই দেখা করার কথা না বলে ও । তাহলেই হবে । আইরিনই রাজি হয়ে গেল । বলল যে ও একটু পরেই বাসা থেকে বের হচ্ছে !
তারপর থেকেই সুমন অপেক্ষা করেই আছে । বসুন্ধরাতে এই সময় প্রচুর ভীড় । মানুষ যেন আসছে আর আসছে । সুমন আবারও একটু এদিক ওদিক দেখতে লাগলো কিন্তু আইরিনের কোন দেখা নেই । মেয়েটা এতো সময় নিচ্ছে কেন ? এতো তো সময় লাগার কথা না !
ফোন দিতে যাবে ঠিক সেই সময়েই আইরিনের ফোন এসে হাজির । ফোনটা টা রিসিভ করলো । হ্যালো বলেই বলল, কোথায় আপনি ?
আইরিন বলল, "আপনি কোথায় ? আমি তো চলে এসেছি । আট তলাতে ।"
"আমিও তো আট তলাতে ।"
"কোথায় আছেন আপনি ?"
"আপনি যেখানে আছেন আমাকে বলেন আমি আসছি ।"
আইরিন বলল, "দেখেন সিনেপ্লেক্সের টিকিট কাউন্টারের সামনে । নীল রংয়ের ড্রেস পরে আছি ।"
সুমনের মনটা আনন্দে ভরে উঠলো । ঐ তো দেখা যাচ্ছে মেয়েটাকে । নীল রংয়ের সেলোয়ার কামিজ পরা ! আরেকটু এগিয়ে গেল । কিন্তু যখনই মেয়েটা একটু ঘুরলো তখনই সুমনের চোখ চরখগাছ ! এই মেয়ে কে ? আইরিন নাকি ?
কি সর্বনাশ ! এই মেয়েকে তো তারা সেদিন দেখে নি ।
কোথাও কি ভুল হচ্ছে ! হতে পারে । সুমন তখনই একটু আড়ালে চলে গেল পাশের বড় দোকানটার ! তারপর নিশ্চিত হওয়ার জন্য আবারও ফোন দিল । দেখলো হ্যা মেয়েটাই ফোন রিসিভ করলো ! মানে এই মেয়েটাই আইরিন !
সুমনের কানে তখনও ফোনটা রয়েছে । ফোনের ওপাশ থেকে তখনও আওয়াজ আসছে, হ্যালো কই আপনি !
সুমন কিছু শুনতে পেল না যেন । তখনই বুঝে গেল সেদিন আসলে কি ঠিক মনে হচ্ছিলো না । সেদিন যখন মেয়ে দেখতে গেছিলো তখন আইরিন ভারী মেকাপ দিয়ে এসেছিলো ওর সামনে । মনে হচ্ছিলো যেন পুতুলের সামনে বসে আসলে । সব আসলে কৃত্রিম । কিছুই সতয় নয় ! এতো বড় বাটপারি ! সুমন শুনেছিলো মেকাপ দিয়ে নাকি দিনকে রাত আর রাত কে দিন বানানো যায় কিন্তু ব্যাপারটা যে এমন হবে সেটা বুঝতেই পারে নি । কি মেয়ে দেখে এসেছিলো আর এই মেয়ে কে ? আইফোনের প্যাকেটে ওয়াল্টনের ফিচার ফোন পাওয়ার মত ।
সুমন তখনই ফোন বন্ধ করে দিল । আর এখানে থাকা যাবে না । এখানে পালাতে হবে । কেবল এখান থেকেই না এই মেয়ের কাছ থেকে পালাতে হবে ! কিন্তু যখন দোকানের আড়াল থেকে বের হয়ে এল তখন আইরিন ওকে দেখে ফেলল । ওর নাম ধরে ডাক দিতেই সুমন যেন চমকে উঠলো । তারপর আর কোন দিকে না তাকিয়ে সোজা দোড় দিল সিড়ির দিকে । কিভাবে যে গেট দিয়ে বের হয়ে এল সেটা কেবল ও ই জানে । সিএনজি কিংবা রিক্সার জন্য অপেক্ষা না করে দৌড়েই রাস্তা পার হয়ে পান্তপথ সিগনালের কাছে চলে এল । চলন্ত এক বাসে উঠে পড়লো ।
তারপর থেকেই মনে মনে সিন্ধান্ত নিলো ছবি দেখে আর মেয়ে পছন্দ নয় । আগে সরাসরি মেয়েকে দেখতে হবে তারপর কথা বার্তা এগোবে ! তা না হলে খোলসের ভেতরে কি থাকবে কে জানে ! বিয়ের পর দিন সকালে সে কোন ভাবেই হার্ট এটাকের শিকার হতে চায় না !
YOU ARE READING
ভালবাসার অনু-গল্প সমগ্র
Romanceআমি সব সময় ভালবাসার গল্প লিখতেই পছন্দ করি । ছোট ছোট এক দুই দৃশ্যের গল্প গুলো পড়তে এবং লিখতে খুবই ভাল লাগে । এইখানে তেমন গল্প গুলোই পোস্ট হবে । প্রত্যেক পর্বে আসবে নতুন নতুন গল্প । ছোট ছোট ভালবাসার গল্প । যখনই লিখবো তখনই পোস্ট করা হবে ! ছোট ছোট গল্প...