তিয়াসা সাধারনত ফোনে খুব কড়া করে কথা বলে । শুরু থেকেই । তার নাকি প্রেমিকের সাথে ন্যাঁকা ন্যাঁকা করে কথা বলতে কেমন অসহ্য লাগে । আমি বললাম
-তাই বলে আমার সাথে এমন স্কুলের মহিলা হেডমাস্টারের মত ধমক দিয়ে কথা বলবা ?
-হুম । কিছু করার নেই । ইচ্ছে বল নয়তো আমাকে বদলে ফেলো ।
কত সহজে কথা গুলো বলে ফেলল । ইচ্ছে হলে বদলে ফেলো । মনে মনে বললাম যদি ইচ্ছে হলে বদলেই ফেলতেই পারতাম তাহলে তো কাজই হত । নতুন কাউকে খুজে নিতাম ।
যাক আমি সেটা মেনে নিয়েছি । অন্যান্য বন্ধুরা যখন নিজেদের প্রেমিকার সাথে লুটুপুটু কথা বলে ভাসিয়ে ফেলতো আমি তখন স্কুলের হেড মাস্টারের বকা শুনতান । অবশ্য সেই বকা শোনার ভিতরেও একটা অন্য রকম আনন্দ ছিল ।
কিন্তু আজকে যখন তিয়াসা কন্ঠ শুনলাম তখন মনে হল কিছু যেন একটা ঠিক নেই । কিছু একটা সমস্যা হয়েছে । ও তো এতো নরম সুরে কথা বলে না । বললাম
-কি হয়েছে ?
ওপাশ থেকে নিরবতা কিছুটা সময় । আমি অস্থির হয়ে আবার জানতে চাইলা
-কি হয়েছে ? হ্যালো ।
-অপু ।
-হুম ।
-গতকাল আমার বিয়ে হয়ে গেছে ।
প্রথমে মনে হল আমি যেন ভুল শুনছি । কিছুই মাথায় এলো না । কিভাবে গত কাল বিয়ে হয়ে যেতে পারে । গত পরশুদিন সন্ধ্যা বেলাতেও না আমাদের দেখা হল । এক সাথে বসে বাদাম খাচ্ছিলাম লেকের পাড়ে বসে । আর আজকে বিয়ে ।
মানে কি !
আমার মাথায় কিছু আসছিল না । কিছু না । মনে হচ্ছিল আমি যেন এখনই অজ্ঞান হয়ে যাবো । কিছু কাজ করছিল না । আমি ফোন রেখে আকাশের দিকে ভাবতে লাগলাম কি হল ।
একটূ পরেই দেখি তিয়াসা আমার সামনে এসে হাজির ।
একটা নীল রংয়ের শাড়ি পরেছে । চুল গুলো ছাড়া, কপালে একটা টিপ দেওয়া ।
তিয়াসা বলল
-আমি নিচে দাড়িয়ে তোমাকে ফোন দিয়েছিলাম । সরাসরি কথা টা বলতে সাহস হয় নি ।
এই টুকু বলেই তিয়াসা চুপ করে রইলো । আমি কিছু বুঝতে পারছিলাম না । আমার মাথা তখন কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে । আমি তিয়াসা কে বললাম
-আমি কিছু জানি না । তুমি আমার । কেবল আমার । আমি কাউকে তোমাকে হতে দিবো না । তুমি চল আমার সাথে সাথে ।
-অপু । এ হয় না । অপু ।
দেখলাম তিয়াসা আমার থেকে দুরে চলে যাচ্ছে । আমি কেবল ওর ডাক টা শুনতে পাচ্ছি । কেবল ডাক টা
অপু ।
অপু ।
অপু ।
ধড়ফড় করে ঘুম থেকে জেগে উঠলাম । তাকিয়ে দেখি স্যার আমাকে ডাকছে । পুরো ক্লাস আমার দিকে তাকিয়ে আছে । আমি বোকার মত একদিক ওদিক তাকিয়ে রইলাম কিছুক্ষন । তারপর স্যার দিকে তাকিয়ে দেখি স্যার বলল
-আমার ক্লাস কি এতোই বিরক্তিকর যে ঘুমিয়ে পড়তে হবে ? নাকি কাল সারা রাত অন্য কিছু করেছো ?
ক্লাসে একটা হাসির রোল পড়ে গেল । তাকিয়ে দেখি তিয়াসাও হাসছে ।
ক্লাস শেস করে তিয়াসা হাত ধরে ওকে চার তলায় নিয়ে গেলাম । বলা চলে একেবারে ওকে টেনেই নিয়ে এলাম চার তলা । এটা আমাদের ডিপার্টমেন্টের লাভ জোন । কাপলদের কথা বলার স্থান । তবে আজ এখানে এখনও কেউ ছিল না । পুরো ফ্লোরটা ফাঁকা । ওকে কোন কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে জড়িয়ে ধরলাম ।
ওর যে বিয়ে হয়ে গেছে সেই স্বপ্নটা দেখার পর থেকে বুকটার ভিতরটা কেমন লাফালাফি করছিল । তিয়াসা আমার আচরনে খানিটা অবাক হল বটে কিন্তু কিছু বলল না । আমি সাধারনত এমন আচরন করি না ।
যখন ওকে ছেড়ে পাশের বেঞ্চে বসলাম ও নরম সুরেই বলল
-কি হয়েছে ? অস্থির কেন এতো ?
বললাম
-তুমি আমার সাথে নরম সুরে কথা বল না প্লিজ । ভয় লাগে । মহিলা হেডমাস্টারের সুরেই কথা বল । কেমন ! ওতাঈ ভাল !
তিয়াসা কি বুঝলো কে জানে । কেবল হাসলো । ওর হাসি দেখে একটু হলেও ধড়ফড়ানী কমলো বুকের ভিতর ।
أنت تقرأ
ভালবাসার অনু-গল্প সমগ্র
عاطفيةআমি সব সময় ভালবাসার গল্প লিখতেই পছন্দ করি । ছোট ছোট এক দুই দৃশ্যের গল্প গুলো পড়তে এবং লিখতে খুবই ভাল লাগে । এইখানে তেমন গল্প গুলোই পোস্ট হবে । প্রত্যেক পর্বে আসবে নতুন নতুন গল্প । ছোট ছোট ভালবাসার গল্প । যখনই লিখবো তখনই পোস্ট করা হবে ! ছোট ছোট গল্প...