জীবন মানেই রঙ থাকতে হবে এমন তো কোন কথা নেই। ধূসর ভাবেও তো বাচা যায়? অনেকের জীবন ই তো বেরঙিন তারা বাচতে পারলে আমি কেনো এই ধূসর রঙ নিয়ে বাচতে পারবো না? এই ভাবনা গুলো নিয়ে বেচে আছে আবির।পূরো নাম আবরার ইশতিয়াক আবির।পেশায় একজন ব্যাবসায়ী।আর দেশে খ্যাত এজ এ ইয়ং বিজনেস টাইকোন। কিন্তু এ খ্যাতি তার কখনই ছিলো না। আবির তো খ্যাত ছিলো একসময়ের নামকরা প্লেবয় হিসেবে। মেয়ে বদলিয়ে জীবন যাপন করাই ছিলো তার নেশা।যে আবির জানতো ভালোবাসা মানে শরীর পাওয়া মন নয়।সে আবির ও অবশেষে অবলোকন করে হ্যা ভালোবাসা মানেই মনের অনুভূতি আর আত্মার সম্পর্ক।তারপর তার ক্ষ্যাতি হয় প্রেমিক হিসেবে, অনেকে উন্মাদ প্রেমিক ও বলতো আবির কে। তারপর নেমে আসে বিচ্ছেদ ভালোবাসা নামক শব্দের ওপর থেকে বিশ্বাস উঠে যায় আবিরের খ্যাতি লাভ করে ছ্যাকাখোর আশিক হিসেবে। তারপর থেকে নিজের সাথে লড়াই করেই আজ এই অবস্থানে। দেশের অনেকাংশ অর্থনিতি নিয়ন্ত্রন করে আবির। এই লড়াই এ ওর সঙ্গ ছিলো ৩ টে জিনিশ কারন এই ৩ টে জিনিস ছাড়া ও কাউকেই আপন ভাবেনি গত ৬ বছরে। ৩ টে জিনিস হলো সিগারেট, মদ,আর হাই ডোজের ড্রাগ।এর মধ্যে সবচেয়ে কাছের জিনিস হলো সিগেরেট আবির নিঃশ্বাস যতবার না নেয় তার চেয়ে বেশি সিগারেট এর ধোয়া ছাড়ে।মদ খায় প্রত্যেকদিন রাতে ঘুমানোর আগে আর ঘুম থেকে ওঠার পরে ওর প্রিয় পানিয় এই মদ। আবির ততটা পানিও খায় না যতটা মদ্যপান এ ডুবে থাকে। এবার ওর আরেকটা কাছের জিনিস ড্রাগস, এটা সেবন করে বৃহস্পতিবার রাতে তারপর পুরো শুক্রবার আর শনিবার অর্ধবেলা উন্মাদ আর বদ্ধ পাগলের মতো ঘুমিয়ে থাকে আসলেই কী আবির ঘুমায় নাকি চোখ বন্ধ করে কষ্ট ভুলে একটু সুখ চায় তা বোঝা দ্বায়। আবির এত মদ,সিগারেট এমনকি ড্রাগস ও যে নেয় সেটা বাইরে থেকে দেখে আপনি বুঝবেন না। কীভাবে যে নিজেকে এখনও এরকম ভাবে ফীট রেখেছে আবির তা সে নিজেও হয়তো জানে না। আবিরের নিয়ন্ত্রন আবিরের দেহের উপর শতভাগ থাকলেও আবির তার মনটাকে নিয়ন্ত্রনহীন করে আজ এই পরিনতিতে ভুগছে। খালি সিগারেট এর জন্য আবিরের চোখ টা লাল হয়ে থাকে। আবিরের ন্যাচার হয়ে গেছে এখন সিরিয়াল কিলার, সাইকো,উন্মাদ,মেন্টাল,বদ্ধপাগল আর কী বলা যায় সেটা জানা নেই। আবির বড়ই অদ্ভুত ব্যাবসার ৩৫% মুনাফা চ্যারাটি করে, ১০% দিয়ে ওর আন্ডারওয়ার্ল্ড আরকী গুন্ডাদের পোষে আর ১৫% শতাংশ দিয়ে অফিস চালায়।বাকিটা জমা হয় ওর ব্যাংক একাউন্টে। এত টাকা উড়িয়েও আবির টাকার পাহাড় তৈরী করে ফেলেছে আবির। এই টাকা যদি কেরোসিন দিয়ে জ্বালাতেও হয় তবুও মনেহয় জ্বালাতে সপ্তাহখানেক লাগবে। কী নেই আবিরের একটা বিলাসবহুল জীবন থেকে শুরু করে আরামের মতো সব আছে আবিরের। কিন্তু মনের শান্তি গত ৬ বছরে ৬ মুহুর্তের জন্যও ছিলো না আবিরের। আবির ব্যাবসা ছাড়া কথা বলে না আর যখনই কথা বলে তখন ঈ শেয়ার বাজার রিতি-মতো কাপা-কাপি শুরু করে দেয়।আবির এতো সিরিয়াস ছিলো না একদম ই ছন্ন-ছাড়া ছিলো আবির। শুধুই বাপের টাকা উড়াতো আর মেয়েদের সাথে প্রেম করতো। সকালে এক প্রেম তো বিকালে আরেক প্রেম।কিন্তু এর মাঝে আবিরের জীবন্টাকে রাঙানোর নামে ধব্বংস করতে আসে "ছোয়া"।আবির ছোয়া নামের জন্যই উন্মাদ, মজনু এবং অবশেষে ছ্যাকাখোর এর উপাধি পায়।দীর্ঘ আড়াই বছরের সম্পর্ক ছিলো আবির আর ছোয়ার। আবির মন থেকে পবিত্র আর শুদ্ধতার সাথেই প্রেম চালিয়ে যায়। শেষটা না বলে শুরু থেকেই বলি আবিরের এই বিষাক্ত পরিনতি পাওয়া ভালোবাসার গল্পটা। ছোয়া যেদিন আবিরের কলেজে আসে সেদিন ই আবিরের চোখে পরে যায় ছোয়া। ছোয়া কে দেখার পরে ওর মন ওর কানে কিছু বলছিলো। আর সেটা ছিলো আবির তোর হৃদয়ের অংশ এই মেয়ে।ব্যাস আবির ও স্পষ্ট শুনতে পায় ওর মনের কথা লেগে পড়ে কাজে। মেয়েদের মন জেতার এক ঐশ্বরিক ক্ষমতা আছে। বেশিদিন লাগলোও না স্বম্পর্কে জড়াতে কিন্তু অন্য সম্পর্কের চেয়ে বেশিদিন সময় লাগলো এ সম্পর্ক শুরু হতে। কারন,আবিরের প্লেবয় খেতাব। আবির প্রায় ২৫ টা দিন ছোয়ার পিছনে ঘুরে ঘুরে খালি এটাই বোঝালো যে আবির সিরিয়াস। ও ছোয়াকে মন থেকে চাচ্ছে আত্মা দিয়ে ভালোবেসে ফেলেছে ছোয়াকে। ব্যাস ছোয়াও রাজি হয়ে গেলো।শুরু হলো আবির ছোয়ার ভালোবাসা। এই সম্পর্কে সবচেয়ে বড় দ্বায়িত্ব ছিলো আবিরের নিজেকে উজাড় করে দিয়েছিলো সব চাওয়া পাওয়া পূরন করেছে ছোয়ার। আপ্রান চেষ্টা আবির করেছে ছোয়ার সুখের জন্য। ছোয়াও সুখি ছিলো । আজ আবির আর ছোয়ার ভালোবাসার ২ বছর ১ মাস ঘুরতে গেছে আবির আর ছোয়া। ছোয়া একটা মেরুন রঙের শাড়ি আর আবির একটা সাদা পাঞ্জাবি পড়েছে। ওরা নদির পাশে একটা বেঞ্চিতে বসে আছে। আবির ছোয়ার হাতটা জড়িয়ে আর ছোয়া আবিরের কাধে মাথা দিয়ে বসে আছে কেউ ই কোনো কথা বলছে না দুজনই ই উপভোগ করছে ওদের নিঃশব্দ ভালোবাসার অনুভুতি।হঠাৎ আবির বলে উঠলো সময় টা যদি এখানেই থেমে যেতো সারাটাজীবন যদি এভাবেই কেটে যেতো। ছোয়া মুখটা আবিরর কানের কাছে নিয়ে কানের লতিতে আলতো করে ঠোট লাগিয়ে বললো তাহলে তোমার চেয়ে সুখি আমি হতাম।এভাবেই কেটে যাচ্ছিলো ওদের দিন গুলো ২ বছর ৫ মাস অবধি সব ই ভালো যাচ্ছিলো হঠাৎ ছোয়ার বাবা অসুস্থ হয়ে পড়ে আর বিয়ে হয়ে যায় ছোয়ার।আবির বুঝতেই পারে না কিছু বিয়ের পরে ছোয়া একবার দেখা করেছিলো তখন ছোয়ার চোখে কোনো পানিই ছিলো না আর আবির কাদতে কাদতে এতটাই কেদে ফেলেছিলো যে চোখের পানির ও করুনা হচ্ছিলো আবিরের প্রতি। ছোয়া শুধু এতটুকুই বলেছিলো কয়েকটা দিন কষ্ট হবে তারপর সব ঠিক হয়ে যাবে শক্ত হও আবির। আমার বাবা মৃতপ্রায় ছিলো বাধ্যহয়ে বিয়ে করেছি আর ছেলে ভালোই আমি সুখেই থাকবো। ভালো থেকো আর ঘৃনা করো আমায় বলেই চলে যায় ছোয়া আবির চুপ করে খালি বাস্তবতার চড় থাপ্পড় খাচ্ছিলো।বাসায় এসে খালি ভাবতে থাকে মেয়ে মানুষের দেহ তো এত নরম,কোমল আর স্নিগ্ধ হয় তাহলে মন কীভাবে এতো শক্ত? ওই ছেলের কাছে ও সুখি থাকবে আমি কী সুখি রাখতাম না?ঘৃনা করতেই যখন বললো হাত কেনো বাড়িয়ে ছিলো ভালবাসার জন্য?কেনো শিখিয়েছিলো ভালোবাসার মানে?ভালো থাকতে বলে গেলো ও জানে না আমি কতটা ভালো থাকবো ওরে ছাড়া? উন্মাদ আবির আর কিছুই ভাবতে পারে না সোজা কিচেনে যায় একটা ধারালো ছুরি নিয়ে হাতের উপরে চালানো শুরু করে দেয় বেশ কিছু স্ট্র্যাপ করে। তারপর আর কিছু মনে নেই ওর। প্রায় ৬ দিন পরে জ্ঞান ফিরেছিলো ওর কারন ওগুলো সাধারন স্ট্র্যাপ ছিলো না। ওই ছুরির টান গুলো ছিলো নিজের মনের প্রতি ঘৃনা থেকে তাই বেশ গভীর ক্ষতই হয়ে ছিলো মনের সাথে সাথে শরীরেও। সুস্থ হবার পরে আর কিছু ভাবেনি ও। ওর বন্ধুরা বলছিলো যে ছোয়া জেনেও আসেনি কারন ছোয়া সুখি এখন। ব্যাস আবিরের মাঝে সৃষ্টি হয়ে গেলো এক সাইকোর হাসপাতালেই বাবাকে বললো আমি নতুন কোম্পানি শুরু করবো। কিন্তু ওর বাবা তার ছেলের এই আত্মহতার পর থেকে তার ছেলেকে তেমন একটা পছন্দ করতো না কারন আবিরকে সে সবসময় হাসিমুখে দেখেছে। তৎকালিন বিজনেস টাইকোন আশফাক চৌধুরি নিজের ছেলের রক্তপাত একদমই সহ্য করতে পারেনী কারন যদি মারা যেতো কী নিয়ে থাকতো ওনারা?আর ছেলের এই পদক্ষেপের জন্য ওনাদের ব্যাবসায়ীক শেয়ারের পতনের সাথে সাথে বহু সমালোচনার মুখো-মুখি হন আশফাক চৌধুরি। এসব বুঝতে না দিয়ে ছেলের পাশে দাঁড়ায় একজন বাবা।তারপর চৌধুরি গ্রুপ অফ ইন্ডাস্ট্রির একটা অঙ্গপ্রতিষ্ঠান চালু হয় আর যেটা সম্পূর্ন আবিরের মালিকানাধীনে শুরু হয় " দ্যা গ্রে লিমিটেড" জীবনের ধূসর রঙ থেকেই এই নাম নিয়েছে আবির। এই ছয় বছরের মধ্যে প্রায় ৩০ খানা নতুন কোম্পানির মালিক হয়ে নিজের বিজনেস এম্প্যায়ার গড়েছে আবির। সফলতার শীর্ষে পৌছেছে আবির।জীবন থেকে পালি পালিয়ে সফলতা বেয়ে এতটাই উপরে উঠে গেছে আবির যে সেখানে মনের শান্তি নামক অক্সিজেন পৌছাতে পারে না।
আজ রবিবার ১১ টার মতো বাজে রাস্তার মধ্যে সাই সাই করে বেশ কয়েকটি গাড়ি যাচ্ছে সবগুলো গাড়িই কালো রঙ্গের।আবির গাড়ির মধ্যে বসে সিগারেটের সঙ্গে প্রেম করতে করতে ল্যাপটপে অফিসের কাজ করছিলো। হঠাৎ ই একটা ফোন আসে আবিরের ফোনে নাম্বারটা সেভ করা "ডক্টর আঙ্কেল দিয়ে"। ফোন রিসিভ করেই হাসিমাখা মুখে বিনয়ের সাথে সালাম দেয় আবির। ওপার থেকে শব্দ আসে আবির তুমি যত ইমিডিয়েট পারো এখানে আসো তোমার দাদিমা আর বেশিদিন নেই। চোখগুলো যেনো আবার অনেকদিন পরে ভিজে উঠলো আবিরের, মনটা যেনো অনেকদিন পরে রক্ত ঝড়ানো শুরু করলো। এ কী শুনছে আবির? ওর সবচেয়ে কাছের মানুষটাই আর থাকবে না এই পৃথিবীতে। ভাবনায় ছেদ পরলো তুমি আসবে কখন? এই প্রশ্ন শুনে আবির শুধুই উত্তর দিলো আমি আসছি। সাথে সাথে আবির ওর সিকিউরিটি হেড কে ওয়ারলেস দিয়ে গাড়ি থামাতে বললো।সব গাড়ি গুলো কষে ব্রেক করে থেমে গেলো। গাড়ি থামতে না থামতেই ব্ল্যাক সুটেড কিছু গার্ড আর্মস সহ এবং ওর সিকিউরিটি হেড জামিল এসে বললো স্যার আপনি কী অসুস্থ?আবির খালি বললো আমি আপন নিবাস যাবো যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আপন নিবাস চলো। সাথে গাড়িগুলো সামনের ইউটার্ন টা ধরে আরো গতিতে সাই সাই করে ছুটতে লাগলো।বাইরে তাকালো আবির ধুলো উড়ছে রাস্তার পাশে। আবির নিজের জীবনক্টাকে এখন ধুলোর সাথে তুলনা করা শুরু করলো।
চলবে!
#thetanvirtuhin
YOU ARE READING
ভালোবাসার নীড়
Romanceউপরওয়ালা সবার জন্যই সর্বোত্তম কিছু ঠিক করে রেখেছেন। কিন্তু আমরা খানিক মরীচিকার পেছনে ছুটে জীবিনের রঙ হারিয়ে ফেলি। তারজন্য কিন্তু আমরা নিজেরাই দায়ী অধিকাংশে। তাই নিজের জীবন নিজের, নিজের জীবনের রঙ এর দায়িত্ব নিজের। নিজের জীবনকে রঙিন রাখার দায়িত্বও আমা...