আবিরের কথাগুলো শুনে আশফাক সাহেব খুশিতে আত্মহারা হয়ে আবিরকে জড়িয়ে ধরলো।তারপর নিজেই বললো আমি যাই জয়কে ব্যাপারটা জানাই। আবির ঠায় দাঁড়িয়ে আছে। ভাবতে থাকে আবির,আমার জীবন টা কী এতোটাই নিকৃষ্ট করে তুলেছিলাম আমি?যে বাবা নিজের মায়ের মৃত্যুশোক কাটিয়ে উঠছে শুধুমাত্র আমার বিয়ের জন্য?এই ৬ টা বছরে কী আমি নিজের সাথে সাথে আমার পরিবার কে ও জ্বালিয়ে ফেললাম।আবির এখন শেষ ঠিকানায় দাঁড়িয়ে, ওর সামনে শুয়ে আছে ওর দাদিমা সহ আরো অনেক মানুষ। আবির ভাবতে থাকে জীবনটা তো কবরস্থান ই তার, কোনো রঙ তো নেই এই জীবনে! কার জন্য হলো সে এমন?আবিরের চোখ খোলা আকাশের দিকে উঠে গেছে কবর স্থানের নিস্তব্ধতা তার জীবনের সবটা তুলে ধরছে সামনে।মাগরিবের আজান দিচ্ছে আবির এখনো কবর স্থানে একটুও নড়ে নী! আবির যেনো এক অজানা ঘোরে চলে গেছে, এ ঘোর যেনো জীবনে রঙ আনার প্রবল চেষ্টা, এ ঘোর যেনো কঠিন সিদ্ধান্ত নেবার প্রচেষ্টা।হঠাৎ কেউ ডাকলো আবিরকে,স্যার বাসায় যাবেন না? সন্ধ্যা হয়েছে! কন্ঠ টা আবিরের সিকিউরিটি হেড জামিলের। আবির ঘোর থেকে বের হলো, তারপর শান্ত গলায় বললো গাড়ি স্টার্ট করো।জামিল চলে গেলো। আবির মাটিতে বসলো তারপর বাচ্চাদের মতো বলা শুরু করলো _" দাদিমা তোমার ইচ্ছা আমি পুরন করবো। কথাদিচ্ছি দাদিমা তোমার পছন্দ করা মেয়েকে বিয়ে করবো। বউয়ের কোনো অযত্ন আমি করবো না। নিজের জীবনটাকে আবার রাঙিয়ে তুলবো।তোমার আবলুর জন্য দোয়া কইরো।যেখানেই থাকো ভালো থেকো দাদিমা"_।আবির গাড়িতে ওঠে। গাড়ির কাচ নামানো তবুও কোনো শব্দ কানে আসছে না আবিরের, খালি ঠান্ডা হাওয়ায় নিজেকে খুজছে আবির, মৃত পূরোনো আবিরকে বের করতে চাচ্ছে আবির কিন্তু এই লাশের মধ্যে পূরনো সত্তাটা যে পচে গেছে আবিরের! এগুলো ভাবতে ভাবতেই গাড়ি আপন নিবাসের সামনে। গাড়ি থেকে নেমে সোজা ড্রইং রুমে গেলো আবির, সবাই নিরবতা পালন করছে।আবির নিরবতা ভেঙে একটানে বলতে লাগলো, আমি বিয়ে করবো। দাদিমায়ের পছন্দ করা মেয়েকেই আমি বিয়ে করবো।বিয়ের আয়োজন করো। বলেই সিড়ি বেয়ে নিজের রুমে চলে গেলো কারো মতামত আবির শোনার জন্য দাড়ালো না। একটু একা থাকতে চায় আবির।
আজ দাদিমার ৩ দিনের অনুষ্ঠান শেষ হলো। সিংহভভাগ দায়িত্ব আবির পালন করেছে। সব কাজ নিজ হাতেই করেছে আবির। সবাই ড্রয়িং রুমে, আবির ঢুকলো বাড়িতে! আশফাক সাহেব ডাক দিলো আবিরকে। তা বিয়ে কবে করতে চাচ্ছো? আবির একদম র্যাপিডলি বলে দিলো কালকে যেহেতু শুক্রবার কালকেই করে ফেলি বেশি ফর্মালিটির দরকার নাই! শুধু বিয়েটা।মেয়ের বাড়ির সাথে কথা বলো। বলেই উপরে চলে গেলো!
আবির রুমে বসে বসে সিগারেটের সাথে প্রেম করছে! আশফাক সাহেব আসলো রুমে। আবির একটা শেষ টান দিয়ে ফেলে দিলো সিগারেট টা! আশফাক সাহেবের চোখ বলছিলো এসব নেশা করা বাদ দে আবির। কিন্তু সাহস করে সেটা আর মুখ দিয়ে বের করতে পারেনি সে। আবিরলে বললো কাল বিয়ে, প্রস্তুতি নে বাবা।তোর এই সিদ্ধান্ত তে সবাই খুব খুশি, দেখবি সব ভালো হবে এবার। আবিরের মা ও রুমে ঢুকলেন। হ্যা আবির সব ভালো হবে এবার! আবির মুচকি হেসে বললো আচ্ছা তোমরা যাও এখন। একটু একা থাকতে চাই!আবির নিজের সঙ্গিদের সাথে শেষবারের মতো সময় কাটাতে চায়।সঙ্গিমানে, সিগারেট, মদ আর হাই ডোজের ড্রাগস! আবির সব আনালো একটু বেশি পরিমানে আনালো আজকের পড় থেকে এদের আর স্পর্ষ করবে না আবির। শুরু করলো আবির মন বসছে না এসবে তবুও চালিয়ে যাচ্ছে আবির! অবশেষে আর না পেড়ে হাতে একটা মদের বোতল নিয়ে টলতে টলতে বেলকনি তে গিয়ে চেয়ারে বসলো আবির। বোতলে চুমুক দিচ্ছে আবির দিতেই থাকছে আবির থামছে না একটু নেশা আনতে চাচ্ছে আবির কিন্তু আজ সে ব্যার্থ শত চেষ্টা করেও কেনো নেশা আনতে পারছে না?কাল থেকে কী জীবন পাল্টাবে?রঙ এর দেখা কী পাবে আবির?জীবনের মানে কী বদলাবে তার কাছে?পূড়ে যাওয়া জীবনের ছাই থেকে কী একটা সবুজ গাছ বের হবে?বাচার উদ্দেশ্য কী খুজে পাবে আবির?এসব ভাবতে ভাবতেই চোখ বুঝে যায় আবিরের।আসলে আবির ঘুমিয়েছে, বেহুস হয়েছে,নাকি শান্ত হয়ে পড়ে আছে বোঝা বড় দ্বায়।
সূর্য তার প্রখর রোদ আর তাপ দিলো আবির বেলকনিতে থাকায় ঠিক মুখে এসে পড়লো আলোটা। আবির বিরক্ত হলো না সাথে সাথে উঠে বসলো তারপর দাড়ালো! ঠান্ডা সতেজ এই বাতাস আর এই সকালের রোদ টা যেনো হাজার বছর ধরে অচেনা আবিরের কাছে। প্রান ভরে নিঃশ্বাস নিচ্ছে আবির। আর নিঃশ্বাস এর সাথে ভেতরের নিষিদ্ধ সত্তাটাকে বের করে দিচ্ছে আবির। চায়না আর মরাপচা, অকৃত্রিম, রঙহীন জীবন।একটু বাচতে চায় আবির।নিজেকে খুজে নিয়ে জীবনে এগিয়ে যেতে চায় চেষ্টা আবিরকে করতেই হবে কারন এর ফলে লাভটা যে তার আত্মার। এসব ভাবতে থাকে আবির আর নিজেকে বিলিয়ে দেয় সকালের আলতো রোদের সাথের শীতল বাতাসে!!!
চলবে!
#thetanvirtuhin
YOU ARE READING
ভালোবাসার নীড়
Romanceউপরওয়ালা সবার জন্যই সর্বোত্তম কিছু ঠিক করে রেখেছেন। কিন্তু আমরা খানিক মরীচিকার পেছনে ছুটে জীবিনের রঙ হারিয়ে ফেলি। তারজন্য কিন্তু আমরা নিজেরাই দায়ী অধিকাংশে। তাই নিজের জীবন নিজের, নিজের জীবনের রঙ এর দায়িত্ব নিজের। নিজের জীবনকে রঙিন রাখার দায়িত্বও আমা...