হিমাদ্রি কেদেই যাচ্ছে অনবরত। আর আবির যান্ত্রিকভাবে একটার পরে একটা টিস্যু দিয়ে যাচ্ছে। খানিক বাদে আবির জিজ্ঞেস করলো , পানি খাবেন?
আবিরের এমন প্রশ্নে হিমাদ্রি একটু বিস্মিত হলো। এবং আবিরের দিকে এমনভাবে তাকালো যেনো আবির একদমই অযৌক্তিক কিছু জিজ্ঞেস করেছে।তারপর হিমাদ্রি একটু ঝাঝালো কন্ঠেই বললো, আপনার মনে হচ্ছে আমি এখন পানি খাবার মূড এ আছি? আবির কিছুটা নারভাস হয়েই বললো না ভাবলাম পানি খেলে হয়তো কান্না থামবে। আবিরের এমন ছেলেমানুষি উত্তরে হিমাদ্রি বেশ আশাহত হলো। আর হিমাদ্রির রাগও চলে গেলো।আবির ভাবছে ওর কথা, আবির তো এমন না। কারো সাথে কথা বলতে তো ওর নারভাস ফিলিং হয় না। কত বড় বড় সেমিনার লীড করে আবির। আর এখানে বেড়ালের মতো এ কী করছে আবির!আবিরদের গাড়ি আপন নিবাস থেকে খানিক দূড়ে। আবির হিমাদ্রির উদ্দেশ্যে বললো, সামনে মিডিয়া থাকবে। একটু স্বাভাবিক ভাবে থাকবেন। আর মিডিয়ার সামনে প্লিয না কাদার চেষ্টা করবেন।কথা গুলো বলার সাথে সাথে হিমাদ্রি আবিরের হাত থেকে টিস্যু বক্স টা নিয়ে প্রায় ৩-৪ টা টিস্যু নিয়ে চোখ মুছে ফেললো। প্রায় কয়েক মুহূর্ত পরে আবির আবিষ্কার করলো হিমাদ্রির পাশে একটা ব্যাগ ও ছিলো, আর হিমাদ্রি এখন ওই ব্যাগ থেকে আইলাইনার বের করে। চোখের মেকাপ ঠিক করতেছে। আবির রিতি-মতো শকড, এই মেয়ে এতোক্ষন কাদতেসিলো? হিমাদ্রি বললো এভাবে উজভুক এর মতো কী দেখছেন? আবির ও বেশ তাল মিলিয়ে উত্তর দিলো আইলাইনার লাগানোর টিউটোরিয়াল দেখছিলাম। হিমাদ্রি এবার ডাবল মিনিং করেই বললো, কেনো আমায় আইলাইনার লাগিয়ে দিতে ইচ্ছে করতেসে নাকি? আবির এবার কী বলবে ভেবে পাচ্ছিলো না। আবির চোখ সরিয়ে নেয়। আবিরের এ হাল দেখে হিমাদ্রি মুচকি হাসা শুরু করে। এর মধ্যে আবিরদের গাড়ি আপন নিবাস এ চলে আসে। আবির আর হিমাদ্রি এখন দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছে। আবির বেশ মূডেই আছে। একজন সাংবাদিক জিজ্ঞেস করলো, "বিজনেস টাইকোন আবরার আবিরের হঠাৎ বিয়ে করার ইচ্ছা কেনো জাগলো? এতোদিন তো বিয়ে নিয়ে কোনো পরিকল্পনাই ছিলো না।" আবির বলা শুরু করলো " হ্যা এতোদিন আমার বিয়ে করার কোনো ইচ্ছেই ছিলো না, কিন্তু গত কিছুদিন আগে আমি রাত্রে ঘুমাচ্ছিলাম তখন আমার মনে হলো আমার খাট বেশ বড়। সেখানে আমি এবং আমার কোলবালিশ থাকার পড়েও অনেক জায়গা ফাকা থাকে। তাই ভাবলাম খাটের খালি যায়গা পূরন করার জন্য হলেও আমার বিয়ে করা উচিৎ " আবিরের এই রসাত্মক উত্তর শুনে হাসির একটা রোল পড়ে গেলো। কিন্তু এ উত্তর শুনে হিমাদ্রি কিছুটা ইতস্ততা বোধ করে আর রেগেও যায়। কারন, হিমাদ্রি একটা রোমান্টিক উত্তর আশা করতেছিলো। আর আবির এ কী উত্তর দিলো? এবার ওই সাংবাদিক ই হিমাদ্রি উদ্দেশ্যে বললো " ম্যাম আপনিতো প্রায় অনেকদিন ধরেই বিদেশে, আর দেশে থাকলে আপনি আপনার বাবার সাথে বিজনেস সেমিনার এটেন করতেন সেই সুবাধে আমরা অনেকেই আপনাকে চিনি এবং বেশ কয়েকবার আপনাকে বিয়ে নিয়ে প্রশ্ন করা হলে আপনি বলতেন, যে আপাতত বিয়ে নিয়ে ভাবছেন না।তা হঠাৎ কাউকে না জানিয়েই বিয়ে কেনো করলেন? এবার হিমাদ্রিও বলা শুরু করলো। কেউ না জানলে আপনারা এখানে থাকতেন না। আর আমি মূলত বিয়ে করেছি শপিং এর ব্যাগ টানার কেউ নেই। বিয়ের পরে স্বামিকে দিয়ে ব্যাগ টানাবো এজন্য। আবার একবার হাসির রোল পড়ে গেলো সবার মাঝে। এই হাসি-তামাশার মধ্যেই একজন মহিলা সাংবাদিক আবিরকে প্রশ্ন করলো "স্যার আপনাকে তো ক্রাশ অফ দ্যা টাউন বলা হয়, এর আগে মিডিয়ার এবং বেশ কয়েকটি সুন্দরী তরুনি আপনাকে প্রোপোজ করেছে বলে গুঞ্জন ও শোনা গেছে। ওদের না বলে হিমাদ্রি ম্যামকেই কেনো বিয়ে করলেন? হিমাদ্রি ম্যামের ম্যামের প্রেমে পড়েছেন এখন ও নাকি ফ্যামিলির ফ্যামিলির ভালো সম্পর্ক সেই সুবাধেই বিয়ে করে ফেলছেন? আবির এবার কোমল কন্ঠে বলা শুরু করলো, আমি যদি ক্রাশ অফ দ্যা টাউন হই যদিও আমি এসব মানি না। তাহলে আমার স্ত্রী হিমাদ্রি আমার কাছে "ক্রাশ অফ দ্যা প্ল্যানেট" আর হ্যা অবশ্যই আমি ওর প্রেমে পড়েছি। কথাটা বলার সাথে সাথেই সাংবাদিক সবাই হাততালি দেওয়া শুরু করে আর হিমাদ্রি মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে থাকে আবিরের দিকে। তখন আরেকজন সাংবাদিক আবির কে জিজ্ঞেস করে? ফ্যামিলি প্ল্যানিং কী? আবির একটু হেসেই বলে, আরে ভাই এখনো বিয়ের পোশাক খুললাম ই না তার আগেই বাবা বানিয়ে দিচ্ছেন কেনো আমায়? হ্যা বাবা তো হবই বাকি রইলো প্ল্যানিং এর হিমাদ্রি যতগুলো নিতে পারে বাচ্চা ততগুলোই নিবো! আমার কোনো সমস্যা নাই। এবারও একসাথে হেসে উঠে সবাই। হিমাদ্রি কিছুটা লজ্বা পায় আবিরের কথা শুনে। আবির বললো অনেক প্রশ্ন উত্তর তো হলো। খুব টায়ার্ড আমরা। আর রাতে বাসর আমার।আরো যদি প্রশ্ন শুনি তাহলে রাতে আমার বাসর মিস যাবে। তাই এখন ছাড়তে হবে আমাদের, প্রশ্নগুলো নাহয় অন্যকোনোদিন শুনবো। এবারও সবাই হেসে উঠলো আর বেশ আলহাদিভাবে বললো স্যার আপনাদের দুইজনের একটু বাইট দিতে হবে কাপল পিক এর জন্য কাল ফ্রন্ট পেজ এ ছাপা হবে আবির হিমাদ্রির ভালোবাসার সূত্রপাত। আবির চুপই ছিলো কিন্তু হিমাদ্রি আবিরের হাত ধরে বাইট দেওয়া শুরু করে দিলো আবির ও তাল মেলালো। বেশ কয়েকটি পোজ এ ছবি তুললো তারা। এমন সময় শোনা গেলো এক মহামারি আবদার। এতোক্ষন জড়িয়ে ধরে বাইট দেওয়া, হাটুগেড়ে গোলাপ দেবার পোজ ঠিক ছিলো। কিন্তু কোন এক মহিলা সাংবাদিক বলে উঠলো যে আবিরকে হিমাদ্রিকে কোলে নিয়ে কপালে চুমু খেয়ে বাইট দিতে হবে। আবির তো এবার মানিকের চিপায় পড়লো। ওদের মধ্যে তেমন কোনো বন্ডিং ক্রিয়েট হয় নী আর আন্ডারস্ট্যান্ডিং তো দূরেই থাক। কিন্তু কী করবো প্রেসের লোকজন ছাড়ছেই না বাইট তারা নিয়েই ছাড়বে। এবার আবির অসহায় দৃষ্টিতে তাকালো হিমাদ্রির দিকে! হিমাদ্রি একটু হেসে সম্মতি দিলো। আবির বেশ নার্ভাস ফীল করতেসে। হিমাদ্রির অবস্থা ও একই যদিও তাদের মুখে তা স্পষ্ট নয়।আবির ধীরে ধীরে হিমাদ্রিকে কোলে তুলে নিলো আবির আর হিমাদ্রি অপলকভাবে তাকিয়ে আছে একে-অপরের দিকে।আর সাংবাদিকরা তাদের কাজ করে যাচ্ছে।তারা তাদের মতো করে ছবি তুলেই যাচ্ছে। হিমাদ্রি স্পষ্টভাবে অনুভব করতেছিলো আবিরের হৃদস্পন্দন। আবির আর দেরি না করে হিমাদ্রির কপালে চুমু খেলো। কিন্তু বেশিক্ষন হিমাদ্রিকে কোলে রাখা সম্ভব হলো না আবিরের। না হিমাদ্রি ওজন বেশি তা নয়। আবিরের হৃদস্পন্দন বেড়ে যাচ্ছিলো তাই আবির নামিয়ে দেয় হিমাদ্রিকে। বেশ ঘেমে গেছে আবির। এবার একজন সাংবাদিক বলেই উঠলো তাহলে আবরার আবিরও বউকে কোলে নিয়ে ঘেমে গেলো। আবির কপালের ঘাম সরাতে সরাতে উত্তর দিলো, ভাই যদি বিয়ে না করে থাকেন তাহলে বলবো বিয়ে করুন অভিজ্ঞতা হয়ে যাবে আর যদি বিবাহিত হন তাহলে তো জানেনই। মজা নিয়েন না! সবাই হেসে উঠলো আর সাথে হিমাদ্রিও।
সাংবাদিকরা বেশ উৎফুল্ল। কারন, এর আগে এভাবে কখনই আবির এভাবে ইন্টার্ভিউ দেয় নেই।বিয়ে যে আবিরের চিত্তে পরিবর্তন এনেছে তা আর বুঝতে বাকি নেই কারো। সাংবাদিকদের বিদায় করে আপন নিবাসে ঢুকলো ওরা। সবধরনের ফর্মালিটি শেষ করে এখন আবির আর হিমাদ্রি একরুমে। হ্যা ওরা এখন আবিরের বেড রুমে মানে আবির আর হিমাদ্রির রুমে। দুজনই চুপ-চাপ।
চলবে!
#thetanvirtuhin
YOU ARE READING
ভালোবাসার নীড়
Romanceউপরওয়ালা সবার জন্যই সর্বোত্তম কিছু ঠিক করে রেখেছেন। কিন্তু আমরা খানিক মরীচিকার পেছনে ছুটে জীবিনের রঙ হারিয়ে ফেলি। তারজন্য কিন্তু আমরা নিজেরাই দায়ী অধিকাংশে। তাই নিজের জীবন নিজের, নিজের জীবনের রঙ এর দায়িত্ব নিজের। নিজের জীবনকে রঙিন রাখার দায়িত্বও আমা...