হিমাদ্রি কিছুক্ষন মুভি দেখলো। সারাদিন খুব দখল গেছে ওর। তাই চোখ লেগে আসছে।কিছুক্ষন আরো চেষ্টা করলো মুভিটা দেখার কিন্তু ঘুমিয়ে গেছে হিমাদ্রি। আবির অবশ্য এক ধ্যানে মুভি দেখছে। খানিক বাদে দেখলো হিমাদ্রির মাথা কাধ থেকে তার বুকে চলে এসেছে আর হিমাদ্রি ডান হাত দিয়ে টি-শার্ট খামচে আছে। আবির বুঝলো ঘুমিয়ে গেছে হিমাদ্রি।টি-শার্ট থেকে হাত ছাড়িয়ে, বালিশ ঠিক করে দিয়ে শুইয়ে দিলো হিমাদ্রিকে।তারপর টিভি টা অফ করে দিলো।লাইট টা অফ করবে তখন টেবিলে সিগারেট এর প্যাকেট টা দেখলো। আবির ভাবলো, মদ, ড্রাগস তো ছেড়ে দিছি। সিগারেট ও ছেড়ে দিবো কিন্তু আজ না। আবির লাইট টা অফ করে। হিমাদ্রির গায়ে কম্বল টেনে দিলো। তারপর সিগারেট এর প্যাকেট টা, আর লাইটার হাতে নিয়ে বারান্দায় গেলো। বারান্দার দরজা টা লাগিয়ে দিলো যাতে রুমে ধোয়া না যায়।
একটা সিগারেট জ্বালালো।তারপর চিন্তা করলো কয়েকটা দিন আগেও তার জীবন টা এরকম রঙিন ছিলো না। রুটিন মাফিক একটা যন্ত্র ছিলো সে, যে যন্ত্রটা শুধুই ব্যাবসা করা,আর নেশা করা ছাড়া কিছুই পারতো না। কিন্তু,তার কাছের তার দাদিমা যাবার আগে তাকে হিমাদ্রি উপহার দিয়ে গেছে। হিমাদ্রিকে পেয়ে তো সে ঠকেনী, বরং দাদিমায়ের শেষ কথাটা রক্ষা করে নিজের জীবনটাকে রাঙিয়ে তুলেছে সে। জীবন খুবই বিচিত্র কখন সামনে কী পড়ে যায় বিধাতা ছাড়া কেউ জানে না!
আবির এসব ভাবতে ভাবতেই একটা দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেললো।হ্যা এটা ছোয়ার জন্য ছিলো।ছোয়া থাকলে হয়তো এই ৭ টা বছর এভাবে কাটতো না আবিরের। হয়তো, ভালো হয়তো সুন্দর। এসব হয়তোর ভাবনা চিন্তায় আবির চারটা সিগারেট শেষ করলো।
এবার রুমে যাওয়া উচিত তার একটু ঘুম দরকার দেহের, কাল আবার কী কাজ করাবে হিমাদ্রি কে জানে। আবির রুমে গেলো, লাইটার আর সিগারেট এর প্যাকেট টা বারান্দায় ই রয়ে গেলো। আবির শুয়ে পড়বে তখন মাথায় আসলো ব্রাশ করে শোয়া উচিৎ। হিমাদ্রি এখনও সিগারেট বা মদ নিয়ে কোনো হুশিয়ারি জ্বারি করে নী। কিন্তু যদি খুনাক্ষরেও টের পায় যে, রাতে সিগারেট খেয়ে শুয়েছি। তাহলে, সকালে আবার একগাদা কথা শুনতে হবে যা আবির একদমই চায় না।তাই ব্রাশ করে শুয়ে পড়লো।
সকাল ৭ টার মতো বাজে। হিমাদ্রির ঘুম ভাঙলো হালকা রোদ এসে মুখে পড়ছিলো। আড়-মোরা ভেঙে চোখ খুললো। দেখলো বারান্দার থাই খোলা। তাই রোদ আসছে, আর পর্দাও উঠানো। ভাবলো,হয়তো আবির বারান্দায় গিয়ে, থাই বন্ধ করতে ভুলে গেছে। ফোন হাতে নিয়ে দেখলো ৭ টা ০৮ বাজে ভাবলো বারান্দায় গিয়ে একটু তাজা হাওয়া উপভোগ করা যাক। বারান্দায় গিয়ে রেলিং ধরে একটা বড় নিঃশ্বাস নিলো হিমাদ্রি। হালকা শীত করছে,তারমধ্যে হালকা রোদ,আবছা আলো, আর মৃদু বাতাস সাথে হালকা কুয়াশা তো আছেই। সব মিলিয়ে বেশ চমৎকার আবহাওয়াটা, হিমাদ্রির বেশ ফুরফুরে লাগছে। আরো কিছুক্ষন দাড়ালো, হঠাৎ কেনো যেনো আবিরের দিকে তাকালো হিমাদ্রি। ঘাড় ফিরিয়ে তাকিয়ে সুখ হচ্ছিলো না। তাই একেবারে ঘুরে রেলিং পিট ঠেকিয়ে দেখছে আবিরকে, চুলগুলো একদম গোছালো একটুও এলোমেলো হয়নী, মুখে রোদ পড়ছে তার কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই ঘুমাচ্ছে তো ঘুমাচ্ছে। ধীরে ধীরে কুয়াশা কাটছে তাই রোদটাও গাড় হচ্ছে। হিমাদ্রি জানে আবির তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে উঠে না। আর কেউ উঠালেও নাকি মুড বিগড়ে যায়, দাদিমার সুবাধে জানা এই তথ্য। তাই, বারান্দার পর্দা ফেলতে যাচ্ছিলো। তখন দেখলো নিচে সিগারেট এর প্যাকেট আর লাইটার। তারমানে আবির রাতে সিগারেট খেতে বারান্দায় আসছিলো। হিমাদ্রির ফুরফুরে মেজাজ টা মূহুর্তেই ঝাঝালো হয়ে যায় কিন্তু পরক্ষনেই ভেবে দেখে যে, যখন সে ছিলো না তখন এসব ই আবিরের সবকিছু ছিলো।তার উচিৎ আবিরকে সময় দেওয়া এসব ছাড়ার জন্য। যতই হোক হুট করে তো আর অভ্যাস বদলানো যায় না। হিমাদ্রি লাইটার আর প্যাকেট নিয়ে রুমে গেলো, ওগুলো রেখে পর্দা ফেলে দিলো যাতে আবিরের ঘুমে ব্যাঘাত না ঘটে। তারপর ফ্রেশ হয়ে নিচে চলে গেলো।
চলবে!
#thetanvirtuhin
YOU ARE READING
ভালোবাসার নীড়
Romanceউপরওয়ালা সবার জন্যই সর্বোত্তম কিছু ঠিক করে রেখেছেন। কিন্তু আমরা খানিক মরীচিকার পেছনে ছুটে জীবিনের রঙ হারিয়ে ফেলি। তারজন্য কিন্তু আমরা নিজেরাই দায়ী অধিকাংশে। তাই নিজের জীবন নিজের, নিজের জীবনের রঙ এর দায়িত্ব নিজের। নিজের জীবনকে রঙিন রাখার দায়িত্বও আমা...