জয় সাহেবের সাথে কথা বলার পর আবির একটু ব্যাস্ত হয়ে পড়ে। ওর কাজিনদের সাথে কথা বলে। বেশ কয়েকবছর পরেই আবির একটু স্বাভাবিক। প্রায় ১ ঘন্টার মতো আবির ওর কাজিনদের সাথে কথা বলে। সবাই বেশ খুশি কারন আবির স্বাভাবিক হচ্ছে।এই ১ ঘন্টার মধ্যে আবির হিমাদ্রির আশে-পাশেও ছিলো না। একটু পরে কিছু মেয়ে আসলো আবিরের কাছে, কথা-বার্তা আর আল্লাদ মাখা দুলাভাই ডাক শুনে বোঝা যাচ্ছে হয়তো এরা হিমাদ্রির বান্ধবি!নয়তো কাজিন হবে। মেয়েগুলো এসে একদম জিলাপির মতো গোল হয়ে বলা শুরু করলো,"দুলাভাই আপনার শ্বাশুরি ডাকছে আপনাকে"। তারপর আবিরকে এক্কটা রুমে নেওয়া হলো। সেখানে হিমাদ্রি কান্না করতেছিলো তার মাকে জড়িয়ে ধরে। আবির এই দৃশ্য দেখার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলো না। তাই একটু বিস্ময় এবং ইতস্ততা কাজ করছিলো আবিরের মধ্যে। তবুও আবির অস্পষ্ট কন্ঠে হিমাদ্রির মায়ের উদ্দেশ্যে বললো,"হ্যা আন্টি ডেকেছিলেন? হিমাদ্রির মায়ের চোখ ও ভেজা ছিলো। চোখ মুছতে মুছতে বললো হ্যা বাবা এদিকে এসো। আবির কাছে গেলে আবিরকে বসতে বললো। আবির বসতেই হিমাদ্রির মা ফুপিয়ে কান্না শুরু করলো। হিমাদ্রির ও কান্নার শব্দ এবং গতি কিছুটা বেড়ে গেলো। আবির এবার পড়লো মহা-মুশকিলে। আবিরের মাথায় ই ঢুকছে না যে এনারা কাদছেন কেন?কী বলে পরিস্থিতি সামলাবে? আবির নাজেহাল হয়ে যাচ্ছে। তখন হিমাদ্রির মা আবিরের হাত ধরে বলা শুরু করলো, বাবা আমার মেয়েটা একদম ই অবুঝ। হ্যা ওর বদমেজাজ আছে কিছুটা কিন্তু মন একদম বাচ্চাদের মতো। একটু আগলে রেখো, এতোদিন বিদেশ ছিলো আমি আগলাতে পারি নাই। এখন দেশে ফিরলো কিছুদিন হলো আবার কাছে রাখতে না রাখতেই তোমার কাছে চলে যাচ্ছে। ও যাতে কখনও কষ্ট না পায় বাবা একটু দেখে রেখো। আবির এবার ওর ডান হাতটা দিয়ে হিমাদ্রির মায়ের হাতটা ধরে বললো, _"আপনি একদম ই দুশ্চিন্তামুক্ত থাকুন আন্টি, ও আগে আপনাদের মেয়ে ছিলো কিন্তু আজকের পর থেকে ওর পরিচয় ও আবিরের স্ত্রী!আমি কথা দিচ্ছি আমার অতীতের কোনো প্রভাব ওর উপরে পড়বে না। আমি আমার সাধ্য মতো চেষ্টা করবো ও কে সুখি রাখার।কথা দিলাম আপনাকে!"_। কথা গুলো শুনে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো হিমাদ্রির মা। এরমধ্যেই জয় সাহেব এসে বললো আবির বাবা এবার বের হতে হবে তোমাদের।আশফাক ফোন দিয়েছিলো ওদিকে সব ঠিক-ঠাক।হিমাদ্রি কেদেই যাচ্ছে ওর মাকে জড়িয়ে ধরে। ওর মা বললো চল মা বের হতে হবে তোদের। হিমাদ্রির কান্নার গতি,বেগ,সরন সব বাড়িয়ে কান্না শুরু করলো হিমাদ্রি। আবিরের কী কিছু বলা উচিত, আবির এটাই ভাবতে থাকে। প্রায় ২-৩ মিনিট পরে হিমাদ্রি নিজেকে কিছুটা সামলে নিয়ে উঠে দাড়ালো। আবির হিমাদ্রিকে দেখছিলো সেদিকে হিমাদ্রির লক্ষ্য নেই ও বেনারসির কুচি ঠিক করতে ব্যাস্ত।কেদে কেদে চোখের কাজল লেপটে ফেলেছে মেয়েটা। এখন কিছুটা বাচ্চার মতোই লাগছে হিমাদ্রিকে, আবির একটু মুচকি হাসলো কিন্তু সেটা প্রকাশ করলো না। হিমাদ্রির মা হিমাদ্রির হাতটা আবিরের হাতে তুলে দিয়ে বললো আজ থেকে আমার মেয়ের দায়িত্ব তোমার। আবির দৃড় কন্ঠেই বললো"আমার দায়িত্ব পালনে কোনো খামতি থাকবে না"।এরমধ্যেই জয় সাহেবের ফোন বেজে উঠলো,আবিরের বাবা ফোন করছে। জয় সাহেব বলছে হ্যা ওরা এইতো গাড়িতে উঠবে এখন।তারপর জয় ফোনটা আবিরের দিকে এগিয়ে দিয়ে বলে, আবির ধরো তোমার বাবা কথা বলবে। ফোনের ওপাশ থেকে আশফাক সাহেব বলে, আবির এদিকে প্রেসের লোকজন আছে।তাড়াতাড়ি আয়! আবির কিছুটা বিরক্ত হয়েই বললো এখন আবার প্রেস কেনো?প্রেস তো রিসেপশনে এলাউ করেছিলাম আমি । আশফাক সাহেব বললো আমি অতো কিছু জানি এরা তোর আর তোর বউয়ের ইন্টার্ভিউ না নিয়ে যাবেই না। আবির বললো আচ্ছা ঠিক আছে তুমি ওদিকটা সামলাও আমি আসতেসি।গাড়ি অবধি যেতে সময় লাগে ১ মিনিট এর মতো কিন্তু না সেখানে লেগে গেলো প্রায় ১৫ মিনিট কারন হিমাদ্রি কান্না থামাচ্ছিলোই না আর ওর মা অ কে বুঝিয়েই যাচ্ছিলো যে মা কাদেনা। গাড়ির কাছে আসতেই গার্ড দরজা খুলে দেয় আর হিমাদ্রি গিয়ে গাড়িতে বসে। আবির গাড়ির ফ্রন্ট ডোরটা খুলে টিস্যু বক্স নিয়ে পিছনে এসে বসে পড়ে।তারপর গিয়ে পিছনে হিমাদ্রির পাশে বসলো। গাড়ির মধ্যের দৃশ্যটা প্রথম থেকে শেষ অবধি একই ছিলো হিমাদ্রি কান্না করছিলো আর আবির টিস্যু বক্স থেকে টিস্যু এগিয়ে দিচ্ছিলো চোখ মোছার জন্য!
চলবে!
#thetanvirtuhin
YOU ARE READING
ভালোবাসার নীড়
Romanceউপরওয়ালা সবার জন্যই সর্বোত্তম কিছু ঠিক করে রেখেছেন। কিন্তু আমরা খানিক মরীচিকার পেছনে ছুটে জীবিনের রঙ হারিয়ে ফেলি। তারজন্য কিন্তু আমরা নিজেরাই দায়ী অধিকাংশে। তাই নিজের জীবন নিজের, নিজের জীবনের রঙ এর দায়িত্ব নিজের। নিজের জীবনকে রঙিন রাখার দায়িত্বও আমা...