পুরোটা রুমেই নিস্তব্ধতা বিরাজ করছে। নিরবতা আবির বলে উঠলো এই ভাড়ি বেনারসিতে নিশ্চই আপনার আনকমফোর্টেবল ফীল হচ্ছে। চেঞ্জ করে নিনি আপনার লাগেজের জামা-কাপড় আলমারিতে তুলে রেখেছে মা।হিমাদ্রি চুপচাপ উঠে গেলো। আবির উঠে থাই গ্লাস টা টেনে বারান্দায় গিয়ে দাড়ালো। কিছুটা বিভ্রান্ত আবির কী বলবে আবির হিমাদ্রিকে? কিভাবে শুরু করা উচিত ওর সম্পর্কটা? সম্পর্ক বিশেষ করে প্রেমের সম্পর্কে এককালের পাক্কা খেলোয়াড় ও আজ বিভ্রান্ত। হয়তো মরিচা ধরে গেছে আর মরিচাটা হয়তো ছোয়া। আবির কিছুটা নার্ভাস ফীল করছে এটা ভেবে যে হিমাদ্রির সাথে কথা বলবে কী নিয়ে? বাইরের মৃদু বাতাসে আবির দাঁড়িয়ে আছে এমন সময় একটা হালকা মিষ্টি কন্ঠ ভেসে আসলে "আবির তুমিও চেঞ্জ করে ফ্রেস হয়ে নাও"। আবির যথেষ্ট ঘোরে থাকলেও শব্দটা একদম অন্যরকম একটা অনুভুতি দিলো আবিরকে। আবির ঘাড় ফিরিয়ে দেখলো হিমাদ্রি দাঁড়িয়ে আছে।আবির কিছু বলতে গিয়েই বলতে পারলো না কথা কেনো যেনো গলায়ই আটকে আছে। আবির বাথরুমে গেলো কী ফ্রেশ হবে আর কি চেঞ্জ করবে। আবির একদৃষ্টিতে নিজেকে দেখছে। নিজেকেই প্রশ্ন করছে আবির! কে যাদু-টোনা করলো আমায়? ২ দিন আগেও আমি মেয়ে নিয়ে ভাবতাম না, হ্যা মানছি এখন ভাবতে হবে কারন আমি বিবাহিত। তা বলে এই হাল আমি কথা বলতে পারবোনা? আবির এবার উদ্ভটভাবে অতিত টানছে কই আবির কতগুলো রিলেশনশিপ ছিলো তোর কখনও তো হয়নি এমন তাহলে কীসের দ্বিধা এতো? প্রায় ১৫ মিনিট হচ্ছে আবির বাথরুমে এখনো বের হয় নী। রাতের দেড়টা বাজে। হিমাদ্রির মন কিছুটা উস-খুস করছিলো,কী করছে এতোক্ষন?ঘুমিয়ে পড়লো নাকি? হিমাদ্রি গিয়ে বাথরুমের দরজায় টোকা লাগালো। আবিরের ঘোর কাটলো কিন্তু টোকা শুনে কিছু বললো না। হিমাদ্রি বললো "এতোক্ষন কী করছো,বাথরুমে? ঘুমাই গেছো নাকি?"। আবির বললো এইতো আসতেসি আর ৫ মিনিট।আবির চটজলদি চেঞ্জ করে মুখ-হাত ধুয়ে নিলো।বের হয়ে দেখে হিমাদ্রি কপাল কুচকে তাকিয়ে আছে ওর দিকে।আবির গিয়ে হিমাদ্রির সামনে বসলো। দুজনই খাটে মুখো-মুখি বসা।আবির বললো, শুরু করো। হিমাদ্রি একটু চমকে প্রত্যুত্তর করলো কক্কী শুরু করবো?। আবির ও বেশ নারভাস ফীল করছে কথা বলা কষ্টদায়ক হয়ে উঠেছে ওর পক্ষে আরে ভাই হচ্ছেটা কী হৃদস্পন্দন বেড়ে যাচ্ছে কেনো হিমাদ্রির কন্ঠ শুনে! আবির বললো না মানে তোমার কিছু বলার নেই। হিমাদ্রি মুচকি হেসে বললো, হ্যা আছে কিন্তু আজ বলবো না আজ তুমি বলবে আর আমি শুনবো। যা যা আমার শোনা প্রয়োজন সব বলো কিছু লুকানোর প্রয়োজন নেই আর যেগুলো তোমার মনে হবে যে আমার জানার প্রয়োজন নেই সেগুলো বলারও প্রয়োজন নেই। আবির ভাবছে কোথা থেকে শুরু করবে। হঠাৎ হিমাদ্রি বললো, কী ব্যাপার বিজনেস টাইকোন আবির সাহেব আমার সাথে কথা বলতে এতো নারভাস ফীল করছে কেনো?এতো ঘামছেই বা কেনো? আবির অস্পষ্ট একটা হাসি দিয়ে বললো না তেমন কিছু না বহুবছর পর কোনো মেয়ের সাথে কথা বলছি তো তাই একটু প্রব্লেম হচ্ছে। হিমাদ্রি বললো কে মেয়ে?আমি বিয়ে করা বউ তোমার! আবির কিছু বলতেই পারছেনা এক অজানা অস্থিরতা কাজ করছে তার মধ্যে।হিমাদ্রি কিছুটা অবাক হচ্ছে কিন্তু আবিরের এই নাজেহাল অবস্থা দেখে মুচকি হাসছেও।এবার আবিরকে বললো আবির তোমার হাতটা দাও তো। আবির হাত দিতে ইতস্ততবোধ করলো না। হিমাদ্রি আবিরের হাতটা ধরে বললো এদিকে তাকাও আবির, আবির তাকাতেই হিমাদ্রি বললো এতো নারভাস হবার কী আছে? তোমার প্রব্লেম হলে কিছু বলার দরকার নেই। আবির একটু শ্বাস নিলো জোরে তারপর বললো না বলাটা জরুরী। আচ্ছা আমরা বারান্দায় গিয়ে কথা বলি? হিমাদ্রি ঘাড় নেড়ে সম্মতি জানালো। ওরা দুজন বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে। মৃদু বাতাসে, নিস্তব্ধ আকাশে আবির সাহস খুজছে। কথাগুলো আবিরের বলতেই হবে। আবির বলা শুরু করলো।
হিমাদ্রি আমি এপর্যন্ত প্রায় শখানেক রিলেশনশিপ হবে করছি। কিন্তু প্রায় ৬ বছর আগে আমি একটা মেয়ের প্রতি একদম দূর্বল হয়ে পরি মেয়েটার নাম ছোয়া। আমাদের মধ্যে ২ বছরের মতো সম্পর্ক ছিলো কিন্তু হঠাৎ ই কিছু না জানিয়ে আমায় ঠকিয়ে অন্য কারো সাথে বিয়ে করে চলে যায়। বিশ্বাস করো শূন্যতা গ্রাস করে ফেলে আমায়,নিজের প্রতি নিজের ঘৃনার সৃষ্টি হতে থাক।আমি তো এতো ভালো ছিলাম না কারো জন্য ভালো হওয়াটা কী পাপ ছিলো আমার? কারো প্রতি পবিত্র অনুভূতি সৃষ্টি হবার পরে তা অনুভব করা কী পাপ ছিলো আমার? আমি বিনা দোষে এভাবে কষ্ট পেতে থাকি। হ্যা হয়তো ছোয়া আমার প্রথম ছিলো না। কিন্তু ছোয়া একমাত্র মেয়ে ছিলো যাকে আমি জীবনে প্রথমবার অন্তরের অন্তরাল থেকে চাচ্ছিলাম।এই ৭ টা বছরে এমন একটা দিন যায় নী যেদিন আমি আমার ভালো না থাকার কারন খুজি নী।আর কারন হিসেবে শুধুই পেয়েছিলাম যে কাউকে মন থেকে চাওয়াটাই পাপ। আসলে কী জানো হিমাদ্রি, প্রথম প্রেম মানে কোনো মেয়ের সাথে প্রথমবার রিলেশনশিপ এ যাওয়া না।যার প্রেমে পড়ার পরে আর অন্য কোনো মেয়ের দিকে মোহো থাকে না সেটাই প্রথম প্রেম আমার জন্য।আর ছোয়া-র পরে আমি কাউকে আমার জীবনে কল্পনাও করতে পারতাম না। এমনকি এই ৭ টা বছর যেভাবে কাটায় দিছি সারাটাজীবন ওভাবেই কাটানোর পরিকল্পনা ছিলো।কিন্তু যখন তোমায় দেখলাম তখন নিজেকে প্রশ্ন করলাম। আমি নাহয় ছোয়ার ভালো থাকার জন্য নিজেকে বিসর্জন দিছিলাম এখন তোমার ভালো থাকার জন্য কী নিজেকে উজাড় করতে পারবো না।তখন মন বললো কেনো পারবি না পারতে হবে।হিমাদ্রি,সবার প্রথম প্রেম কে জীবনসঙ্গী হিসেবে পাবার সৌভাগ্য হয় না।আর যারা পায় ওদের চেয়ে সুখি আর কেউ হয় না। কিন্তু প্রথম প্রেমকে চাইলেও তুমি ভুলতে পারবা না যতই ভালো থাকার অভিনয় করো না কেনো। বিচ্ছেদ দুপ্রকার হয় হিমাদ্রি একটা বিচ্ছেদ এ অপর পাশের মানুষটা মারা যায়, আমরা তখন নিজের মন কে বুঝাই যে তার স্মৃতিগুলো নিয়ে জীবন পার করে দিবো। এবং জীবন পার করে দেইও।
আর একটা বিচ্ছেদ হলো অপর পাশের মানুষটা বেচে থেকেও তোমাকে নিশ্চিত করে দেয় যে সে আর তোমার ভালো থাকার দায়িত্ব নিবে আর ভালো বাসবে না তোমায় ভালো। বিশ্বাস করো হিমাদ্রি ওই বিচ্ছেদটা মেনে তুমি জীবনেই নিতে পারবা না। আর আমিও পারিনি।
পরিশেষে একটা কথাই বলবো হিমাদ্রি আমি চাই না আমার এই ৬-৭ বছর যেভাবে মরন যন্ত্রনায় কেটেছে ওভাবে বাকি জীবনটা কাটাই।চলবে!
#thetanvirtuhin
YOU ARE READING
ভালোবাসার নীড়
Romanceউপরওয়ালা সবার জন্যই সর্বোত্তম কিছু ঠিক করে রেখেছেন। কিন্তু আমরা খানিক মরীচিকার পেছনে ছুটে জীবিনের রঙ হারিয়ে ফেলি। তারজন্য কিন্তু আমরা নিজেরাই দায়ী অধিকাংশে। তাই নিজের জীবন নিজের, নিজের জীবনের রঙ এর দায়িত্ব নিজের। নিজের জীবনকে রঙিন রাখার দায়িত্বও আমা...