ভালোবাসার নীড় : ১০

70 5 0
                                    

হিমাদ্রির শ্বাস ঘন হয়ে আসছে। হৃদস্পন্দন এর গতিটাও বেশ গতিশীল। আর পারছেনা হিমাদ্রি তাই ছেড়ে দিলো আবিরকে। কিন্তু আবির বেশ স্বাভাবিক। কারন আবিরের যেগুলোর জন্য দ্বিধা ছিলো সেগুলো জানানো শেষ।হিমাদ্রি কিছু না বলেই রুমে চলে গেলো।হিমাদ্রি রুমে ঢুকে রুমের দেওয়ালগুলোর দিকে লক্ষ্যই করে নী। এখন একটু ঘুরে ঘুরে দেখছে। দেওয়ালে আবিরের কয়েকখানা ছবি ঝুলানো যার মধ্যে অধিকগুলোর মধ্যেই সানগ্লাস পড়ে সুট্যেড বুটেড, রাউডি টাইপসের। এবার একটা ছবি চোখে পড়লো হিমাদ্রির যেটার মধ্যে আবির হাসছে হয়তো ছবিটা হঠাৎ তোলা কলেজের ছবি মনে হয়, আবিরের ছবিতে মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে আছে হিমাদ্রি। এমন সময় আবির বলে উঠলো হিমাদ্রি এগুলো দেখার জন্য প্রচুর সময় পাবা। এখন ঘুমাও, সকালে আমার অফিস আছে। হিমাদ্রি তো পুরাই থ। আজ বাসর রাত কই গল্প করবে না,ঘুম আর অফিস দেখাচ্ছে। কথাগুলো ভাবতে ভাবতেই রেগে গেলো হিমাদ্রি।এবার একটানে বলা শুরু করলো, আজ বাসর রাত কই গল্প করবা। না ঘুমাতে বলছে। মানলাম তোমার এর আগে বাসর হইছে আমার তো আর হয়নী আমার তো এটাই প্রথম বাসর নাকি? আবির কিছুটা থতমত খেয়ে গেলো বাসর মানে আমার এটা প্রথম বিয়ে, সে অনুযায়ী আমারও প্রথম বাসর। হইছে হইছে আমি জানি চরিত্রহীন দাদিমা আমায় বলছে যে তুমি কলেজে থাকতে বহু মেয়ের সাথে প্রেম করতা। আবির এবার কী বলবে ঠাওর করতে পারছে না। হিমাদ্রি বলা শুরু করলো শোনো আমার পরে আর কোনো মেয়ের কথা কিন্তু ভাববাও না তুমি এই কিন্তু প্রথমরাতেই বলে দিলাম। আর এটা ভুলেও মনে কইরো না যে আমিও অন্যসব মেয়ের মতো আলহাদি হয়ে টিপিক্যাল ভাবে বলে দিছি কথাটা। এটা সবসময় মাথায় রাখবা যে আমি ছাড়া অন্য কোনো মেয়ে তোমার জীবনে আসতে পারবে না আমি বেচে থাকতে। আবির মাথা নাড়লো একদম বাধ্য ছেলের মতো। হিমাদ্রি একটু শ্বাস নিয়ে আবার বলা শুরু করলো। আর আবির একদম বাধ্য ছেলের মতো মনযোগ দিয়ে শুনছে, হিমাদ্রি বললো, আর কী বললা অফিস না? তুমি কমপক্ষে ১ সপ্তাহ অফিসের -অ' ও মুখে নিবা না। অফিস যাওয়া তো দূরের কথা। আবির এবার আর মাথা নাড়তে পারলো না, এবার অস্পষ্ট স্বরে বললো। আসলে এতোদিন অফিস কামাই করা যাবে না, আমি অফিসে অল্প সময় দিবো বাকিটা তোমার। কিন্তু অফিস কামাই দেওয়া যাবে না। এবার হিমাদ্রি একটু সামনে এসে বললো আমার পুরো সময়ই লাগবে তোমায় জানতে হবে, এই ১ সপ্তাহ আমার।আর কাল থেকে তোমার বহু কাজ আছে ওগুলো করে যদি সময় পাও অফিস যাইয়ো আমি আটকাবো না।আবির বলা শুরু করলো কাজের লোক আছে, বলে আর তো বলতে পারে নী।তার আগেই হিমাদ্রি বললো জানি আমি তবুও তোমায় কাজ করতে হবে। এখন ঘুমাবো না তুমিও ঘুমাবা না।তাহলে করবো টা কী? সেটা তোমার দায়িত্ব কিছু বের কর যা করে সময় কাটানো যাবে। আর হ্যা কোনো প্রকার দ্বিধা রেখে কথা বলবা না।মনে করবা আমাদের বহুবছরের প্রেম আমরা প্রেম করে বিয়ে করছি।আমি যেমন নির্দিধ্বায় কথা বলি ওভাবে কথা বলবা। আমি যেমন প্রথম দিন বকা দিছি তোমায়। অবশ্য তোমার দোষ ছিলো। আমিও বেশি দোষ করলে বকবা কিন্তু যদি শুধু বকা দাও তাহলে আমিও বকা একদমই মানবো না। আমিও তর্ক করবো আর তর্কে না পারলে মারা-মারিও করবো। আমি কিন্তু সেল্ফ ডিফেন্স এর জন্য কুংফুও শিখছি সো বী-কেয়ারফুল।আবির হাড়ে হাড়ে এবার তার শাশুড়ির কথাগুলো টের পাচ্ছে। হিমাদ্রি আসলেই বেশ সরল। আবির বললো যা যা বলছো আমি সব শুনছি, আর মনেও রাখবো মেনেও চলবো। আর ট্রাস্ট মী আমি একটুও বকবো না তোমায়, সোজা লাঠি দিয়ে মারবো। হিমাদ্রির চোখ বড় হয়ে কপালে ভাজ পড়ে গেলো। কী, কী বললা তুমি? আমায় মারবা? তাও আবার লাঠি দিয়ে? আবির হেসে বললো মজা করছিলাম। আমায় বকতে বকতে ঘেমে গেছেন আপামনি, বলেই পানির জগ থেকে একগ্লাস পানি ঢেলে হিমাদ্রিকে দিলো আবির। হিমাদ্রি কিছুটা খেয়ে বললো তুমি আপামনি বললা কেনো? আবির বললো ওই আপামনি বলি নাই।আমি যখন প্রাইমারীতে ছিলাম তখন আপামনি মানে একটা ম্যাডাম আমায় এভাবে বকতো। হিমাদ্রি একটু আলহাদি হয়ে বললো তাহলে বকা খাওয়ার স্বভাব ছোট বেলা থেকেই আছে? আবির বললো না একদমই না, বহুবছর পর তুমি বকা দিলা। দাদিমা বেচে ছিলো যখন তখন শুধু দাদিমাই বকতো। বাবা-মা অনেক আগেই বকা দেওয়া ছেড়ে দিছে। হিমাদ্রি খাটে বসতে বসতে বললো দাদিমার হয়ে তাহলে এখন থেকে আমি বকবো। আচ্ছা বলোনা এখন সময় পার করবো কী করে? আবির চট করে বললো অনেকদিন হয় মুভি দেখি না। চলো মুভি দেখি। হিমাদ্রি বললো আচ্ছা ওকে। আবির টিভিতে ওয়াইফাই কানেক্ট করে একটা হিন্দি মুভি চালালো। তারপর রুমের লাইট অফ করে দিয়ে খাটের একপাশে বালিশ হেলান দিয়ে আধশোয়া হয়ে মুভিতে মনযোগ দিলো।আবির মনযোগ দিয়ে মুভি দেখছে। এমন সময় হিমাদ্রি বললো, বালিশ নিয়ে এদিকে আসো।আবির বালিশ নিয়ে খাটের মাঝখানটায় আসলো।আসার সাথে সাথেই হিমাদ্রি আবিরের হাত জড়িয়ে কাধে মাথা রেখে বললো এবার দেখো।আবির মুগ্ধ হয়ে গেছে, মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে আছে হিমাদ্রির দিকে। হিমাদ্রির আবার সেই রোগে ধরলো নিঃশ্বাস ঘন হয়ে আসছে, হৃদস্পন্দন বেড়ে যাচ্ছে, এভাবে আর তাকিয়ে থাকতে পারছে না হিমাদ্রি। চোখ নামিয়ে কাপা-কাপা কন্ঠে বললো মুভি সামনে এদিকে না, মুভি দেখো আর আমাকেও দেখতে দাও।আবিরের হুশ ফিরলেও ঘোর কাটেনি কিছু বলতে চাচ্ছিলো হিমাদ্রিকে কিন্তু বলতে পারলো না। কারন মাঝে মাঝে নিরবতাও ভালোবাসা প্রকাশ করে বহুটা!

চলবে!
#thetanvirtuhin

ভালোবাসার নীড়Where stories live. Discover now