ভালোবাসার নীড় : ০২

96 6 0
                                    

ধুলোর সাথে আবির তুলনা করলো নিজের জীবনের সুখটাকে। এই ধুলোর মতই কখন যে ওর আত্মশান্তিটা উড়ে গেলো টের ই পেলো না সে। প্রায় ২৫ মিনিট পর গাড়িগুলো আবার কষে ব্রেক করলো।সাথে সাথে গার্ড এসে গাড়ির দরজা খুলতেই আবির গাড়ি থেকে নেমে জামিল কে বললো আজ রাতটা থাকবো এখানে বলেই হন-হনিয়ে হেটে গেলো ভেতরে। এই সেই আপন নিবাস যেখানে ওর শৈশব, কৈশর আর যৌবনের অনেকটা সময় পার করেছে আবির। আর এই সৃত্মিগুলোর থেকে দূরে থাকার জন্যই আবির ত্যাগ করেছে এই আপন নিবাস। আবির এখন ওর কাছের মানুষটার ঘরের সামনে নিজেকে শক্ত করছে আবির যদি ওর ভেঙে পড়া দেখে ওর দাদিমা কষ্ট পায়। না যে ওর ছোটোবেলাটাকে সাজিয়েছে তাকে এই শেষ মূহুর্তে কষ্ট দেবে না আবির। কিছুতেই না! আবির রুমে ঢুকলো! ঢুকে যা দেখলো তা দেখে আর নিজেকে সামলাতে পারছে না আবির।হ্যা ভেতরটা যেনো ছাড়-খার হয়ে যাচ্ছে। একি ওই দাদিমা যিনি কখনও ঔষধ খেতো না বিরক্তি লাগতো তাই? আবির এ কী দেখছে?হাতের মধ্যে ক্যানেলা,অক্সিজেন মাস্ক লাগানো মুখে, আরেক হাতে স্যালাইন চলছে, হ্যা আবিরের মন জানান দিয়ে দিলো যে ওর কাছের মানুষটাও এবার ধোকা দেবার পরিকল্পনায় আছে। বুকটা হুহু করে উঠছে বার-বার চোখ বাধা মানছে না। আবির বোঝাচ্ছে চোখ কে যে কাদলে হবে না। আবিরের বাবা-মা ওর দাদির পাশে দাঁড়িয়ে আছে। আবিরকে দেখে চোখে-চোখেই কথা বলে নিল ওনারা। ওর দাদিমা ঘুমোচ্ছে। আবির একটুও বিরক্ত করতে চায় না ওর কাছের মানুষটাকে। কিন্তু আবির কাছে যেতেই চোখ টা খুললো নিভু নিভু করে।কাপা কাপা স্বরে বললো এসেছিস আবলু? আবিরকে আবলু বলে ডাকে ওর দাদিমা। কেমন আছিস আবলু? আবির ফ্লোরে বসে ওর দাদির মাথায় হাত বুলোতে বুলোতে বললো ভালো আছি দাদিমা। তুমি ভালো নেই কেনো,বলোতো? ওর দাদিমা একটু মুচকি হেসে বললো আবলু আর বেশিদিন নেই রে আমি। আবির আর আটকাতেই পারলো না চোখ বেয়ে পড়েই গেলো শেষে।আবির ভাবে কেনো এমন হয়? কেনো আমার কাছের মানুষদের থেকে প্রতারিত হই আমি?প্রথম প্রতারক ছিলো আপন জমজ হওয়া সত্যেও আমায় ফেলে রেখে চলে গেলো, তারপরে ছোয়া আর এখন দাদিমাও।কার জন্যে বাচবো আমি? দাদিমা ও হয়তো বুঝে গেছে আবির আশা ছেড়ে দিয়েছে আবির ভেঙ্গে পড়েছে তাই দেখে দাদিমা আর ভনিতা না করে বললো, আবলুরে শেষ একটা জিনিস চাইবো দিবি আমায়? তুমি শুধু একটা বার উচ্চারন করো দাদিমা শুধু একটা বার আবিরের কথা আবিরের মুখ থেকে সম্পূর্ন বের হবার আগেই দাদিমা বলে আমার পছন্দ করা মেয়েটাকে বিয়ে করে নিবি আবলু?আমি জানি তোর কোনো মেয়েই পছন্দ হবে না কিন্তু আমার উপর ভরসা করে শেষ একটা কথা শোন আবলু,আর তো ভরসা করতে বলবো না বলার জন্য আমি থাকবোও না। তোর কোনক মেয়েই পছন্দ হবে না আমি জানি কিন্তু কি করবো বল তোর বিয়ে না হলে আমার আত্মাটাশান্তি পাবে না রে আবলু আমার জন্য হলেও বিয়ে টা কর। একি বললো দাদিমা? কী করবে এখন আবির?যে দাদি ওর শৈশব যে দাদিমা ওর কৈশর, যে দাদি ওর জীবনটাকে সাজিয়েছে তার শেষ ইচ্ছাটা পূরন না করে কীভাবে থাকবে?মা-বাবার ব্যাস্ত সময়ে যার কাছে বড় হয়েছে তাকেই কী শেষ প্রতিদান দিতে ব্যার্থ হবে আবির? আবির ভাবলো এটা পাপ হবে এর চেয়ে বড় ব্যার্থতা আর কিছুই হবে না। আবির বললো হ্যা দাদিমা আমি করবো বলো কাকে বিয়ে করবো? দাদিমা একরাশ হাসি নিয়ে বললো সত্যি?আচ্ছা তার আগে আমার কসম করে একটা কথা দে? আবির বললো হ্যা বলো। তুই কখনো তোর বউকে অবহেলা করবি না,তোর বউকে ভালোবাসবি, ওর প্রতি প্রত্যেকটা দায়িত্ব অক্ষরে অক্ষরে পালন করবি,ওর ইচ্ছা পূরন থেকে শুরু করে ওর অনিচ্ছাগুলোও মানবি মোট কথা স্বাভাবিক দাম্পত্য জীবন কাটাবি তুই,কথা দে আবলু!!
আবির ভাবছে একি বলছে দাদিমা উনি কী জানেন না আমার কথা? ভাবনায় ছেদ পরে দাদিমার কথা দে, আমি চাই না আমার আবলু বেচে থেকেও মারা যাক কথাটা শুনে। আবিরের রক্তচলাচল কয়েক শত কোটি কোটি গুন বেগে চলতে থাকে, মাথা কাজ করছে না ওর কী করবে ও? দাদি অনবরত বলেই যাচ্ছে কথা দে। আবির স্বিদ্ধান্ত নিয়েই ফেললো হ্যা দাদির কথা সে রাখবে দাদির এই প্রতিদান তাকে দিতেই হবে আবির বলেই ফেললো কথা দিলাম আমি বলার সাথে সাথেই ভীষন তীক্ষ্ণ একটা আওয়াজ শুনতে পেলো আবির। চারপাশ টা থম-থমে, নিঃশব্দ, হঠাৎ কারো কান্নার আওয়াজ শুনতে পেলো আবির কান্না টা ওর বাবা আশফাক চৌধুরির। হ্যা আবিরের দাদিমা আর নেই আবির বুঝে গেছে চোখ বুঝে পানি ফেলে নিয়ে দাদির দিকে তাকালো আবির। মুখে এক উজ্জ্বল হাসি নিয়ে চোখ খুলে তাকিয়ে আছে আবিরের দিকে আবির হাত দিকে চোখ দুটো বন্ধ করে দিয়ে দাদিমায়ের কপালে চুমু দিয়ে সোজা উঠে নিজের রুমে চলে এসে দরজা লাগিয়ে দেয়। ওখানে কান্না করলে যে ওর বাবা-মা ভেঙে পড়তো। এবার শুরু হয় আবিরের কান্না চিৎকার করছে আবির। বুকটা দুভাগ হয়ে যেতে চাচ্ছে কষ্টে ঘরে থাকা কাচগুলো ভেঙে পড়ে যেতে চাচ্ছে এতটাই জোরে চিৎকার করে কাদছে আবির। জোহরের আযান দিচ্ছে। দরজা ধাক্কানোর শব্দ পেয়ে দেখে কাজের লোক এসে বলছে দাদিমার জানাযা হবে বড় সাহেব নিচে যেতে বলছে পাঞ্জাবি পড়ে। আবির সোজা বাথরুমে চলে গিয়ে ঝরনাটা ছেড়ে দিলো ঝরনার পানির চেয়েও যেনো বেশি পানি ঝড়ছে আবিরের চোখ থেকে। বের হয়ে সাদা একটা পাঞ্জাবি আর টুপি মাথায় দিয়ে নিচে নামলো আবির। পাঞ্জাবির বোতামটাও খোলা আবিরের। দাদিমার মুখটা শেষবারের মতো দেখে কাধে তুলে নিলো খাট। হাটছে আবির উদ্দেশ্য দাদিমাকে শেষঠিকানা কবরস্থানে রেখে আসবে। আবিরের কানে কোনো শব্দই যাচ্ছে না। পুলিশের গাড়ির সাইরেন, রিপোর্টারদের চিল্লা-চিল্লি এসব যেনো নির্বাক লাগছে আবিরের কাছে আবির শুধু ওর দাদিমায়ের শেষ কথাগুলো ভাবলো আর স্বিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললো যে দাদিমার কথা ভেবে হলেও জীবনটাকে আবার রঙ্গিন করতে হবে। দাদিমার কবরে মাটি দিচ্ছে আবির। সবাই একে একে চলে গেলো রয়ে গেলো আবির আর ওর বাবা আশফাক চৌধুরি। আশফাক চৌধুরি বলে উঠলেন দাদিমার কথা গুলো মক্নে আছে আবির? আবির একটুও দেরি না করে বললো মেয়েটা কে? তোর জয় আঙ্কেলের মেয়ে হিমাদ্রি মাসখানেক হয় দেশে আসলো। আমাদের বাসায় এসে তোর দাদির সাথে বেশ আড্ডা দিতো প্রায়ই। তোর দাদির সাথে একদম মিশে গেছিলো মেয়েটা। তারপর থেকেই পছন্দ করে ফেলে তোর জন্য তোর দাদিমা। মেয়ে বিয়েতে রাজি? আবির কবরের দিকে তাকিয়েই বলে কথাটা। আশফাক সাহেব বলেন হ্যা রাজি তোর সম্মতির জন্যই আমরা সবাই অপেক্ষা করছিলাম বাবা,আমার মা মারা গেছেন তাতে যতটা কষ্ট পেয়েছি তার থেকে শতগুন কষ্ট পেয়েছি গত ছয়টা বছর তোর এই পরিনতি দেখে। বিয়েটা করে ফেল বাবা। সব ঠিক হয়ে যাবে! আবির একটা দীর্ঘনিঃশ্বাস নিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে বলে আমি বিয়েতে রাজি,মেয়ে দেখার প্রয়োজন নাই আমার দাদিমার ৩ দিনের পরেই বিয়ের দিন ফিক্সড করো যত তাড়াতাড়ি সম্ভব। আমি অতি শিঘ্রই বিয়ে করবো!

চলবে!
#thetanvirtuhin

ভালোবাসার নীড়Where stories live. Discover now