বিকাশ আগে বেশ কয়েকবার দীপাদের বাড়ি গিয়েছে, কিন্তু আজ ভীষণ বাধোবাধো লাগছে। তাদের সবার আন্তরিক আমন্ত্রণ থাকা সত্ত্বেও কিছুতেই স্বাভাবিক ছন্দে ফিরতে পারছে না। বিগত দিনে ঘটে যাওয়া কিছু ঘটনার পুঙ্খানুপুঙ্খ বিবরণ এখনও বিকাশের মনে ভীষণ তরতাজা, তাই হয়তো স্মৃতির আঁকশি পিছন থেকে তাকে বারবার টেনে ধরছে।
বছরখানেক আগের কথা, দীপার সাথে তখন প্রায়ই দেখা হতো। গাড়ি ছুটিয়ে শহরের এক প্রান্ত থেকে আর এক প্রান্তে ঘুরে বেড়ানো দীপার নেশা ছিল, বিশেষ করে ড্রিঙ্ক করলে। গাড়ি ছিল তাদের আড্ডার আদর্শ স্থান, যখন যেখানে পছন্দ পার্ক করে গল্প করত। বিকাশের বাড়িতেও পার্টি লেগেই থাকত, কখনো আবার দু'জনে মিলে হাজির হতো ক্লাবে, বা দীপার বন্ধুদের আড্ডায়।
একটা ছুটির দিনে দীপা প্রায় জোর করে বিকাশকে টেনে নিয়ে গিয়েছিল তার প্রথম 'বয় ফ্রেন্ড' পার্থর বন্ধুদের আড্ডায়। পার্থ এখন ভারতবর্ষের বাইরে। তার বাবা-মা অনেক বুঝিয়ে ছেলেকে নিয়ে বহুদিন আগেই পাড়ি দিয়েছেন দক্ষিণ আফ্রিকায়। অবশ্য তা ছাড়া আর কোন উপায় ছিল না। বদ সঙ্গে পড়ে একেবারে বখে গিয়েছিল পার্থ। দীপা সবই জানে, কিন্তু সেই সব প্রসঙ্গে কারও সাথে কখনো আলোচনা করে না। অন্যরাও পার্থর প্রসঙ্গ এড়িয়ে যায়, তবে নেপথ্যে তাদের সম্পর্ক নিয়ে গুঞ্জন চলতেই থাকে।
পার্থর বন্ধুদের কাছে দীপা তার বর্তমান প্রেমিকের বিজ্ঞাপন করার লোভ সামলাতে পারেনি, এবং সেই কারণেই সে বিকাশকে আগে থেকে কিছু না জানিয়ে টেনে নিয়ে গিয়েছিল তাদের আড্ডায়। দীপা যে পার্থর চেয়ে হাজারগুণ ভালো বন্ধু পেয়েছে, এবং তারা দু'জন দু'জনকে ভালোবাসে--সেই সংবাদ পার্থর বন্ধুদের ভিতর ছড়িয়ে দেবার বিশেষ প্রয়োজন বোধ করছিল দীপা। সে খুব ভালো করে জানত যে, বিকাশের হঠাৎ আবির্ভাবের সংবাদ তাদের আড্ডার চৌহদ্দিতে সীমাবদ্ধ থাকবে না। বন্ধুত্বের খাতিরেই হোক বা পার্থকে খুঁচিয়ে দিয়ে মজা উপভোগ করার অশুভ অভিপ্রায়ে, কেউ না কেউ ঠিক তার কানে সেই বার্তা পৌঁছে দেবে, এবং শেষমেশ দীপা জয়ের হাসি হাসতে পারবে।
YOU ARE READING
সাপলুডো
General FictionAmbitions and dreams vis-a-vis reality and corporate politics.