রঞ্জনার সাথে ফোনে যোগাযোগ করে অফিস থেকে বেরিয়ে পড়ল বিকাশ। শনিবারের সন্ধ্যা, অথচ মনে স্ফূর্তি নেই। জীবনের স্বাভাবিক ছন্দই যেন নষ্ট হয়ে গিয়েছে। হঠাৎ দুটো গাড়ি মুখোমুখি এসে যেতেই কোনমতে বাঁ দিকে কাটিয়ে রক্ষা পেল বিকাশ। দোষ তারই, কিছুসময়ের জন্য একেবারে অন্যমনস্ক হয়ে গিয়েছিল। বিকাশ মনে মনে হয়তো চাইছিল কিছু একটা ঘটুক, রোজকার একঘেয়ে জীবনে পরিবর্তন আসুক। এইসব ভাবতে ভাবতে পৌঁছে গেল রঞ্জনার অফিসে।
অফিসের বিজ্ঞাপন বিভাগে রঞ্জনা টপ বস, খুব কাজের মেয়ে। বেছে বেছে টিম তৈরি করেছেন বটে সুস্মিতা সেন। রঞ্জনা যদিও বিকাশের আবিষ্কার। সে চাকরির ইন্টারভিউ দিতে গিয়েছিল বিকাশদের খবরের কাগজের অফিসে--কমার্শিয়াল আর্টিস্টের কাজের জন্য। রঞ্জনার সাথে দু-চার কথা বলেই বিকাশ বুঝতে পেরেছিল খবরের কাগজের অফিস তার জন্য সঠিক ক্ষেত্র নয়। এই চাকরি সে বেশী দিন করবে না, এবং করলে নিজের ক্ষতি করবে। একজন শিল্পী হয়ে খবরের কাগজের লে-আউট বা ম্যাগাজিন কভারের ডিজাইনের ফাঁকে নিজের সৃজনশীলতা, এবং উদ্ভাবনীশক্তি বিসর্জন দিয়ে ফেলবে। প্রথম প্রথম নামী কাগজের তকমা বেচে নাম কিনতে খারাপ না লাগলেও, কিছুদিন পর যখন ঘষামাজার অভাবে নিজের প্রতিভার বিচ্ছুরণ তার স্বাভাবিক ছন্দ হারাবে, তখনি শিল্পীসত্তার মৃত্যু।
শিল্পের সাথে শিল্পীর যোগসূত্রের মাধ্যম অতি সূক্ষ্ম। অনুভূতির জগত বড়োই স্পর্শকাতর--অবহেলার সামান্যতম ইঙ্গিতে চিরদিনের জন্য ছিন্ন হয়ে যেতে পারে বহুদিনের বোঝাপড়ায় তৈরি সাঁকো। আত্মবিশ্বাসের অভাববোধ তখন গ্রাস করে শিল্পীকে; নিজেকে অসহায় মনে হয়।
বিকাশ মনে করে--প্রতিভার অধিকারী না হওয়াই ভালো তাতে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার তাগিদ থাকে অনেক বেশী। নিজের যোগ্যতা সম্বন্ধে সজাগ থাকলে ত্রুটি বিচ্যুতি শুধরে নেওয়া সহজ, কিন্তু প্রতিভার প্রতিফলিত আলোয় নিজেকে বিচার করতে শুরু করলে, অন্যের চেয়ে পৃথক ভেবে চালচলনে নিজের বিজ্ঞাপন আরম্ভ করলে--তার সর্বনাশ কেউ ঠেকাতে পারে না।