Chapter-11 | Part-2

34 1 0
                                    

দীপার মিষ্টি মুখ, ভালোবাসায় ভরাট দু-চোখে হরিণীর চঞ্চল চাউনি মনের পর্দায় অতর্কিতে ভেসে ওঠায় বিকাশ উচ্ছ্বসিত। খুব ইচ্ছা করছিল দীপান্বিতার কণ্ঠস্বর শুনতে! জানতে এই মুহূর্তে সে কোথায়! বা কি করছে! ফোনের মাধ্যমে যোগাযোগের সুযোগ সবসময় রয়েছে, কিন্তু তা সত্ত্বেও মন সায় দিল না। মনে মনে আদর করে 'দীপান্বিতা' বলে একবার ডাকল, মনে হল কে যেন সাড়া দিল। কি আশ্চর্য, এমনও হয়!

মিতাদেবী মেয়েকে নিয়ে বিয়েবাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হতেই প্রিয়বাবুর মন ফাঁকা। স্ত্রী-মেয়ের সান্নিধ্যে, পারিবারিক বন্ধনের নিরাপত্তায় নিজেকে ভুলে ছিলেন। মঞ্চে প্রিয় মজুমদার একা হতেই শূন্যস্থান ভরাট করতে ফিরে এসেছে সকালের তিক্ত দৃশ্যগুলো। নিজের ঘরে চুপ করে ঘাপটি মেরে বসে আছেন। মুখ চোখের ভাব দেখে মনে হচ্ছে, চুরির দায়ে ধরা পড়েছেন। তিনি যেন পালিয়ে এসে এই ফ্ল্যাটে আশ্রয় নিয়েছেন। কয়েক ঘণ্টা আগেও যেখানে আরাম বোধ করছিলেন, সেই মনোরম পরিবেশ এখন দুরূহ বলে বোধ হচ্ছে। প্রিয়বাবু উপলব্ধি করছেন যে, নিজেকে পরিচালনা করবার ক্ষমতা তিনি ক্রমশ হারিয়ে ফেলছেন; অন্যের মুখাপেক্ষী হয়ে পড়ছেন। কেমন যেন ভয় ভয় লাগছে, কিন্তু কিছুতেই কিসের ভয় তা বুঝতে পারছেন না।

কি আশ্চর্য খেলা খেলতে পারে মানুষের মন। নিজের শোবার ঘরে নিজেকে বন্দী বলে মনে হচ্ছে বাড়ির মালিক প্রিয় মজুমদারের। গৃহবন্দী করেছে সুস্মিতা। নিজের চেয়ার ছেড়ে উঠে জানলার সামনে দাঁড়িয়ে সিগারেট ধরালেন। সিগারেটের ধোঁয়া কুণ্ডলী পাকিয়ে হাওয়ার সাথে নৃত্য করতে করতে কিভাবে মিলিয়ে গেল। প্রিয়বাবুর কত শত স্বপ্ন এইভাবে নীরবে বায়ুমণ্ডলে চিরকালের মতো মিলিয়ে গিয়েছে। তার কোনও অস্তিত্ব নেই, সব তাঁর নাগালের বাইরে। স্বপ্ন সবসময় সোজাসাপ্টা হয় না; ধোঁয়ার মতো, সাপের মতো কুণ্ডলী পাকিয়ে অবচেতনে ভবিষ্যতের সলতে পাকিয়ে চলে। কিছু সলতে সন্ধ্যায় গৃহস্থের মঙ্গল কামনায় প্রদীপ হয়ে জ্বলে, কিন্তু বাকীরা কোন এক শুভ মুহূর্তে অগ্নি সংযোগের অপেক্ষায় থাকতে থাকতে...একদিন শুকিয়ে যায়। সলতের আকার থাকে, কিন্তু তাতে আর অগ্নিসংযোগ করা যায় না, করলেও ফল পাওয়া যায় না।

সাপলুডোWhere stories live. Discover now