স্ত্রীর নিষ্পাপ ঘুমন্ত মুখের দিকে একদৃষ্টে অনেকক্ষণ তাকিয়ে ছিলেন প্রিয়বাবু। দারুণ আভিজাত্য আছে মিতাদেবীর চেহারায়। বয়সের ভারে শরীর একটু ভারী হয়েছে ঠিকই, কিন্তু মুখের আদল পালটায়নি। বিছানায় লুটোপুটি খাওয়া চাঁদের আলোয় প্রিয়বাবুর রক্তে জোয়ার এসেছে তা নিজে বেশ উপলব্ধি করতে পারছিলেন। খুব ইচ্ছা করছিল একবার ছুঁয়ে দেখতে কলেজের বন্ধু মিতাকে, কিন্তু প্রশ্রয় না দিয়ে অচিরেই নিজেকে নিরস্ত করলেন। সকালেই বারবার আফসোস করছিলেন--তিনি শুরু করেন ভালো, কিন্তু শেষ কিছুতেই নিজের মনোমতো হয় না। তাই আজকের দিনটা অন্তত ভালো করে শেষ হোক মনে করে, মনের দুরভিসন্ধি পাশবালিশ দিয়ে চাপা দিয়ে নিজে পাশ ফিরে শুলেন।
পাশ ফিরতেই ভেসে উঠল সাধের সুস্মিতার মুখচ্ছবি। মন ফিরে গেল গতকাল রাতে, বিকাশ ঘুমিয়ে পড়েছে দেখে একা ফিরে এসেছিলেন। সুস্মিতার সুবিধা-অসুবিধার কথা একবারের জন্য চিন্তাও করেননি। একা এক মহিলা থাকেন, সেখানে একজন সম্পূর্ণ অপরিচিত মানুষকে প্রায় অচৈতন্য অবস্থায় ছেড়ে আসা উচিত হয়নি বলে এখন মনে হচ্ছে। সকাল থেকে পাঁচবার ফোনে কথা হয়েছে, অথচ একবারও সুস্মিতা সেই অপ্রিয় প্রসঙ্গ তোলেননি। কোনদিন প্রিয়বাবুর ভালো ছাড়া খারাপ করেননি, কেন যে সুস্মিতার মতো প্রখর বিচারবুদ্ধি সম্পন্ন মহিলা তাঁকে ভালোবাসতেন তা আজও তাঁর কাছে রহস্য।
সুস্মিতার বয়স চল্লিশের ওপর, চোখা চেহারা। যেমন গায়ের রং, তেমন বাচনভঙ্গি। যে কোন মানুষকে তাক লাগিয়ে দিতে পারে এমন জাদু আছে তার উপস্থিতিতে। সারাদিন স্ত্রীর পাহারায় থেকে প্রিয়বাবু সুস্মিতাকে মিস করতেও পারেননি। মিতাদেবী চোখ বন্ধ করতেই নিজেকে স্বাধীন মনে হল। পরিবারের বেড়াজাল টপকাতেই সুস্মিতার প্রতি কৃতজ্ঞতাবোধ ফের ফিরে এল। প্রকৃতির নিয়ম হল--কোন স্থান শূন্য থাকতে পারে না, কাজেই মিতাদেবীর পরিবর্তে এখন জায়গা করে নিয়েছে স্বয়ং সুস্মিতা। প্রিয়বাবু খুব ভালো করে জানেন, মিতা যেমন তাঁকে সাধারণ কর্মী থেকে সাংবাদিক তকমা আদায়ের সহজ সুযোগ করে দিয়েছিলেন, সুস্মিতাও তেমন নানা গলি ঘুপচি পার করে, নিজে অপমানের শিকার হয়েও তাঁকে সম্পাদকের পদে বসিয়েছেন। দাঁড়িপাল্লার হিসাবে দু'জনেই সমান সমান।
KAMU SEDANG MEMBACA
সাপলুডো
Fiksi UmumAmbitions and dreams vis-a-vis reality and corporate politics.