আরও কিছুসময় দু'জনের কথা চলেছিল। প্রিয়বাবু নানা অছিলায় সুস্মিতাকে পিছনে ফেলে আসা মধুর দিনগুলোর সুখস্মৃতি স্মরণ করিয়ে শারীরিকভাবে না হোক অন্তত মানসিকভাবে কাছে টানবার চেষ্টা করছিলেন, কিন্তু শেষমেশ সফল হলেন না। সুস্মিতার কাছে তিনি তখন দাবার ঘুঁটি ছাড়া আর কিছু নয়। কথায় কথায় সুস্মিতা সেই কঠোর সত্য পৌঁছে দিয়েছেন, কিন্তু মানতে নারাজ প্রিয়বাবুর লোভী প্রেমিক-মন। সুস্মিতা পাশে না থাকায়, তিনি যে দিনে দিনে বুদ্ধিভ্রষ্ট হয়ে বাতিলের দলে চলে যাচ্ছেন তা বেশ বুঝতে পারছেন। কলকাতা ছাড়তেই নিরাপত্তার অভাব বোধ করছেন। অফিসের চেয়ার তাঁর দখলে থাকা সত্ত্বেও, ক্রমশই যেন সুস্মিতার মুঠোবন্দী হয়ে পড়ছেন।
সুস্মিতার কথাগুলো চূড়ান্ত বাস্তব, কাজেই অবহেলা করা অর্থহীন। প্রিয় মজুমদার ঘটনাপ্রবাহের গতিপথ সম্বন্ধে সম্পূর্ণ অবগত, কিন্তু সেই মুহূর্তে কিছুতেই মানতে পারছিলেন না। সুস্মিতা যখন তাঁর পক্ষে তখন তিনি তাকে ভালোবাসেন, কিন্তু যখন বিপক্ষে তখন ঘৃণা করেন। শত্রুশিবিরে দাঁড়িয়ে কঠিন কথাগুলো সহজ করে বলায়, ভীষণ ধাক্কা লেগেছিল প্রিয়বাবুর মনে।
আত্মবিশ্বাস যত কমে যায়, তত নিজেকে সব দিক থেকে কোণঠাসা বলে মনে হয়। ছাই চাপা আগুনের মতো মনের অতল গহ্বরে প্রতিশোধ স্পৃহা ফণা তোলার চেষ্টা করে। প্রতিহিংসার বিষ নিমেষে মিশে যায় রক্তে। পলে পলে বিষিয়ে দেয় মনকে। অবশ হয়ে পড়ে মস্তিষ্কের সক্রিয় কোষগুলো। স্বাভাবিকভাবেই ভোঁতা হয়ে যায় বিচার বুদ্ধির ক্ষমতা। প্রিয়বাবু এই বিষয়ে জ্ঞাত, কিন্তু মানুষ তো বিষের থলি নিজের শরীরে সযত্নে বহন করে সাপের মতো নিজেকে নির্বিষ রাখতে জানে না, তাতেই গন্ডগোলের সূত্রপাত হয়।
ইদানীং, সুস্মিতা যে অনেক ওপরের মহলে ঘোরাঘুরি করছেন, সে খবর প্রিয়বাবুর অজানা নয়। বিকাশকে সামনে সাজিয়ে রেখে তিনিই যে সুস্মিতার আসল টার্গেট তাও জানা। প্রিয়বাবুর প্ল্যান ছিল বিকাশের ঘাড়ে বন্দুক রেখে তিনি খেলবেন, কিন্তু সুস্মিতার গোপন ষড়যন্ত্রে সব ভেস্তে গিয়েছে। বিকাশকে ঢাল করে সুস্মিতাই লক্ষ্যভেদ করতে চলেছেন। প্রিয়বাবুর চাল বানচাল হয়ে গিয়েছে, তাও আবার সুস্মিতার পালটা চালে, কাজেই হজম করতে সময় তো লাগবেই।
YOU ARE READING
সাপলুডো
General FictionAmbitions and dreams vis-a-vis reality and corporate politics.