Chapter - 1 | Part - 3

56 4 0
                                    

বিকাশের মনে পড়ে গেল যে, বাড়ি থেকে আসার সময় মা-কে প্রণাম করতেই, চোখ ভরা জল নিয়ে তিনি বলেছিলেন, "খোকা সাবধানে থাকিস। কলকাতার ভিড়ে হারিয়ে যাস নে যেন!"

বিকাশের স্বগতোক্তি, 'মা তুমি ঠিক বলেছিলে--কলকাতা থেকে উজান বেয়ে ফেরা খুব সমস্যা। এখানে বিরাট জাল পাতা আছে, তার ওপর চলছে ট্রাপিজের খেলা। অসাবধান হওয়ার কোন অবকাশ নেই, জন্ম-মৃত্যুর মাঝে ফাঁক খুব কম, সেইজন্যই বোধহয় সদাব্যস্ততা।'

যাইহোক, বিকাশ আবার কাজে মন দিল। বিকেল পাঁচটায় সাহেবকে স্মরণ করাতে হবে। বিকাশের পাশের টেবিলে কাজ করেন আর এক সাংবাদিক, অরুণ ঘোষ, বহুদিন এই অফিসে আছেন। বড়ো সাহেবরা 'হাঁ' করলে বলে দিতে পারেন তাঁদের মনের ভাব, আগাম তিন-চারটে দান অব্যর্থ ধরতে পারেন। বিকাশ বেশ কয়েকবার তার প্রমাণও পেয়েছে হাতেনাতে। তিনি হঠাৎ প্রশ্ন করে বসলেন, "আজ সাহেবের সাথে কোথাও যাচ্ছেন নাকি?"

বিকাশ চট করে মিথ্যে কথা বলার অভ্যাস তখনও রপ্ত করতে পারেনি, তাই আমতা আমতা করে বলল, "স্যার তো তাই বলেছেন, দেখা যাক।"

"সাবধানে থাকবেন। নিজেকে নিয়ন্ত্রণে রাখবেন।"

বিকাশ অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল, "এরকম কেন বলছেন অরুণদা? তবে কি যাওয়া উচিত নয়?"

"শনির টান, না যেয়ে তো থাকতে পারবেন না। তাই বললাম, সাবধান। সজাগ থাকবেন।"

বিকাশের মন ভেঙে গেল। একটা প্রশ্ন মাথায় ঘুরছে, অরুণদা জানলেন কি করে তার যাবার কথা। এ অফিসে কি সবার পিছনে একজন করে লোক আছে। আড়ি পাতা, ফলো-করা, মানুষকে সব সময় সন্দেহের চোখে দেখা--এইসব কি কর্পোরেট কালচারের ভিতর পড়ে? বিকাশ তো এইসব হীন কাজকে গ্রাম্যতা বলে জানত, ঘৃণা করত। বছরখানেক হল কলকাতায় এসেছে, ক'টা মানুষকে যে প্রাণ খুলে হাসতে দেখেছে, তা হাতে গুনে বলা যায়। মানুষগুলোকে দেখলে মনে হয়--কে যেন আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে রেখেছে। সকালে দল বেঁধে যে যার গন্তব্যে যাচ্ছে, আর সন্ধ্যায় ফিরছে; কোন বিরাম বিশ্রাম নেই, কলের পুতুলের মতো কালের অন্তহীন চাকায় আবর্তিত হয়ে চলেছে। কোন সংশয় ছাড়াই বলা যায় যে, বিকাশও তার ভিতর একজন।

সাপলুডোOpowieści tętniące życiem. Odkryj je teraz