বিকাশ ব্যথিত হৃদয়ে অবাক দৃষ্টিতে সুস্মিতার মুখের দিকে তাকিয়ে ছিল। মনে মনে ভাবছিল, 'বলছে কি সুস্মিতাদি?'
ফোনের মাধ্যমে করতালির ধ্বনি ভেসে এল। বিকাশ ও সুস্মিতার বুঝতে অসুবিধা হল না যে, তাদের সমাদর করতে করতালি নয় বরং তাতে মিশে আছে ব্যাঙ্গ এবং বিদ্রূপ। একটু পরে প্রিয়বাবুর কণ্ঠস্বর, "সত্যি! নাটক করতে পার তুমি! বিকাশকে সামনে রেখে আমায় অপমান করতে চাইছ!"
অবশিষ্ট হুইস্কিটুকু গলায় ঢেলে সুস্মিতা শুরু করলেন, "নিজের মন দূষিত করে ফেলেছ বলে সবাইকে নিজের মতো কাপুরুষ, হীনমন্য মনে করো না। সাহস থাকে তো অস্বীকার করো। হাঁটু তো কাঁপছে, গুছিয়ে মিথ্যে বলতেও শিখলে না!"
প্রিয়বাবু লক্ষ্য করলেন--সত্যিই তাঁর হাঁটু দুটো কাঁপছে। সেই মুহূর্তে সোজা হয়ে উঠে দাঁড়াবার ক্ষমতা তাঁর ছিল না। সুস্মিতা কি তাঁকে দেখতে পাচ্ছে? নাকি পাপের শাস্তি? আর কেউ জানুক বা নাই জানুক তিনি তো জানেন, সুস্মিতার প্রত্যেকটা কথাই সত্যি।
যে টেবিল-চেয়ারে বসলেই সবসময় মনে জোর পেতেন, ভাবতেন বাবার আশীর্বাদ মাথার ওপর আছে, হাজার শব্দের রিপোর্ট অনায়াসে তৈরি করতে পারতেন--আজ এমন অসময়ে, যখন কুরুক্ষেত্রে তিনি একা তখনি চেয়ারের পায়াগুলো যেন ক্রমশই বসে যাচ্ছে।
প্রিয়বাবু এখন লিখতে বসেননি ঠিকই, কিন্তু শব্দের সন্ধান পাচ্ছেন না কেন? মুখে শব্দের যোগান বন্ধ হয়ে গেল কেন? মস্তিষ্ক কি একেবারে ফাঁকা হয়ে গেল? ঘড়ির কাঁটাগুলো তো অনায়াসে চক্রাকারে ঘুরে চলেছে, সেখানে তো কোনও অনিয়ম লক্ষ্য করছেন না। তার মানে কি? পারিপার্শ্বিকতা কি ইঙ্গিত করছে? বিশ্বসংসারে কেউ কারুর জন্য অপেক্ষা করে না। সময়ের ত্রাস প্রিয়বাবুকে গ্রাস করতে চলেছে বলে তাঁর দৃঢ় ধারনা। সব দিক দিয়ে তাঁর দেওয়ালে পিঠ, বড্ড নিঃসঙ্গ লাগছে, কিন্তু হেরে গেলে চলবে না। সুস্মিতার কাছে কিছুতেই নতি স্বীকার করবেন না বলে, তলানিতে পড়ে থাকা আত্মবিশ্বাসের সবটুকু একত্র করে চিৎকার করে উঠলেন, "হাজারবার অস্বীকার করব। তোমার মতো মহিলার সাথে আমার কোন সম্পর্ক থাকতে পারে না। ইউ আর অ্যা বীচ।"
YOU ARE READING
সাপলুডো
General FictionAmbitions and dreams vis-a-vis reality and corporate politics.