Chapter-12 | Part-1

28 2 0
                                    

ঘরে ঢুকে বিকাশ বেশ কিছুসময় সুস্মিতার বন্ধ চোখের দিকে তাকিয়েছিল। চোখের পাতা বন্ধ করে তিনি যেন জাগতিক সব বিষয় থেকে নিজেকে বিচ্ছিন্ন করে নিতে চান। বিকাশ জানত না--সুস্মিতা সেই মুহূর্তে তার নীরব উপস্থিতি উপলব্ধি করতে পারছিলেন কিনা? হয়তো ভিতরে ভিতরে জেগে আছেন—বাইরে প্রকাশ করতে চান না। কে জানে কোনটা সত্যি! সোফার এক দিকে কাত হয়ে নিজেকে সমর্পণ করেছেন জগতজননীর কোলে। বিকাশের মনে হল--তিনি ঘুমিয়ে পড়েছেন। তাঁকে বিরক্ত করতে ইচ্ছা হল না। ঘরে একটা ছোট আলো ছাড়া বাকী সব বন্ধ করে, অতি সন্তর্পণে সদর দরজা টেনে দিয়ে বিদায় নিলো।

কলকাতার রাস্তা শুনশান। গাড়ির হেড লাইট চোখে পড়ায় মাঝে মাঝে দু-একটা কুকুর ডেকে উঠছে, কিন্তু নিজের জায়গা ছেড়ে উঠছে না। কলকাতা শহরে ফুটপাথেও ভাড়া দিয়ে থাকতে হয়, কাজেই সবাই অধিকারবোধ সম্বন্ধে যথেষ্ট সচেতন। বেশীরভাগ বাড়ির আলো নিভে গিয়েছে। কেউ কেউ জেগে আছে রাত্রিকে ভালোবেসে! ভালোবাসার মানুষকে অনেকদিন পর পাশে পেয়ে হয়তো ভাবে বিহ্বল, আবার কারও চোখে ঘুম নেই ভবিষ্যতের ভাবনা ভেবে। পৃথিবীর নিয়মই তাই, কিছুই একতরফা নয়। আজ যে একান্ত আপন, যার মধুর স্পর্শ কল্পনা করে শরীর-মন নিমেষে শিহরিত হয়—কিছুদিনের ব্যবধানে সেই প্রবল আকর্ষণ বিকর্ষণে পরিণত হয়। সাত পাকের জটিল বাঁধন আলগা করতে দু-পক্ষই সচেষ্ট হয়ে ওঠে। সেই ফাঁস নিজেদের চেষ্টায় খুলতে বিফল হলে আদালতের দোরগোড়া পর্যন্ত পৌঁছুতে হয়। বিশ্বব্রহ্মাণ্ডে কিছুই স্থির নয়, কাজেই স্থির থাকার ভ্রান্ত চেষ্টা মানুষকে অস্থির করবে--সেটাই স্বাভাবিক।

আবারও মনে পড়ে গেল সুস্মিতাদির কথা। সত্যিই, কলকাতাকে এভাবে ভালোবাসতে আর কাউকে দেখেনি বিকাশ। কলকাতার সুবিধাভোগী সবাই, অথচ বদনামের ভাগীদার একা কলকাতা। কলকাতা কি জানে সুস্মিতাদি ভালো নেই? অদ্ভুত চরিত্র, সারা জীবন মানুষটা সবার চোখে ধুলো দিয়ে নাটক করে যাচ্ছে। প্রকৃত সুস্মিতা কে? কারও জানা নেই, এটাই সুস্মিতার রহস্য।

বাড়ি ফিরে শোবার ঘরে ঢুকতেই চেনা গন্ধে বিকাশের মন ভরে গেল। মনোনিবেশ করতেই বুঝতে পারল—দীপার ফারফিউমের সুবাস। দীপা শারীরিকভাবে কাছাকাছি নেই ঠিকই, কিন্তু তার অনুভূতিতে আছে। দীপার সাথে অতিবাহিত প্রত্যেক মুহূর্তের স্মৃতি সবসময় বয়ে বেড়াচ্ছে বিকাশ।

সাপলুডোDonde viven las historias. Descúbrelo ahora