Chapter-11 | Part-1

30 1 0
                                    

ঠিক সন্ধে সাতটায় বিকাশ হাজির সুস্মিতার ফ্ল্যাটে। বিকাশের অস্থিরতার কারণ সুস্মিতার জানা, কিন্তু সেই পথে না গিয়ে সম্পূর্ণ ভিন্ন প্রসঙ্গে কথা বলতে লাগলেন। বিকাশের উদ্বেগের মাত্রা পরীক্ষা করে দেখতে চাইছিলেন হয়তো। রবিবার সাধারণত কোন কাজ রাখেন না, বাইরেও যেতে চান না। সুস্মিতার ভাষায়, রবিবার কলকাতার সাথে ডেট, কাজেই দুই বন্ধুর মাঝে আর কারও স্থান নেই। মাঝে মাঝে হাঁটতে বেরুন, খালি পায়ে ঘাসের ওপর দিয়ে হাঁটেন, গঙ্গায় নৌকাবিহার করেন। কখনো গাড়ি করে কলকাতার এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ছুটে বেড়ান।

মানুষ কলকাতার রাস্তায় যানজটের ভয় পায়, সুস্মিতা ভিড়ে আনন্দ পান। তাঁর মনে হয় সারিবদ্ধ পিঁপড়ের মতো মন্থর গতিতে চলেছেন। মানুষের সাথে তফাৎ একটাই--পিঁপড়েরা অনেক সংযমী, সুশৃঙ্খল আচরণ করে, কিন্তু মানুষ নিজেকে অপ্রতিরোধ্য মনে করে চরম বিশৃঙ্খলতার শিকার। আবার কখনো বারান্দায় আরামকেদারায় বসে উদাসীন চোখে প্রকৃতির রূপ বদলের রহস্য উন্মোচনের উন্মাদনায় ডুব মারেন গভীরে। কলকাতার গন্ধ সুস্মিতার কাছে সিগারেটের গন্ধের মতোই প্রিয়। কলকাতার ছন্দ সুস্মিতার জীবনের ছন্দ। পলে পলে ছন্দপতনও তো একরকম ছন্দ।

বিকাশ অদ্ভুত নির্লিপ্ততা লক্ষ্য করছিল সুস্মিতার ভিতর যা তাঁর স্বভাববিরুদ্ধ বলেই তার বিশ্বাস। সুস্মিতাকে সবসময়েই উল্লসিত, আনন্দিত দেখেই অভ্যস্ত, তাই খটকা লাগছিল। তবে কলকাতায় মানুষ মনে যা ভাবছে তার ছবি যে মুখমণ্ডলে সবসময় প্রকাশ পায় না, তা উপলব্ধি করেছে বিকাশ অনেকবার অনেকক্ষেত্রে। তবুও ভালোবাসার মানুষকে বিমর্ষ দেখতে কারুরই ভালো লাগে না। সুস্মিতা যে আজ অস্বচ্ছন্দ তা পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে। আদর-আপ্যায়নে ত্রুটি নেই, সাবলীলভাবে কথাও বলছেন, কিন্তু বিকাশের কেবলই মনে হচ্ছে যে, কোথাও তাল কেটে যাচ্ছে। কারণ জিজ্ঞেস করলে জানে সুস্মিতাদি হেসে উড়িয়ে দেবে, তাই অপেক্ষাতেই রইল। সারাদিন তো অপেক্ষাতেই ছিল, কাজেই রাতও যদি অপেক্ষায় কাটে ক্ষতি কি? জীবন এক অর্থে অপেক্ষা ছাড়া আর কি? ঘটনার পর ঘটনার স্রোত বয়ে চলেছে--হয় তার সাক্ষী হয়ে থাকা, নয় অন্য কিছুর জন্য অপেক্ষা।

সাপলুডোWhere stories live. Discover now