বিকাশের সারা শরীর ঘামে ভিজে গিয়েছে। নদীতে উজান বেয়ে আসতে হলে নৌকার মাঝির যে হাল হয়, তার তখন সেই অবস্থা। দীপার পায়ের জুতো খোলার অনেক চেষ্টা করল, কিন্তু কিছুতেই পারল না। বিফল হয়ে এয়ার-কন চালিয়ে হালকা চাদর গায়ে দিয়ে দিল। দীপা সাথে সাথে চাদরটা জড়িয়ে আরাম করে পাশ ফিরল। আলো বন্ধ করে বসবার ঘরে এসে বসতেই শুনতে পেল দীপার ফোন বাজছে। বিকাশ নিশ্চিত যে, দীপার মা ফোন করছেন, কিন্তু কি করনীয়? মন বলছে, 'দীপার খবর অবশ্যই তাঁকে দেওয়া উচিত, না জানি কত চিন্তাই করছেন! না ঘুমিয়ে হয়তো সারারাত জেগে বসে আছেন।'
শব্দতরঙ্গ আরও প্রখর হল, কিন্তু কিছুতেই ফোনের হদিশ করতে পারছিল না বিকাশ। শব্দ অনুসরণ করে এগিয়ে যেতে অনুমান করল--শব্দের উৎস দীপার ব্যাগে বন্দী। ব্যাগ খোলা উচিত হবে কিনা ভাবতে ভাবতে ফোনের আওয়াজ থেমে গেল। বিকাশ হাঁপ ছেড়ে বাঁচল। কিন্তু না! আবার বাজছে, এবার দেরি না করে ব্যাগ খুলতেই ফোন পেয়ে গেল, হাতে তুলতেই দেখে 'মা।' বিকাশ হ্যালো বলার আগেই মিতাদেবীর উদ্বিগ্ন কণ্ঠস্বর ভেসে এল, "কি রে, কোথায় তুই?"
বিকাশ দীপান্বিতার নিষ্পাপ, ঘুমন্ত মুখের দিকে তাকিয়ে খুব নরম স্বরে উত্তর করল, "দীপা আসলে ঘুমিয়ে পড়েছে ..."
মাঝপথে বাধা দিয়ে মিতাদেবী বললেন, "ঠিক আছে, ঠিক আছে। সরি! তোমাদের বিরক্ত করলাম।"
"কি বলছেন বৌদি! দোষ তো আমাদের, আগেই খবর দেওয়া উচিত ছিল।"
মিতাদেবীর কথায় বিকাশের মনে হল—দুশ্চিন্তায় অধীর হয়ে গভীর রাতে মেয়ের খবর নিতে গিয়ে তিনি যেন বিরাট অন্যায় করে ফেলেছেন। এই হল মায়ের মন, সবসময় সন্তানকে আড়াল করার চেষ্টা। বিকাশ জানে মেয়েদের ব্যাগে হাত দেওয়া, গায়ে হাত দেওয়ার সামিল, কিন্তু অন্যথা কি-ই বা করনীয় ছিল? ব্যাগে ফোন রাখতে গিয়ে, মনে হল দীপা একবার নড়ে উঠল। বসবার ঘর থেকে ছিটকে আসা অল্প আলোয় বিকাশ অনেকক্ষণ দীপান্বিতার কোমল মুখের দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে ছিল। মনে মনে ভাবছিল, না জানি কি তথ্যের অনুসন্ধান করে চলেছে দীপার মন। মনের তো অবসর নেই, মুখের আদল দেখে মনের জটিল গতিপথের হদিশ পাবারও উপায় নেই। বিকাশ মনোবিজ্ঞানী নয়, কাজেই তার পক্ষে ঘুমিয়ে থাকা দীপার ঘুমন্ত চেহারা দেখে তার মনের ক্রিয়াকলাপ অনুমান করার চেষ্টা কল্পনার সামিল। যাইহোক, একটা পর্ব শেষ মনে করে বসবার ঘরে সোফায় বসে টিভি চালিয়ে শব্দ বন্ধ করে দিল, যাতে দীপার ঘুমের ব্যাঘাত না হয়।
ESTÁS LEYENDO
সাপলুডো
Ficción GeneralAmbitions and dreams vis-a-vis reality and corporate politics.