প্রিয়বাবুর বরাবরের অভ্যাস প্রতিদিনের কাজের তালিকা আগে থেকে তৈরি করে রাখা যাতে কোনভাবে বিশেষ কোনও বিষয় ভুলে না যান। ল্যাপটপে সেই তালিকায় চোখ রাখতেই দেখলেন যে, সেদিনের সবচেয়ে বড়ো ইভেন্ট—তাঁর একমাত্র মেয়ে দীপার জন্মদিন। ভারতীয় সময় ঠিক রাত বারোটায় অবশ্যই ফোনে উইশ করতে হবে। সুস্মিতাকে ঘিরে দীপার সাথে তাঁর সম্পর্ক একসময় খুব পিচ্ছিল পথে চলে গিয়েছিল। স্ত্রীর তদারকিতে এবং দু-পক্ষের যৌথ উদ্যোগে আবার কোনমতে জোড়াতালি দেওয়া গিয়েছে, কাজেই সেই বিষয়ে আর কোন আলস্য নয়।
দীপাকে ঘিরে কত ঘটনা মনের মধ্যে ভিড় করছে। প্রিয়বাবু খুব ভালো করেই জানেন যে, মেয়েকে আশ্রয় করেই স্ত্রীর সাথে আজও সম্পর্ক টিকে আছে নাহলে কি হতো কে বলতে পারে? মনে মনে ভাবছেন, 'মনের হাতের মোমের পুতুল আমরা। ইলেকট্রিকের তারের ভিতর দিয়ে সবার অলক্ষ্যে নিঃশব্দে যেমন বিদ্যুৎ প্রবাহিত হতে থাকে তেমনি আমরাও একটার পর একটা অদৃশ্য অবলম্বন আঁকড়ে ধরে সম্পর্কের দোহাই দিয়ে বেঁচে থাকি। সমাজ-সংসারে নিজেকে ভাসিয়ে রাখার চেষ্টা করি। সম্পর্কের জাল তৈরি করে নিজেরা ঝুলে থাকি।'
প্রিয়বাবুর জালে সুস্মিতা একটা চরিত্র হয়ে অনেকদিন থেকেই আটকে আছে, নূতন সংযোজন বিকাশ। একই বৃত্তে যে যার কক্ষপথে ঘুরে যাচ্ছে। সুস্মিতা নামটা মনে পড়লেই বীতশ্রদ্ধ লাগছে, কিন্তু ভুলতে পারছেন কই? একদিন যাকে স্ত্রীর আসনে বসাবেন বলে কথা দিয়েছিলেন, হৃদয়ের গভীরে সর্বদা সুরক্ষিত রাখার অঙ্গীকার করেছিলেন--এখন তার নামেই অরুচি। সুস্মিতার সাথে শারীরিক দূরত্ব আসলে তাকে মানসিকভাবে আরও কাছে নিয়ে এসেছে, সেটাই ভয় প্রিয়বাবুর। সুস্মিতার আকর্ষণ দুর্নিবার, কিছুতেই তা অস্বীকার করতে পারেন না।
মিতাদেবীর অনুশাসনে আর সামাজিক দায়দায়িত্বের দায়ভার আরোপ করে, কলকাতায় নিজেকে অফিস আর বাড়ির সীমানার মধ্যে স্বেচ্ছাবন্দী করে, নিজেকে শান্তিপ্রিয় মানুষের মৌন মিছিলে সামিল করে মনে মনে এক ধরনের সস্তা শান্তি অনুভব করতেন। কিন্তু পরিচিত ঠিকানার বেড়া টপকাতেই আকর্ষণ-বিকর্ষণের অবিরাম টানাটানিতে মাধ্যাকর্ষণের নিয়ম মেনেই মন আবারও সুস্মিতার কক্ষে ঢুকে পড়েছে।
YOU ARE READING
সাপলুডো
General FictionAmbitions and dreams vis-a-vis reality and corporate politics.