আবার ফোন বাজছে, পর্দায় ভেসে ওঠা নাম দেখেই মন ভালো হয়ে গেল বিকাশের। প্রিয়দার ফোন। অনেকদিন পর রবিবার ফোন করলেন। গতকাল থেকেই মানুষটার জন্য মন খুঁতখুঁত করছিল। 'হ্যালো' শব্দে অনুস্যূত উচ্ছ্বাসের উষ্ণ ছোঁয়া পৌঁছে দিতে সক্ষম হয়েছিল বিকাশ। তার আন্তরিকতায় প্রিয়বাবু সেই মুহূর্তে ভীষণ খুশী হয়েছিলেন। তিনিও খুব পছন্দ করেন বিকাশকে--শুধু জামাই করাই একমাত্র উদ্দেশ্য নয়, তাকেই উত্তরসূরি করতে চান। মানুষের অজান্তেই হৃদয়ের গভীরে ধারাবাহিকতার ধারা অনর্গল বইতে থাকে। মনের কার্যকলাপের সবটুকু তো আর আমাদের বোধগম্য হয় না, হয়তো অবচেতনে নিজের অস্তিত্বের অবর্তমানে নিজস্ব ধ্যানধারণাকে অন্যের মাধ্যমে প্রকাশ করার প্রবণতা মানুষকে শান্তি দেয়। মৃত্যুই শেষ কথা নয় তারপরও নিজের কৃতকর্মের ফল ফলতে থাকবে পৃথিবীতে, আর সেই ফলের ভিতর সযত্নে লুকানো থাকবে ভবিষ্যতের বীজ, যার সূত্র ধরে বেঁচে থাকার সাধ মানুষের চিরন্তন।
প্রিয়বাবু খোশমেজাজে হাসতে হাসতে বিকাশকে প্রশ্ন করলেন, "লেখাটা পড়লে?"
প্রিয়বাবু কোন প্রসঙ্গে কথা বলছেন তা বুঝতে দেরি হয়নি বিকাশের। সমালোচনার দায়ভার দূরে সরিয়ে রেখে জবাব দিল, "খুব ভালো, সব থেকে বড়ো কথা খুব প্রাসঙ্গিক হয়েছে।"
"ক্রেডিট গোজ টু ইউ। আমি তো মিতাকে বলছিলাম, তুমি কিভাবে আমাকে দিয়ে কাজটা করিয়ে নিলে। আই ফিল প্রাউড অফ ইউ।"
বিকাশ বিনয়ের সাথে বলল, "কি যে বলেন প্রিয়দা, আমার কোন ক্ষমতাই নেই।"
দু-চার কথার পরেই বিকাশ বর্ধমানের গ্রাম থেকে উদ্ধার হওয়া বিস্ফোরকের রোমহর্ষক কাহিনীর প্রসঙ্গ তুলে জিজ্ঞেস করল, "খবরটা দেখেছেন? আমি মনে করছি স্টোরিটা 'ফলো আপ' করব।"
রবিবার সকালের তরতাজা ফুরফুরে মেজাজে ব্যাঘাত ঘটতেই সুর পালটে প্রিয়বাবু উত্তরে বললেন, "তোমার মাথা থেকে সমাজ সংস্কারের ভূত কবে নামবে--সেটাই আমার প্রধান চিন্তা। পরিষ্কার করে একটা কথা নিজেকে বোঝাও যে তুমি সাংবাদিক, সমাজ-সংস্কারক নও--তার জন্য অন্য লোক আছে। সবার কাজের এক্তিয়ার ভাগ করা আছে। একে অন্যের জায়গায় হস্তক্ষেপ করতে গেলে সমস্যা বাড়ে, সুরাহা হয় না। মাথায় ঢুকল?"