Chapter-10 | Part-2

31 1 0
                                    


দীপার সহজ সরল মেজাজের সাথে সেই মুহূর্তের গুরুগম্ভীর কথাগুলো একেবারে বেমানান লাগছিল বিকাশের, অথচ চোরাবালির গোপন ফাঁদ থেকে প্রিয়বাবুকে উদ্ধার করার ক্ষমতা তার ছিল না। সময়ের চাপিয়ে দেওয়া সিদ্ধান্ত মেনে নিতেই হয়, সেই ভেবে সান্ত্বনা খোঁজার ব্যর্থ চেষ্টা করছিল। ফোনের দু-প্রান্তে দু'জনে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে সময়োচিত বিষয় না পেয়ে বিদায় জানাল। বিকাশ নিজের অজান্তেই অনেকক্ষণ ফোন হাতে নিয়ে বসেছিল। এই প্রথম দীপান্বিতার সাথে কথোপকথনের মাঝে কথা ফুরিয়ে গেল। কেন ফুরিয়ে গেল? সেই দার্শনিক প্রশ্নের সদর্থক উত্তর খুঁজতে ব্যস্ত, ত্রস্ত বিকাশের মন। দীপার মন জুড়ে তখন শুধু বাবা। বুকের মাঝখানে ফোন রেখে গভীর চিন্তনে ডুবে গেল।

আবার কিছুদিন এভাবে চলতে লাগল। ক্রমশ অস্বস্তি বাড়ছে, অফিসের পরিবেশ অনেক ঘোরালো হয়ে গিয়েছে। নিউজরুমে মিটিং হচ্ছে, অথচ প্রিয়বাবুর কাছে খবরই যাচ্ছে না। কাগজের দায়িত্ব বিকাশের ওপরই আস্তে আস্তে ন্যস্ত হচ্ছে। সুস্মিতার প্রভাব সম্পাদকীয়তে প্রত্যক্ষভাবে পড়তে শুরু করেছে। সরকারি বিজ্ঞাপন আসছে, এবং তার প্রধান কাণ্ডারি সুস্মিতা সেন। প্রিয়বাবুর ক্ষমতা এখন শুধু তাঁর চেম্বারের চার দেওয়ালের মধ্যেই সীমাবদ্ধ।

অহেতুক অপমানে জর্জরিত প্রিয়বাবু রাগে হতাশাগ্রস্ত হয়ে ফুঁসছেন, অথচ বিদ্রোহ করতে পারছেন না। পদমর্যাদার বিভ্রান্তিকর ফাঁসে তাঁর হাত-পা-বাঁধা। অফিসে নিজের চেয়ারে বসে বারবার হাতলে হাত বোলাচ্ছেন, আর মনে মনে অন্বেষণ করছেন--প্রকৃত দোষী কে? অন্যায় কে করেছে—তিনি? না তাঁর বসবার চেয়ারটা? প্রিয়বাবুর দৃঢ় বিশ্বাস যে, তিনি কখনো সজ্ঞানে চেয়ারের অপমান করেননি, হয়তো চেয়ারের চরিত্রই এইরকম--কাউকে বেশী দিন পছন্দ হয় না। মনে পড়ছে, ঠিক এই কায়দায় আগের সম্পাদককে তাড়ানো হয়েছিল। পালা-বদলের পালায়, এবার তাঁর পালা।

সুদর্শন তরফদার, প্রাক্তন সম্পাদক, পদত্যাগপত্র মালিকপক্ষের হাতে সঁপে দিয়ে প্রিয়বাবুকে সাবধান করে বলে গিয়েছিলেন, "মালিকদের ভালো করে চিনে রাখো, তোমার বেলায় যেন এমন না হয়।"

সাপলুডোOù les histoires vivent. Découvrez maintenant